বিধানসভায় রাজ্য বাজেট পেশ করা শুরু করলেন অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। এটি দ্বিতীয় তৃণমূল সরকারের শেষ পূর্ণাঙ্গ বাজেট। এই বাজেটের মাধ্যমে 'একুশ' জয়ে মমতা সরকারের চূড়ান্ত রোড ম্যাপ স্পষ্ট হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।
বাজেট প্রস্তাব পেশের প্রথমেই রাজ্যের অর্থমন্ত্রী জানালেন তৃণমূল সরকারের জমানায় রাজ্যের শিল্পের বৃদ্ধির পরিমাণ ৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে সারা দেশে শিল্প বৃদ্ধির হার ০.৬ শতাংশ। জানালেন অসংগঠিত শ্রমিক পরিবারের জন্য সামাজিক সুরক্ষার ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার।
বাজেট প্রস্তাব পেশের পর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, "কেন্দ্র আমাদের বঞ্চিত করা সত্ত্বেও ২০১১ এর পর থেকে আমরা জনমুখী বাজেট পেশ করারই চেষ্টা করেছি"।
ছবি- পার্থ পাল
কী কী প্রস্তাব দেওয়া হল বাজেটে?
আগামী ২ বছরে বাংলায় নতুন তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় তৈরির আশ্বাস। সেই উদ্দেশ্যে বরাদ্দ ৫০ কোটি টাকা।
পুরোনো মামলার নিষ্পত্তির জন্য ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের প্রস্তাব। ৯০ দিনের মধ্যে মামলার নিষ্পত্তি করতে হবে।
সামাজিক সুরক্ষায় নতুন প্রকল্পের ঘোষণা
বকেয়া কর আদায়ে নতুন ব্যবস্থার পরিকল্পনা
তফশিলি উপজাতি উন্নয়নে বরাদ্দ ৯৩৫ কোটি টাকা।
অসংগঠিত শ্রমিকের দেড় কোটি পরিবারকে সামাজিক সুরক্ষা দেওয়ার প্রকল্প
ধুকতে থাকা চা বাগানের শ্রমিকদের কৃষিঋণ ১০০ শতাংশ মকুব
চা বাগানের গৃহহীন শ্রমিকদের গৃহ নির্মাণের জন্য 'চা সুন্দরী' নামে প্রকল্প ঘোষণা
সিভিল সার্ভিসের জন্য রাজ্য সরকারের তরফে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় বাংলার পডুয়াদের উৎসাহ প্রদানের লক্ষ্যে কলকাতা, শিলিগুড়ি ও দুর্গাপুরে 'মহাত্মা গান্ধী, জয় হিন্দ ও আজাদ' নামে ৩টি সিভিল সার্ভিস অ্যাকাডেমি তৈরি করা হবে।
কর্ম সংস্থানের জন্য বেকারদের জন্য 'কর্মসাথী' প্রকল্পের প্রস্তাব
'জয়জহর' প্রকল্পে তফশিলি জাতির অন্তর্ভুক্ত প্রবীণ নাগরিকদের জন্য রাজ্যে ১ হাজার টাকা মাসিক বার্ধক্য ভাতার প্রস্তাব
২২,২৬৭ কোটি টাকার বিদেশি বিনিয়োগের প্রস্তাব
ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য 'বঙ্গশ্রী' প্রকল্পে বরাদ্দ ১০০ কোটি
'হাসির আলো' প্রকল্প- গরিব মানুষদের জন্য ৭৫ ইউনিট 'বিদ্যুৎ' বিনামূল্যে দেওয়ার প্রকল্পে বরাদ্দ ২০০ কোটি টাকা।
২ লক্ষ ৫৫ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পেশ
বাজেট প্রসঙ্গে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরের করা টুইট নিয়ে ফের মুখ্যমন্ত্রী-রাজ্যপাল সংঘাতের জল্পনা তুঙ্গে।
আরও পড়ুন: মোদী সরকারের বাজেটে ‘স্তম্ভিত’ মমতা
রাজ্য বাজেটের বক্তৃতার শুরুতেই মোদী সরকারের 'মেক ইন ইন্ডিয়া' প্রকল্পকে 'গাল ভরা স্লোগান' বলে আক্রমণ করেন। উল্টোদিকে ক্ষুদ্রশিল্পে, নির্মাণ শিল্পে পশ্চিমবঙ্গের স্থান প্রথম, এই উল্লেখ করতে শোনা গেল মন্ত্রী অমিত মিত্রকে। রাজ্যের জিডিপি বৃদ্ধির হার ১০.৪৫ শতাংশে পৌঁছেছে বলে জানান তিনি।
বাংলায় বেকারত্বের হার ৪০ শতাংশ কমানো গিয়েছে বলে দাবি করলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী।
সীমিত আর্থিক ক্ষমতার মধ্যেই এবারও চেষ্টা হবে উন্নয়ন খাতে যতটা সম্ভব বরাদ্দ বাড়ানো। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক প্রকল্পে বরাদ্দ বৃদ্ধির চেষ্টা হবে। সাধারণ মানুষের হাতে নগদ পৌঁছলে ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি পাবে, বাজারে লেনদেন বাড়বে। সেই দিশাতেই এবারের রাজ্য বাজেট হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: বাজেট বাজে না ভাল? কী বলছেন জনতা জনার্দন?
৩১ জানুয়ারি পেশ হয় দ্বিতীয় মোদী সরকারের প্রথম পূর্ণাঙ্গ বাজেট। যার সমালোচনা করেছিলেন রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র। সেদিন রাজ্যের সাফল্য তুলে ধরেছিলেন তিনি। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল, কৃষি উৎপাদন ৯ শতাংশ বৃদ্ধি। সামাজিক ক্ষেত্রেও বৃদ্ধি সাড়ে চার গুণ বেড়েছে বলে দাবি করেন অর্থমন্ত্রী। কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান অনুশারে একশো দিনের কাজ প্রকল্পেও দেশের মধ্যে প্রথম স্থান দখল করেছে বাংলা। তবে, বহু ক্ষেত্রে রাজ্যকে ন্যায্য পাওনা থেকে মোদী সরকার বঞ্চিত করছে বলে তোপ দাগে নবান্ন।
আরও পড়ুন: Union Budget 2020 key features: ধুকতে থাকা অর্থনৈতিক আবহে আশা-নিরাশার বাজেট
রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর অভিযোগ, কেন্দ্রের রাজস্ব আদায় কম হওয়ায় বাংলা বহু কোটি টাকার পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এরই মধ্যে আবার চলতি মাসে রাজ্যকে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করতে বলা হয়েছে। এই খাতে প্রায় দশ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত খরচ বেড়েছে রাজ্য সরকারের। স্বভাবতই সামাজিক প্রকল্পের খরচ চালিয়ে যাওয়া রাজ্য সরকারের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।