Advertisment

বাজারে মন্দা, ১০ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের মুখে বিস্কুট নির্মাতা পার্লে

মুম্বইয়ে সংস্থার সদর দফতর থেকে দেওয়া এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে পার্লের ক্যাটেগরি হেড ময়াঙ্ক শাহ জানিয়েছেন, পার্লের বিস্কুট বিক্রি দ্রুতগতিতে কমে যাওয়ায় উৎপাদন কমাতে হতে পারে ব্যাপক হারে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
parle g 10000 workers

২০০৩ সালে বলা হতো, দুনিয়ার সর্বাধিক বিক্রিত বিস্কুট ব্র্যান্ড পার্লে-জি

ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় বিস্কুট নির্মাতা পার্লে প্রোডাক্টস প্রাইভেট লিমিটেডের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, দেশের বর্তমান আর্থিক মন্দা এবং গ্রামাঞ্চলে পড়তে থাকা চাহিদার জেরে ১০ হাজার পর্যন্ত কর্মী ছাঁটাই করার কথা ভাবছে সংস্থা।

Advertisment

খাতায় কলমে ভারত এখনও এশিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি, কিন্তু বাজারের অবস্থা ক্রমশ নিম্নগামী, যার প্রভাব পড়েছে গাড়ি বিক্রি থেকে শুরু করে বস্ত্রশিল্পের ওপর। উৎপাদন কমিয়ে দিচ্ছে একের পর এক সংস্থা। আপাতত আশা একটাই - সরকারি হস্তক্ষেপের, যাতে আর্থিক টনিকের সাহায্যে ফের বৃদ্ধির পথে ফিরতে পারে দেশের অর্থনীতি।

মুম্বইয়ে সংস্থার সদর দফতর থেকে দেওয়া এক টেলিফোন সাক্ষাৎকারে পার্লের ক্যাটেগরি হেড ময়াঙ্ক শাহ সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, পার্লের বিস্কুট বিক্রি দ্রুতগতিতে কমে যাওয়ায় উৎপাদন কমাতে হতে পারে ব্যাপক হারে, যার ফলে ছাঁটাই করতে হতে পারে ৮ থেকে ১০ হাজার কর্মীকে। "অবস্থা এতটাই খারাপ যে যদি এই মুহূর্তে সরকার হস্তক্ষেপ না করে... তাহলে আমরা বাধ্য হব এসব পদ তুলে নিতে," বলেছেন শাহ।

আরও পড়ুন: ডেবিট কার্ড বাতিলের পথে এসবিআই, আপামর ভারতবাসীর কপালে ভাঁজ

১৯২৯ সালে স্থাপিত পার্লে সংস্থায় কর্মরত রয়েছেন আন্দাজ এক লক্ষ স্থায়ী এবং অস্থায়ী কর্মী, যাঁরা ছড়িয়ে রয়েছেন সংস্থার মালিকানাধীন ১০ টি কারখানা এবং কন্ট্র্যাক্টের ভিত্তিতে নিয়োজিত আরও ১২৫ টি কারখানায়।

শাহ আরও জানিয়েছেন, ২০১৭ সালে সারা দেশে জিএসটি লাগু হওয়ার পর থেকেই কমতে থাকে সংস্থার জনপ্রিয় বিস্কুট ব্র্যান্ডের চাহিদা, উদাহরণ স্বরূপ পার্লে-জি। এর প্রধান কারণ, পাঁচ টাকার বিস্কুটের প্যাকেটের ওপরেও বসানো হয় ঊর্ধ্বতর শুল্ক। এই শুল্কের কারণে প্যাকেট পিছু কমিয়ে দিতে হয়েছে বিস্কুটের পরিমাণ, যার ফলে চাহিদা কমেছে নিম্ন আয়ের গ্রাহকদের মধ্যে, যাঁরা প্রধানত গ্রামাঞ্চলের বাসিন্দা। এখান থেকেই আসত পার্লের লাভের অর্ধেকের বেশি, যেহেতু এখনও গ্রামেই বাস করেন দুই-তৃতীয়াংশ ভারতবাসী। "এই শ্রেণীর গ্রাহকেরা দাম সম্পর্কে অত্যন্ত সচেতন, এবং কত দাম দিয়ে কটা বিস্কুট পাচ্ছেন, সে সম্বন্ধেও।"

পার্লের বার্ষিক আয় ১.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারেরও বেশি, ভারতীয় হিসেবে যা দাঁড়ায় আন্দাজ ১০ হাজার কোটি টাকায়। গত এক বছরে করের হার পুনর্বিবেচনা করার আবেদন জানিয়ে সরকারের জিএসটি কাউন্সিল এবং প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করেন সংস্থার প্রতিনিধিরা, বলেন শাহ।

আরও পড়ুন: দ্রুত পড়ছে দেশে গাড়ি বিক্রির হার, সরকারি সাহায্যের জন্য মরিয়া ইন্ডাস্ট্রি

একদা পার্লে গ্লুকো নামে পরিচিত সংস্থার অন্যতম জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের নাম পাল্টে করা হয় পার্লে-জি, এবং ১৯৮০ ও ৯০-এর দশকে ভারতের ঘরে ঘরে পৌঁছে যায় এই নাম। ২০০৩ সালে মনে করা হতো, বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত বিস্কুট ব্র্যান্ড পার্লে-জি।

ভারতের অর্থনৈতিক মন্দার জেরে ইতিমধ্যেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গাড়ি উৎপাদন ক্ষেত্রে খোয়া গেছে কয়েক হাজার চাকরি, এবং ওই মন্দার ফলেই কমছে অন্যান্য ক্ষেত্রে চাহিদাও, বলেন শাহ। গতমাসে বাজার সমীক্ষা সংস্থা নিয়েলসেন জানায়, গ্রামাঞ্চলে টাকা খরচ করার প্রবণতা কমতে থাকায় ভারতে ভোগ্যপণ্য শিল্পে তার প্রভাব পড়ছে। বিশেষ করে ছোট ব্যবসায়ীরা মন্দীভূত অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ছেন।

উল্লেখ্য, কমতে থাকা চাহিদা নিয়ে সরব হয়েছে আরও বেশ কিছু খাদ্যপণ্য প্রস্তুতকারক সংস্থা। চলতি মাসের গোড়ার দিকে পার্লের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ব্রিটানিয়া ইন্ডাস্ট্রিজের ম্যানেজিং ডিরেক্টর বরুণ বেরী কিছু বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথোপকথন চলাকালীন জানান, গ্রাহকরা এখন পাঁচ টাকা দামের পণ্য কেনার আগেও "দুবার ভাবছেন"। বেরী বলেছিলেন, "বোঝাই যাচ্ছে যে অর্থনীতিতে কিছু গুরুতর সমস্যা রয়েছে।" আজ, বুধবার সকালে ১.৫ শতাংশ কমেছে ব্রিটানিয়ার শেয়ারের দাম, এবং তার আগে দাম পড়েছিল প্রায় ৩.৯ শতাংশ।

Government Jobs
Advertisment