/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2019/02/farmer-1-1.jpg)
শুক্রবারের অন্তর্বর্তী বাজেটে কেন্দ্রের তরফ থেকে কৃষকদের বার্ষিক ৬,০০০ টাকার নগদ অনুদানের তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেছে সারা ভারত কিসান সভা (এআইকেএস)। সভার বক্তব্য, এই অনুদান স্রেফ কৃষকদের ন্যায্য মূল্যের এবং ঋণ মকুবের দাবী এড়িয়ে যাওয়ার অজুহাত।
এআইকেএস-এর সর্বভারতীয় সভাপতি অশোক ধাওয়ালে বলেন, "মাসে ৫০০ টাকা, বা দৈনিক ১৫ টাকা, এই অনুদান ভারতের কৃষকদের সঙ্গে চূড়ান্ত বিশ্বাসঘাতকতার পরিচয়। দিনে ১৫ টাকায় তো এক কাপ চা হয়। আরও খারাপ ব্যাপার হলো, এসব করে গত দুই বছর ধরে কৃষকরা যে বিষয়ে আন্দোলন করছেন - সম্পূর্ণ ঋণ মকুব এবং ফসল উৎপাদনের খরচের দেড় গুণ পারিশ্রমিক - সেই বিষয়গুলো এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা। এই দুটি বিষয়েই ২০১৪ সালে প্রতিশ্রুতি দেয় মোদী সরকার, কিন্তু পাঁচ বছরেও সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা হয় নি। এখন তো নির্বাচনের আগে আরেকটা জুমলা খাড়া করা হয়েছে। কিন্তু কৃষক সম্প্রদায় এই ফাঁদে পা দেবেন না। উল্টে এই অপমান ও বিশ্বাসঘাতকতার ফলে অত্যন্ত রেগে যাবেন। লড়াই চলবে।"
দিল্লিতে গত দু'বছর ধরে কৃষকদের দাবী দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করে চলেছে স্বরাজ ইন্ডিয়া পার্টি। দলের সভাপতি যোগেন্দ্র যাদবের মতে, বাজেটে দেশের কৃষকদের সবচেয়ে জরুরি সমস্যাগুলোর সমাধানের কোনো চেষ্টাই নেই, না আছে কৃষিক্ষেত্রের বৃহত্তর সংকটের কোনো স্বীকৃতি।
যাদবের আরও বক্তব্য, কেন্দ্রীয় বাজেটে যে আর্থিক সহায়তার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে, তা লোকসভা নির্বাচনের আগে কৃষকদের ভোট কেনার মরিয়া প্রচেষ্টা মাত্র।
এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে স্বরাজ ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বাজেটে করা ঘোষণাটির একাধিক দুর্বলতা রয়েছে, কারণ পাঁচ একরের বেশি জমির মালিক যে সব কৃষক, তাঁরা এই অনুদানের আওতায় আসছেন না, বৃষ্টিপ্ৰধান এলাকা হলেও। ভূমিহীন কৃষিজীবী, ইজারাদার, এবং এমন লক্ষ লক্ষ কৃষক যাঁদের কাছে জমির পাট্টা নেই, তাঁরাও এই সুবিধা পাচ্ছেন না।
আরও পড়ুন: টুকলি করা বাজেট, এক্সপায়ারি ডেট পেরিয়ে গিয়েছে: মমতা
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়েছে যে যেসব কৃষকদের কাছে জমির মালিকানার নথিপত্র নেই, তাঁদের মধ্যে তফসিলি বা আদিবাসী সম্প্রদায়ের কৃষকরাও রয়েছেন। "কৃষকদের যেহেতু কোনো ডেটাবেস নেই, এত কম সময়ের মধ্যে কী করে এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হবে তাও স্পষ্ট নয়," বলছে স্বরাজ ইন্ডিয়ার বিজ্ঞপ্তি।
এআইকেএস-এর মহারাষ্ট্র শাখার সাধারণ সম্পাদক অজিত নাওয়ালে পাঁচ একরের কম আয়তনের জমির মালিকদের মাসিক ৫০০ টাকা ভাতা দেওয়ার সরকারি সিদ্ধান্তকে "নিষ্ঠুর পরিহাস" বলে বর্ণনা করেছেন। "পাঁচ একরের কম জমি থাকলে মাসে ৫০০ টাকা দেওয়ার কেন্দ্রীয় সরকারের ঘোষণা একটি নিষ্ঠুর পরিহাস। পাঁচ একরের শর্ত আরোপ করার ফলে বহু কৃষক এই সুবিধা পাবেন না," বলেন তিনি।
নাওয়ালে এও বলেন, ঋণ মকুব ছাড়াও কৃষকরা আশা করছিলেন কৃষি উৎপাদনের ন্যূনতম মূল্য নির্ধারণে সাহায্য, সেচের জন্য অর্থ বরাদ্দ, এবং খরার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষয়ক্ষতির ফলে আর্থিক সহায়তার আশ্বাস। "মনে হয়েছিল যে সাম্প্রতিক কয়েকটি রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির হারের পর সরকার এই সমস্ত ক্ষেত্রে কিছু দৃঢ় পদক্ষেপ নেবে। দুঃখের বিষয়, তা ঘটে নি, কাজেই কৃষকরা ফের হতাশ হয়েছেন," বলেন নাওয়ালে।
অন্যদিকে, অর্থনীতিবিদ এবং মহারাষ্ট্র প্ল্যানিং কমিশনের প্রাক্তন সদস্য এইচ এম দেসারদা ৬,০০০ টাকার বার্ষিক অনুদানকে 'ক্যানসারের ওপর ব্যান্ড-এড' বলে বর্ণনা করেছেন। তাঁর কথায়, "এটা এতটাই তুচ্ছ এবং স্পষ্টতই জনমুখী, যে এর কোনো মূল্যই নেই। মাসে ৫০০ টাকা বর্তমান অবস্থায় কোনো অর্থপূর্ণ সাহায্য হিসেবে গণ্য হতে পারে না। একটি পরিবার ওই টাকায় এক দিনও চালাতে পারবে না। এটি নিছকই ভোটের আগে লোক দেখানো চমক।"