ভুয়ো লোন অ্যাপের খপ্পড়ে পড়ে সর্বস্ব খোয়াতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বহুক্ষেত্রে অতিরিক্ত সুদের চাপে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার মত পথ বেছে নিতে হচ্ছে ঋণগ্রহীতাদের। এমন বহু ঘটনা বারে বারে সামনে আসছে। প্রায় সব ক্ষেত্রেই সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করে প্রতারণার ফাঁদ পাতে এই ভুয়ো ডিজিট্যাল লোন অ্যাপগুলি।
বাজারে ছড়িয়ে থাকা ভুয়ো অনলাইন লোন অ্যাপের ফাঁদ থেকে মুক্তি পেতে একটি ব্যবস্থা তৈরি করে আরবিআই। এর অধীনে, ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক ব্যবস্থার আওতার বাইরে ঋণ প্রদানকারী সমস্ত অ্যাপ নিষ্ক্রিয় করা হবে বলেও কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের তরফে জানানো হয়েছে। আরবিআই নন ব্যাঙ্কিং ফাইন্যান্স কোম্পানিগুলিকে (এনবিএফসি) তাদের অ্যাপগুলির তালিকা শেয়ার করতে বলেছিল যা আরবিআই অর্থ মন্ত্রকের সঙ্গেও শেয়ার করেছিল। এরপর বেআইনিভাবে ডিজিটাল লোন প্রদানকারী অনেক অ্যাপের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হলেও কিছুদিন পর আবারও সামনে আসে এমন ভুয়ো ডিজিটাল লোন অ্যাপ।
যদিও, RBI ইতিমধ্যেই বহুবার গ্রাহকদের এই ধরণের ভুয়ো ডিজিট্যাল লোক অ্যাপের বিষয়ে সতর্ক করে রেজিস্টার লোন অ্যাপ থেকে লোন নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে। কিন্তু অভাবের কারণে গ্রাহকরা প্রায়ই জাল অ্যাপের ফাঁদে পড়েন । রিকভারি এজেন্টরা গ্রাহকদের কাছ থেকে শুধু যথেচ্ছ সুদই নেয় না, মানসিকভাবেও হয়রানি করে। উল্লেখ্য যে RBI ইতিমধ্যেই ২০১৭ সালে একটি সার্কুলার জারি করে এই ধরনের সমস্ত অ্যাপের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে।
এটি লক্ষণীয় যে আবারও চিনা ডিজিটাল ঋণ অ্যাপের খপ্পরে পড়ার ঘটনা দেশে ক্রমাগত বাড়ছে। কয়েকদিন আগে, বেঙ্গালুরুর ২২ বছর বয়সী এক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের পড়ুয়া এমন একটি ঋণ প্রদানকারী অ্যাপের এজেন্টদের দ্বারা হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। জানা গেছে, মৃত ছাত্র চিনা অ্যাপ 'স্লাইস অ্যান্ড কিস' থেকে টাকা ধার করেছিল যা সে শোধ করতে পারেনি। কয়েকদিন আগে ভোপালেও একই রকম ঘটনা ঘটেছিল। সেখানে ঋণ আদায়ের জন্য এক ব্যক্তিকে এতটাই মানসিক অত্যাচার করা হয় যে তিনি তার ছোট দুই সন্তান ও স্ত্রীসহ আত্মহত্যা করেন। এমন পরিস্থিতিতে, অবৈধ ডিজিটাল লোন অ্যাপের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই কঠোর RBI
বিশেষজ্ঞরা কি বলেন?
আজকাল, সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে, ভুয়ো লোন অ্যাপে পড়ার প্রবণতা অনেকটাই বেশি। এমতাবস্থায়, এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি যখনই এই ধরনের অ্যাপ থেকে ঋণ নেন এবং ঋণদাতা বাজারে প্রচলিত ঋণের হারের চেয়ে বহুগুণ বেশি সুদের হার চান, তখনই আপনার বুঝতে হবে যে এটি সঠিক নয়। আজকাল বড় ব্যাঙ্ক এবং এনবিএফসিগুলিও পার্সোনাল লোন অফার করে। এমন পরিস্থিতিতে ভুল জায়গা থেকে লোন নেওয়ার কোন মানেই হয় না।
যে অ্যাপগুলি কেওয়াইসি এবং ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশন ছাড়াই তাত্ক্ষণিক লোন দেয় সেগুলি থেকে বারে বারে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। এ ধরনের অ্যাপগুলো প্রথমে কোনো শর্ত ছাড়াই ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয় এবং কেউ তাদের ফাঁদে পা দিলেই তারা মোটা সুদ ধার্য করে বহুগুণ বেশি টাকা নেয়।
মানুষ এভাবে শিকার হয়
বেশিরভাগ গরীব মানুষ এই ধরনের ডিজিট্যাল লোন অ্যাপের শিকার হন। এই অ্যাপগুলি কোনও কাগজপত্র ছাড়াই এবং KYC ছাড়াই লোন দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। তাই মানুষজন সহজেই তাদের বিশ্বাস করে। এছাড়াও, ঋণ দেওয়ার সময় সহজ এবং দ্রুত প্রক্রিয়ার নামে, এই অ্যাপগুলি তাদের অজান্তেই তাদের মোবাইল থেকে কন্ট্যাক্ট লিস্ট, মেসেজ ও গ্যালারির অ্যাকসেস নিয়ে নেয়। এখান থেকেই আসল খেলা শুরু হয়। প্রকৃতপক্ষে, লোন অ্যাপগুলি ব্যবহারকারীদের কন্ট্যাক্ট লিস্ট এবং গ্যালারি ব্যবহার করে পরবর্তীতে তাদের ব্ল্যাকমেইল করে এবং এমন পরিস্থিতিতে, যারা এই ফাঁদে পড়ে, তাদের কাছে ঋণের দ্বিগুণ-চারগুণ টাকা পরিশোধ করা ছাড়া আর কোন উপায় থাকে না।
ঋণের নামে চলছে প্রতারণা
দাবি মত টাকা না দিলে ছবি ভাইরাল করে বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়-স্বজনের সামনে মানহানি করার হুমকি দেওয়া হয়।
বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন
লোন অ্যাপের খপ্পড়ে পড়ে আত্মহত্যা ঘটনা বেড়েই চলেছে। এর আগেও এই লোন অ্যাপ বহু মানুষের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে। গত বছর, মধ্যপ্রদেশের ইন্দোর জেলায়, একটি পুরো পরিবার ব্ল্যাকমেলিংয়ের কারণে আত্মহত্যা করে। ব্যাঙ্গালোরের এক ব্যাঙ্ক কর্মীও এই লোন অ্যাপগুলির ব্ল্যাকমেলিংয়ের কারণে আত্মহত্যা করেছেন। এসব অ্যাপ কোম্পানির ফাঁদে পড়ে প্রাণ হারিয়েছেন ডজন খানেক মানুষ।
তাৎক্ষণিক ঋণ প্রাণঘাতী, এভাবে সাবধান হোন
নথি ছাড়া ঋণ প্রদান করে এমন অ্যাপগুলি আপনার স্মার্টফোনে অ্যাক্সেস পায়। এমতাবস্থায় এই অ্যাপগুলি খুবই বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। এ ধরনের কোনো অ্যাপ থেকে ঋণ নেওয়া থেকে বিরত থাকুন। তাত্ক্ষণিক ঋণের দ্বারা প্রলুব্ধ হবেন না এবং এই অ্যাপগুলি ব্যবহার করা এড়িয়ে চলুন। এই অ্যাপগুলি ব্যাঙ্কিং বিবরণ সহ আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চুরি করতে পারে এবং আপনি প্রতারণার শিকার হতে পারেন। থার্ড পার্টি ওয়েবসাইট বা অ্যাপ থেকে কখনই কোনো লোন মোবাইল অ্যাপ্লিকেশন ডাউনলোড করবেন না। এটি জাল অ্যাপ এবং প্রতারণার প্রথম সংকেত।
কোনো শর্ত ছাড়াই তাৎক্ষণিক ঋণ দেয় এমন কোম্পানিগুলোকে বিশ্বাস করবেন না। এরকম যেকোন অ্যাপ ডাউনলোড করে ফোনে ইন্সটল করার আগে অবশ্যই সেই অ্যাপটির নির্ভরযোগ্যতা যাচাই করে নিন।
এই অ্যাপগুলি ব্যবহার করার আগে, অ্যাপ স্টোরে তাদের সমস্ত সুরক্ষা প্যারামিটারগুলি সাবধানে পড়ুন এবং এই অ্যাপগুলিকে কখনই স্টোরেজ, গ্যালারি এবং পরিচিতিগুলি অ্যাক্সেস করার অনুমতি দেবেন না।
এই অ্যাপগুলিতে আপনার নথি এবং ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া এড়িয়ে চলুন। এছাড়াও আপনার ব্যাঙ্ক সম্পর্কিত তথ্য যেমন ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, এটিএম পিন এবং UPI-এর বিশদ তথ্য শেয়ার করা এড়িয়ে চলুন।