Advertisment

শপিং মলের পরিবর্তে পাড়ার ছোট দোকান থেকে কেনাকাটা করলে কতটা পাল্টাবে অর্থনীতি?

"দেশের অর্থনীতির বৃদ্ধি কিন্তু শুধু জিডিপি দিয়ে নির্ধারিত হয় না। জিডিপির সঙ্গে আয় বন্টন, কর্ম সংস্থান, এগুলোও দেখা হয়। দেশের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে ছোট শিল্প এবং ব্যবসার ভূমিকা অনেক বেশি"।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

ভারতে লকডাউন পরবর্তী অর্থনীতির ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।  টিভি, খবরের কাগজ, সোশ্যাল মিডিয়ায় সে নিয়ে আলোচনাও কম হচ্ছে না। বিশেষত সোশ্যাল মিডিয়ায় সম্প্রতি ক্ষুদ্র শিল্পের ধসে পড়া নিয়ে চূড়ান্ত তর্ক বিতর্ক চলছে। অনেকেই বলছেন আগামী কয়েক মাস, বছর শপিং মলের পরিবর্তে ছোট ছোট দোকান থেকে যত বেশি পণ্য সামগ্রী কেনা হবে, তত চাঙ্গা হবে অর্থনীতি। এই বিষয়ে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা কে কী বললেন অর্থনীতিবিদ এবং রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী ডঃ অসীম দাশগুপ্ত।

Advertisment

প্রশ্নঃ করোনা ভাইরাস সংক্রমণ আটকাতে দেশজুড়ে প্রায় দেড়মাসের লকডাউন জারি। এই সংকটের মাঝে ভারতের অর্থনীতির টালমাটাল পরিস্থিতি বাড়িয়ে তুলছে দুশ্চিন্তা। এই বিষয়ে কী বলবেন?

ডঃ দাশগুপ্তঃ এই অন্ধকার সময়টায় আমাদের লড়াই দুটো বিষয়কে কেন্দ্র করে। প্রথমটি করোনা ভাইরাস। এবং দ্বিতীয়টি অর্থনীতির ধসে পড়া। লকডাউনকালে ক্ষুদ্র শিল্প এবং ছোট ব্যবসা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অথচ সাধারণ মানুষের রোজগার এই দুটি ক্ষেত্র থেকেই সবচেয়ে বেশি আসে। আমি মনে করি অবিলম্বে এইদুটো ক্ষেত্রকে স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে হবে। যদি শপিং মল বন্ধ থাকে, তার প্রভাব অর্থনীতিতে পড়তে বাধ্য। খুব সরাসরি না হলেও এর ফলে কিন্তু ক্ষুদ্র শিল্প, ব্যবসার প্রসারের সুযোগ বাড়বে। যে বাজারটা শপিং মল দখল করছিল, সেটা এবার পাড়ার ছোট দোকানগুলো করবে। এবং আমি ব্যক্তিগত ভাবে সেটার পক্ষে।

প্রশ্নঃ শপিং মল রাতারাতি বন্ধ হয়ে গেলে সেখানকার নিম্নবিত্ত কর্মচারীরা অবিলম্বে চাকরি খোয়াবেন। তাঁদের কী হবে?

ডঃ দাশগুপ্তঃ এক্ষেত্রে প্রথমে ভাবতে হবে, শপিং মল থেকে কারা জিনিস কেনেন? দেশের অধিকাংশ মানুষ কি শপিং মল থেকে জিনিস কেনেন? আমাদের দেশের মুষ্টিমেয় মানুষ, যাদের হাতে পয়সা বেশি, তাঁরাই মল থেকে কেনাকাটা করতে পারেন। এবার শপিং মলের ব্যবসা বন্ধ হয়ে গেলে নিম্নবিত্ত কর্মচারীরা চাকরি খুইয়ে বেকার হয়ে পড়বেন। নিশ্চয়ই ক্ষতি হবে। এবার শপিং মলের বাজারটা যদি চলে গিয়ে ছোট ব্যবসায়ী, দোকানদারের পসার বাড়ে, এবং তা সারা দেশজুড়েই হয়, লাভের পাল্লাটা কিন্তু এদিকেই বেশি ভারী হবে। একটা বড় ইতিবাচক বদল আনতে গিয়ে তাৎক্ষনিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়া অস্বাভাবিক নয়। সেক্ষেত্রে ক্ষতি এবং লাভ, কোনটার পরিমাণ বেশি, তা বিবেচনা করতে হবে। তবে শুধু এভাবে ভাবলেও হবে না। এতে চাকরি হারানো কর্মচারীদের কর্ম সংস্থানের কথাও সরকারকে ভাবতে হবে। এদের দক্ষতাকে কাজে লাগিয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরির উদ্যোগ নিতে হবে। ইতিমধ্যে রিজার্ভ ব্যাঙ্কও এইসব ছোট ছোট গোষ্ঠীকে ঋণ দেওয়ার জন্য এগিয়ে আসছে।

প্রশ্নঃ যারা নিয়মিত সুপার মার্কেট থেকে কেনাকাটা করেন, তাঁরা কী পাড়ার দোকান থেকে বাজার করলে লাভবান হবেন? নয়তো কিনবেন কেন?

ডঃ দাশগুপ্তঃ আজ থেকে এক দশক আগেও তো মানুষ এত বেশি মলে যেত না। সমস্যা কী ছিল। আমরা যে সমস্ত পণ্য পাড়ার দোকান থেকে কিনতাম, তার গুণগত মান কিন্তু খারাপ হত না। শপিং মলে যেটা হয়, আপনার পছন্দের জন্য অনেক বিকল্প থাকে, পাড়ার দোকানে এত বিকল্প থাকে না। পাড়ার দোকানে চটক একটু কম। মোড়কটার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় না। তবে তার মানে এই নয়, শপিং মল আর পাড়ার ছোট দোকানের পণ্যের গুণগত মান আলাদা হয়। শপিং মলের প্যাকেটের খাবার বেশি বিশুদ্ধ, পরিশোধিত এমনটা ভাবার কারণ নেই।

প্রশ্নঃ অনেকেই বলছেন, শপিং মল বা সুপার মার্কেটে যেসব সবজি আসে, তা গ্রামের চাষিদের কাছ থেকেই আসে। তাই শপিং মল বর্জন করলে নাকি ওই হতদরিদ্র চাষি এবং তাঁর পরিবারের পেটেই টান পড়বে। আপনার কী মত?

ডঃ দাশগুপ্তঃ আমি একমত নই। কারণ যে দাম দিয়ে আমি-আপনি মল থেকে সবজি কিনি, তার নামমাত্র ওই চাষির কাছে গিয়ে পৌঁছয়। আমি মনে করি ধান কাটায় এখন সরকারের বাধা দেওয়ার দরকার নেই। সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং মেনে যদি ধান কাটা হয়, কারোর কোনও অসুবিধে হবে না। বেসরকারি রাইস মিল থেকে ধান ভাঙানো হয়ে গেলে দোকানে দোকানে চাল চলে যাবে। কারণ চাহিদাও তো আছে বাজারে। আবার চাষিরাও লাভবান হবেন।

প্রশ্নঃ দেশের এক অংশের মানুষ বলছেন, দেশি ব্র্যান্ডও তো রয়েছে বাজারে। টাটা, আম্বানি, বিড়লার মল থেকে জিনিস কিনলে আখেরে তো দেশের জিডিপি-ই বাড়বে, অর্থনীতিও চাঙ্গা হবে। এ ব্যাপারে আপনি কী বলবেন?

ডঃ দাশগুপ্ত-  প্রথমেই বলি, দেশের অর্থনীতির বৃদ্ধি কিন্তু শুধু জিডিপি দিয়ে নির্ধারিত হয় না। জিডিপির সঙ্গে আয় বন্টন, কর্ম সংস্থান, এগুলোও দেখা হয়। দেশের অর্থনৈতিক বৈষম্য দূর করতে ছোট শিল্প এবং ব্যবসার ভূমিকা অনেক বেশি। কর্ম সংস্থানও এই ক্ষেত্রেই বেশি সম্ভব। জিডিপি মানে হল, একটা দেশের এক বছরের মোট লাভ এবং মজুরির সমষ্ঠি। এই মজুরি সরাসরি কর্ম সংস্থানের সঙ্গে যুক্ত। কর্ম সংস্থান বাড়লে চাহিদা বাড়তে বাধ্য। আর অর্থনীতিতে চাহিদা বাড়লে মন্দার পরিস্থিতি আসে না।

প্রশ্নঃসম্প্রতি অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্র সরকারকে পরামর্শ দিয়েছেন, দেশের অর্থনীতির কথা না ভেবেই অবিলম্বে টাকা ছাপিয়ে গরিব মানুষকে দেওয়া হোক। এটা কতোটা ফলপ্রসূ বলে মনে করছেন?

ডঃ দাশগুপ্ত-  আমি সাধারণত অন্য কারোর মন্তব্যের প্রেক্ষিতে কিছু বলিনা। তবে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই মন্তব্য কাগজে প্রকাশিত হয়েছে বলেই বলছি, নতুন করে টাকা ছাপিয়ে বিলি করার আগে কেন্দ্রের উচিত কর্পোরেট করে যে বিপুল ছাড় (১.৪ ৫লক্ষ কোটি টাকা) দেওয়া হয়েছে, তা তুলে নেওয়া। এটা খুব কম টাকা নয়। সেটা আগে ব্যবহার করা হোক গরিব মানুষের জন্য। এর পরেও যদি ঘাটতি থাকে, প্রয়োজন হলে সরকার টাকা ছাপাক। এতে যেটা হবে, প্রাথমিক ভাবে চাহিদা বাড়বে। কিন্তু এতে মূল্যবৃদ্ধি হবে না।

indian economy
Advertisment