করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে কাবু ভারত। একাধিক রাজ্যে মে মাসেই লাগু হয়েছে লকডাউন। যা অর্থনীতির উপর সাংঘাতিক আঘাত আনবে বলেই মনে করা হচ্ছিল। কিন্তু, মে মাসে জিএসটি আদায়ের পরিসংখ্যান অনুসারে বলা যায়, যতটা আশঙ্কা করা হচ্ছিল সেই তুলনায় বাস্তব পরিস্থিতি ভিন্ন। এপ্রিলের তুলনায় কম হলেও চলতি বছর মে মাসেও জিএসটি সংগ্রহ হয়েছে ১ লক্ষ কোটির বেশি। ভারতীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রে যা বেশ আশাব্যঞ্জক বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। তবে, ভিন্ন মতও রয়েছে। অর্থনীতিবিদদের একাংশের মতে, লকডাউনের ধাক্কা ভারতীয় অর্থনীতির উপর কতটা প্রভাব ফেলছে তা নির্ণয়ের জন্য আগামী কয়েক মাসের জিএসটি আদায়ের পরিসংখ্যানের উপর নজর রাখা প্রয়োজন।
অর্থমন্ত্রকের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুসারে, চলতি বছর মে মাসে জিএসটি আদায় হয়েছে ১,০২ লক্ষ কোটি। এপ্রিলে এই সংখ্যা ছিল ১,৪১,৩১৪ লক্ষ কোটি। মহামারীকালে যা রেকর্ড। এপ্রিলের তুলনায় মে মাসে জিএসটি আদায় হয়েছে ২৭ শতাংশ কম। কিন্তু, করোনা আবহে বিভিন্ন রাজ্যে লকডাউনের মধ্যেও জিএসটি আদায় লক্ষে কোটির বেশি সংগ্রহ হওয়াকে কিছুটা হলেও স্বস্তির ইঙ্গিত বলে মনে করছে কেন্দ্র।
এই নিয়ে টানা আট মাস জিএসটি আদায় লক্ষ কোটি অতিক্রম করল। ডেলয়েট ইন্ডিয়ার সিনিয়ার ডিরেক্টার এন এস মানির কথায়, 'জিএসটি আদায়ের হারই ইঙ্গিত করছে যে লকডাউনের প্রভাব যে হারে অর্থনীতির উপর পড়বে বলে মনে করা হয়েছিল তার তুলনায় অনেক কম পড়েছে। তবে আগামী মাসের জিএসটি সংগ্রহের তুল্যমূল্য বিতার করেই লকডাউনের প্রভাব সম্পর্কে আরও বিস্তারিত বলা সম্ভব।'
করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে গত বছর মার্চ থেকে দেশজুড়ে কঠোর লকডাউন লাগু হয়েছিল। বন্ধ হয়েছিল অর্থনৈতিক কার্যক্রম। যার প্রভাব পড়েছিল জিএসটি সংগ্রহে। গত বছরের এপ্রিলে জিএসটি সংগ্রহ নেমে দাঁড়ায় ৩২,১৭২ কোটি টাকায়। যা পর্যন্ত সবচেয়ে কম। লকডাউন শিথিল হওয়ার পর অবশ্য অর্থনীতির চাকা ঘোরে। কল-কারখানা সহ অর্থনৈতিক কার্যক্রম চালু হতেই ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে জিএসটি সংগ্রহ। ২০২০ সালের মে মাসে জিএসটি সংগ্রহের পরিমাণ বেড়ে হয়েছিল ৬২.০০৯ কোটি। তবে, জিএসটি আদায় ১ লক্ষ কোটি ছাড়াতে তারপর সময় লেগে যায় ৬ মাস। গত বছর অক্টোবরে জিএসটি আদায়ের হার ছিল ১.০৫ লক্ষ কোটি।
প্রেস বিবৃতিতে শনিবার অর্থমন্ত্রকের তরফে বলা হয়েছে যে, 'একাধিক রাজ্যে লকডাউন সত্ত্বেও টানা আট মাস জিএসটি আদায় লক্ষ কোটি টাকার গণ্ডি ছাড়াল।' কেন্দ্র মনে করছে, ছোট করদাতারা জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে জিএসটি আদায় সম্পূর্ণ করলে মে মাসে সংগৃহীত অর্থের সম্পূর্ণ তথ্য মিলবে।
অর্থমন্ত্রক জানাচ্ছে, ৫ কোটি টাকার বেশি আয় করা সংস্থাগুলিকে ৪ জুন পর্যন্ত রিটার্ন জমার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু, ওই অঙ্কের কম আয়ের ছোট করদাতাদের ক্ষেত্রে সেই সময়সীমা জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত রয়েছে। ফলে মে মাসের পুরো হিসেব পেতে এখনও সময় লাগবে। মনে করা হচ্ছে, ছোট করদাতাদের জমা রিটার্ন ধরলে মে মাসে জিএসটি আরও বেশ কিছুটা বাড়বে।
শনিবার অর্থ মন্ত্রকের পরিসংখ্যান অনুসারে, মে মাসে কেন্দ্রীয় জিএসটি আদায় হয়েছে ১৭,৫৯২ কোটি টাকা, রাজ্য জিএসটি ২২,৬৫৩ কোটি, সম্মিলিত জিএসটি আদায়ের পরিমাণ ৫৩,১৯৯ কোটি টাকা। আর সেস বাবদ সংগ্রহ হয়েছে ৯,২৬৫ কোটি টাকা। সব মিলিয়ে কর আদায়ের হিসাব গত বছরের মে মাসের তুলনায় অনেকটাই বেশি।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন