Bihar’s Vishnupad and Mahabodhi temples: গয়ার বিষ্ণুপদ মন্দির এবং বোধগয়ার মহাবোধি মন্দির, বিহারের সাংস্কৃতিক কেন্দ্রগুলোর অন্যতম। বিহারের জাতীয় রাজনীতিতেও এই মন্দিরের বিরাট তাৎপর্য রয়েছে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পরে এই তাৎপর্য অনেকখানি বাড়ল। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন মঙ্গলবার (২৩ জুলাই), তাঁর কেন্দ্রীয় বাজেট বক্তৃতার সময় ঘোষণা করেছেন যে গয়াতে বিষ্ণুপদ মন্দির এবং বিহারের বোধগয়ার মহাবোধি মন্দিরের জন্য করিডোর প্রকল্প তৈরি করা হবে। তিনি তাঁর বক্তৃতার অংশ হিসেবে বলেছেন, এগুলোকে 'কাশী বিশ্বনাথ মন্দির করিডোরের আদলে তৈরি করা হবে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের তীর্থযাত্রী এবং পর্যটকদের গন্তব্যস্থল হিসেবে রূপান্তরিত করা হবে মন্দিরগুলোকে।' দুটি মন্দির একে অপরের থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
গয়ার বিষ্ণুপদ মন্দির
গয়ার বিষ্ণুপদ মন্দির একটি হিন্দু মন্দির। এই মন্দিরটি ভগবান বিষ্ণুকে উত্সর্গ করা হয়েছে। বিহার ট্যুরিজমের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট অনুসারে, গয়াসুর নামে এক রাক্ষস বা অসুর দেবতাদের কাছে মোক্ষলাভের বর চেয়েছিলেন। এই বর অনুযায়ী, তিনি পুনর্জন্মের চক্র থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন। কিন্তু, অচিরে এই ক্ষমতার অপব্যবহার করেন গয়াসুর। বাধ্য হয়ে হস্তক্ষেপ করেন ভগবান বিষ্ণু। তিনি তাঁর ডান পা গয়াসুরের মাথার ওপর রেখেছিলেন। তাতে, ভূগর্ভস্থ পাতাল লোকে চলে যান গয়াসুর। এই মন্দিরে সেই কাহিনি অনুসারে একটি ৪০ সেন্টিমিটার লম্বা পায়ের ছাপ দেখা যায়। যা, ভগবান বিষ্ণুর পায়ের ছাপ বলে মনে করা হয়। ভক্তরা পিতৃপক্ষের সময় এই মন্দিরে যান। এই মন্দিরে দাঁড়িয়ে তাঁদের পূর্বপুরুষদের স্মরণ করেন। নানা আচার-অনুষ্ঠানে অংশ নেন। স্থাপত্যগতভাবে, মন্দিরটি প্রায় ১০০ ফুট লম্বা। এতে ৪৪টি স্তম্ভ রয়েছে। এটি ফাল্গু নদীর তীরে অবস্থিত। মহারাষ্ট্রের আহমেদনগরের রানি অহল্যাবাই হোলকারের নির্দেশে ১৭৮৭ সালে মন্দিরটি নির্মিত হয়েছিল।
বোধগয়ার মহাবোধি মন্দির
বোধগয়ার মহাবোধি মন্দির কমপ্লেক্স একটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট। মন্দিরটি মহাবোধি গাছের পূর্বদিকে রয়েছে। কথিত আছে, এই গাছের নীচেই ভগবান গৌতম বুদ্ধ নির্বাণ লাভ করেছিলেন। মন্দিরটির আকৃতি অনন্য। এটি প্রায় ১৭০ ফুট লম্বা। ইউনেস্কোর সাইটে বলা হয়েছে, 'মহাবোধি মন্দির ভবন খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে সম্রাট অশোকের নির্মিত প্রথম মন্দির। আর, বর্তমান মন্দিরটি ৫ম-৬ষ্ঠ শতাব্দীর। এটি প্রাচীন বৌদ্ধ মন্দিরগুলোর মধ্যে একটি। যা সম্পূর্ণরূপে ইট দিয়ে তৈরি। গুপ্ত যুগের শেষের দিক থেকে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে ইটের স্থাপত্য উল্লেখযোগ্যভাবে বিকাশ লাভ করেছিল।' ইউনেস্কোর সাইটে আরও বলা আছে, 'এই তীর্থস্থানে দেশ-বিদেশ থেকে পর্যটকরা পরিদর্শন করতে আসেন। সেই জন্য এখানে পরিকাঠামো এবং জনসাধারণের সুযোগ-সুবিধা বিকাশের প্রয়োজন। তবে, বিকাশের প্রস্তাবগুলোকে হেরিটেজ ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্টের পরে বাস্তবায়িত করতে হবে। একটি বিশেষ চ্যালেঞ্জ হল, নগরায়ন-সহ সমগ্র এলাকার সম্ভাব্য উন্নয়ন এই স্থানের ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক তাত্পর্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। তা ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন।'
আরও পড়ুন- কেন্দ্রীয় বাজেটে কর্মসংস্থানে জোর! নতুন কর্মীদের জন্য নয়া প্রকল্প নির্মলার
বাজেটে বিহার-অন্ধ্রপ্রদেশকে গুরুত্ব
চলতি বছরের বাজেটে, বিহারের পর্যটন এবং পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে বিশেষ নজর দেওয়া হয়েছে। জাতীয় রাজনীতিতে বিহার রাজ্যটির বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। বিশেষ করে ২০২৪ সালের সাধারণ (লোকসভা) নির্বাচনের পরে, সেখানে নীতীশ কুমারের নেতৃত্বাধীন জনতা দল (ইউনাইটেড) ১২টি আসনে জিতেছে। কেন্দ্রে শাসক জোট এনডিএর ২৯৩ জন সাংসদ আছে। বিজেপি ২৪০টি আসন নিয়ে বৃহত্তম দলের স্বীকৃতি পেয়েছে। কিন্তু, সেই সংখ্যা নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা বা ২৭২ আসনে পৌঁছয়নি। তাই কেন্দ্রে সরকার চালাতে বিজেপি ছোট জোটশরিক, যেমন বিহারের জেডি(ইউ) এবং অন্ধ্রপ্রদেশের তেলেগু দেশম পার্টি (টিডিপি)-র ওপর নির্ভরশীল। টিডিপি গত লোকসভা নির্বাচনে ১৬টি আসন পেয়েছে। আর, তাই বাজেটে অন্ধ্রপ্রদেশের জন্যও ঘোষণা করা হয়েছে। এর নতুন রাজধানী অমরাবতীর জন্য ১৫,০০০ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। এছাড়াও নানা ঘোষণা করা হয়েছে অন্ধ্রপ্রদেশের অগ্রগতির জন্য।