Advertisment

সঞ্চয়ের কিছু কৌশল; কী ভাবে করবেন, কবে থেকে

ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখেই একটু একটু করে শুরু করুন জমাতে। প্রথম চাকরি তেমন জুতসই না হলেও কুছ পরোয়া নেহি। যত কম মাইনেই হোক না কেন, সেখান থেকেই সঞ্চয় করার চেষ্টা করুন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

‘তবুও হৃদয় মোর বলে, সঞ্চয় কিছু যেন রবে’। না, সঞ্চয়ের কথা খবরদার হৃদয় দিয়ে ভাববেন না। ভাবুন মাথা দিয়ে। সদ্য চাকরি পেয়েছেন? তাতে কী? এই তো সঠিক সময় সঞ্চয়ের। ভাবছেন হাড়মাস এক করে খেটে একটা চাকরি জোটালেন, এখন একটু আরাম করবেন কোথায়, তা নয়, এখন আবার জমানোর কথা বলছি? কিন্তু অল্প বয়স থেকে বিচক্ষণতার সঙ্গে টাকা জমাতে শুরু করলে লাভটা কিন্তু আপনারই। ভবিষ্যতের কথা মাথায় রেখেই একটু একটু করে শুরু করুন জমাতে। প্রথম চাকরি তেমন জুতসই না হলেও কুছ পরোয়া নেহি। যত কম মাইনেই হোক না কেন, সেখান থেকেই সঞ্চয় করার চেষ্টা করুন। কয়েকটি উপায় বাতলানো হল, মেনে চললে আফশোস করবেন না।

Advertisment

সঞ্চয় শুরু করতে হবে উপার্জনের প্রথম মাস থেকেই। এখন বিভিন্ন পেশায় দৈনিক আয় বা পারিশ্রমিক কমপক্ষে ৫০০ টাকা। মাসে ২৬টি কাজের দিনে ১৩,০০০ টাকা। প্রথম দিকে মাত্র এক দিনের আয় (অর্থাৎ ৫০০ টাকা) সরিয়ে রাখতে হবে সঞ্চয়ের জন্য। হিসেবে ৪ শতাংশেরও কম। পরে আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে বাড়াতে হবে সঞ্চয়ের হার। পরবর্তী ধাপে সঞ্চয়ের খাতে সরিয়ে রাখতে হবে আয়ের কমপক্ষে দশ শতাংশ। এই টাকা নিয়মিত লগ্নি করে যেতে হবে ভাল রিটার্ন পাওয়া যায় সুরক্ষিত কোনও প্রকল্পে। উপার্জন বাড়লে বিভিন্ন লগ্নি শুরু করতে পারেন একাধিক প্রকল্পে।

আরও পড়ুন, কী ভাবে কমাবেন বিয়ের খরচ?

বড় মেয়াদে যে সব প্রকল্পে নিয়মিত লগ্নি করা যায় তাদের মধ্যে রয়েছে

পাবলিক প্রভিডেন্ট ফান্ড বা (পিপিএফ)

ন্যাশনাল পেনশন সিস্টেম  (এনপিএস)

ব্যাঙ্ক ও পোস্ট অফিসে রেকারিং ডিপোজিট

সিস্টেমেটিক ইনভেস্টমেন্ট প্ল্যান (এসআইপি )র মাধ্যমে মিউচুয়াল ফান্ডে লগ্নি

লগ্নির কৌশল

প্রথম দিকে টাকা জমাতে শুরু করতে পারেন রেকারিং ডিপোজিট অ্যাকাউন্টে। এক-দু’বছরে থোক টাকা জমলে তা কোনও  দীর্ঘ মেয়াদি জমা প্রকল্পে রেখে দিতে পারেন।

আরও পড়ুন,  ঘুরতে যাবেন, আবার ট্যাঁকেও চাপ পড়বে না! উপায় জেনে নিন

 নিজের পিএফ -এ নিজেই টাকা রাখুন

কর্মজীবনের শুরুতেই খুলে ফেলুন একটি পিপিএফ অ্যাকাউন্ট। বড় মেয়াদে এখানে নির্ভাবনায় ছোট-বড় অঙ্কের টাকা জমিয়ে রাখা যায়। সুদ এবং সুরক্ষার দিকে থেকে এই প্রকল্প সবচেয়ে নিরাপদ।  এক নজরে দেখে নেওয়া যাক প্রকল্পটির মূল বৈশিষ্ট্য:

মেয়াদ: ১৫ বছর। মেয়াদ শেষে প্রতি বার পাঁচ বছর করে বাড়িয়ে নেওয়া যায়।

ন্যূনতম জমা-বছরে ৫০০ টাকা।

সবচেয়ে বেশি- ১.৫০ লক্ষ টাকা।

ক’টি কিস্তি- বছরে অন্তত একটি। সবচেয়ে বেশি ১২টি।

কোথায় অ্যাকাউন্ট- পোস্ট অফিস এবং বিভিন্ন ব্যাঙ্কের বড় শাখায় অ্যাকাউন্ট খোলা যায়।

সুদের হার- এখন ৭.৯%। অর্থাৎ, ব্যাঙ্কের মেয়াদি জমায় সুদের তুলনায় ১% বেশি। প্রতি তিন মাসে সুদের হার ঠিক হয় এই প্রকল্পে।

কর ছাড়ের সুবিধা- বাৎসরিক জমার উপরে করছাড় পাওয়া যায় ৮০সি ধারায়। অন্য দিকে, প্রাপ্ত সুদ থাকে পুরোপুরি করমুক্ত।

প্রথম পাঁচ বছরে কোনও টাকা তোলা যায় না। ষষ্ঠ বছর থেকে একাংশ তোলা যায়। তবে খুব দরকার না থাকলে মেয়াদ শেষের আগে এই প্রকল্প থেকে টাকা না তোলাই ভাল।

আরও পড়ুন, বাণিজ্য-বান্ধব রোবটই হাল ফেরাবে অর্থনীতির?

পেনশনের হিসেব শুরুতেই 

অবসরের ঠিক আগে নয়, পেনশনের কথা ভাবুন একটু সময় থাকতেই। কেন্দ্রের উদ্যোগে তৈরি এই প্রকল্পের নাম নিউ পেনশন স্কিম। সংক্ষেপে এনপিএস। এক বা একাধিক কিস্তিতে এই প্রকল্পে জমা করতে হয় বছরে ৬,০০০ টাকা। বেশি করতে পারলে আরও ভাল। এই ভাবে জমা করে যেতে হবে ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত। রয়েছে করছাড়ের বিশেষ সুবিধা।

সুকন্যা সমৃদ্ধি যোজনা

পরিবারে কন্যাসন্তান থাকলে তার ভবিষ্যতের জন্য খুলতে পারেন সুকন্যা সমৃদ্ধি অ্যাকাউন্ট। এটি খোদ ভারত সরকারের প্রকল্প।

প্রকল্পে যোগদানের সময়ে কন্যার বয়স ১০ বছরের কম হতে হবে। টাকা জমা করতে হবে তার ১৪ বছর বয়স পর্যন্ত। তার পর থেকে ২১ বছর বয়স পর্যন্ত কোনও টাকা জমা দিতে হবে না। ন্যূনতম জমা মাত্র ২৫০ টাকা। মেয়াদকালে যত বার খুশি টাকা জমা করা যায়। প্রকল্পের মেয়াদ ফুরোবে কন্যার বয়স ২১ বছর হলে। জমার উপরে ৮০সি ধারায় পাওয়া যায় করছাড়ের সুবিধা।  প্রকল্পের সুদের হার বর্তমানে ৮.৪%, যা অনেক প্রকল্পের চেয়েই বেশি। ১৮ বছরের পরে উচ্চশিক্ষার জন্য অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তোলা যায়। টাকা তোলা যায় ১৮ বছরের পরে বিয়ে হলেও। সেই টাকা জমা পড়বে কন্যাসন্তানের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে।

আরও পড়ুন, শেষ ৬ মাসে ১৪ হাজার কোটি টাকার লাভ করেছে এলআইসি

মিউচুয়াল ফান্ডে এসআইপি 

বড় মেয়াদে টাকা জমানোর আর একটি ভাল জায়গা মিউচুয়াল ফান্ড। মাসিক কিস্তির ভিত্তিতেও এখানে টাকা রাখা যায়।  ব্যালান্সড ফান্ডে দীর্ঘ মেয়াদে লগ্নি করলে ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণে থাকে। ভাল রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল। পাওয়া যায় করছাড়ের সুবিধা। বিশেষ বিশেষ লক্ষ্য পূরণের জন্য খোলা যেতে পারে এক বা একাধিক এসআইপি অ্যাকাউন্ট।

কর নিয়েও ভাবুন প্রথম থেকেই

শুরুতে না হলেও রোজগার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পরের দিকে আপনি এসে যেতে পারেন আয়করের আওতায়। তখন আপনাকে মাথায় রাখতে হবে কী ভাবে বাঁচাতে পারেন সেই কর। সে ক্ষেত্রে প্রয়োজন মতো লগ্নি করতে হতে পারে ৮০সি ধারার অন্তর্গত প্রকল্পে। করছাড়ের সুবিধাযুক্ত প্রকল্পের মধ্যে আমরা আগেই আলোচনা করেছি পিপিএফ, সুকন্যা সমৃদ্ধি, এনপিএস নিয়ে।

Advertisment