দু'দশকে এত দুরবস্থা হয় নি ভারতের অটো ইন্ডাস্ট্রির। দেশে গাড়ি বিক্রির হার কমেছে ১৮.৭১ শতাংশ, গত প্রায় ১৯ বছরের হিসেবে সর্বনিম্ন। মঙ্গলবার একথা জানিয়েছে সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ান অটোমোবাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (সিয়াম)। সিয়ামের দ্বারা প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, চার চাকা এবং দু'চাকার গাড়ি মিলিয়ে এবছরের জুলাই মাসে বিক্রির সংখ্যা ১৮,২৫,১৪৮, যেখানে গত বছর একই সময় বিক্রির সংখ্যা ছিল ২২,৪৫,২২৩।
গাড়ি বিক্রির হার এত অকস্মাৎ কমে যাওয়ায় গত দুই থেকে তিন মাসে চাকরি খুইয়েছেন প্রায় ১৫,০০০ কর্মী। এর আগে ২০০০ সালের ডিসেম্বরে দেশে গাড়ি বিক্রির হার পড়ে যায় ২১.৮১ শতাংশ।
প্যাসেঞ্জার ভেহিকল (পিভি)-এর বিক্রির হারও গত ১৯ বছরে এবার সর্বনিম্ন, গত বছরের এই সময়ের তুলনায় ৩০.৯৮ শতাংশ কম। এই নিয়ে ক্রমাগত ন'মাস ধরে কমেছে পিভি-র বিক্রি। পাশাপাশি দু-চাকার গাড়ির বিক্রি গত মাসে ১৬.৮২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৫,১১,৬৯২, যেখানে ২০১৮ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত বিক্রি ছিল ১৮,১৭,৪০৬। কমার্শিয়াল গাড়ি এবছর বিক্রি হয়েছে ৫৬,৮৬৬ টি, যেখানে জুলাই ২০১৮ পর্যন্ত বিক্রি ছিল ৭৬,৫৪৫।
নয়া দিল্লিতে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সিয়ামের ডিরেক্টর জেনারেল বিষ্ণু মাথুর বলেন, "তথ্যই বলে দিচ্ছে, এই পরিস্থিতিতে সরকারি হস্তক্ষেপ কতটা জরুরি। কতটা জরুরি 'রিভাইভাল প্যাকেজ'। আমাদের তরফে যতটা সম্ভব বিক্রি বাড়ানোর চেষ্টা করছি। কিন্তু এই সময় সত্যি সরকারি সাহায্যের প্রয়োজন।" তাঁর আরও বক্তব্য, পুনরুজ্জীবন বা রিভাইভাল প্যাকেজ ক্রমশ নিম্নগামী বিক্রির হার রোধ করতে, এবং ইন্ডাস্ট্রিকে ফের বৃদ্ধির পথে ফিরিয়ে আনার পক্ষে জরুরি।
মাথুর জানান, গত দু-তিন মাসে বিভিন্ন গাড়ি উৎপাদন সংস্থা থেকে ছাঁটাই হয়েছেন প্রায় ১৫,০০০ অস্থায়ী এবং অনিয়মিত কর্মী। এছাড়াও গাড়ির যন্ত্রাংশ উৎপাদন শিল্পের ক্ষেত্রে খাঁড়া ঝুলছে প্রায় ১০ লক্ষ চাকরির ওপর, বলেন তিনি। এর ওপর রয়েছে ক্রমশ বন্ধ হতে থাকা গাড়ির ডিলারশিপ। মাথুরের দাবি, ঘনীভূত মন্দার কারণে ইতিমধ্যেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে প্রায় ৩০০ ডিলারশিপ, যার ফলে খোয়া গেছে আন্দাজ দু'লক্ষ চাকরি।
পরিস্থিতি কতটা সঙ্গিন, তা বোঝাতে ২০০৮-০৯ এবং ২০১৩-১৪ সালের মন্দার উদাহরণ দিয়ে মাথুর বলেন, সেসময় বাজার খারাপ হলেও, ইন্ডাস্ট্রির কিছু ক্ষেত্রে বৃদ্ধি দেখা গিয়েছিল। "কিন্তু এবার সামগ্রিকভাবে বিক্রি কমছে সব ক্ষেত্রেই," বলেন তিনি।
ইন্ডাস্ট্রির তরফে সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে যাতে কমানো হয় জিএসটি-র মাত্রা, চালু করা হয় পুরনো গাড়ি বর্জন নীতি, এবং পুনরুজ্জীবিত করা হয় এনবিএফসি বা নন্-ব্যাঙ্কিং ফিনান্সিয়াল ক্ষেত্রের, যেহেতু গাড়ি বিক্রির হার অনেকাংশেই নির্ভর করে গ্রাহকের কাছে উপলব্ধ অর্থের ওপর। এছাড়াও মাথুর জানান, তাঁরা আবেদন করেছেন যেন যানবাহনের রেজিস্ট্রেশন ফি বাড়ানোর প্রস্তাব আপাতত মুলতুবি রাখা হয়। তাঁর কথায়, ইন্ডাস্ট্রির ছোটবড় সব অংশীদারই মনে করেন, জিএসটি কমালে গাড়ির দামও কমবে, ফলে বিক্রি স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে। "আমরা বলতে চাই যে সাময়িকভাবে জিএসটি কমালেও তা বিক্রি বাড়াতে সাহায্য করবে...বিক্রি যত কমবে, বাড়ানো ততই কঠিন হবে।"
মাথুর আরও বলেন, গাড়ি উৎপাদন ক্ষেত্রে মন্দা মানে কমতে থাকবে মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (গ্রোস ডোমেস্টিক প্রোডাক্ট বা জিডিপি), যেহেতু দেশের কারখানাজাত উৎপাদনের ক্ষেত্রে জিডিপি-র অর্ধেক আসে গাড়ি উৎপাদন শিল্প থেকে, যেখানে কর্মরত রয়েছেন প্রায় ৩.৭ কোটি মানুষ।
উল্লেখ্য, প্যাসেঞ্জার ভেহিকল বিভাগে গত বছরের জানুয়ারি-জুলাই সময়কালের তুলনায় ৩৬.৭১ শতাংশ কম বিক্রি হয়েছে মারুতি সুজুকির গাড়ি, যা ভারতে সর্বাধিক বিক্রিত ব্র্যান্ড। ওই একই বিভাগে হিউন্ডাইয়ের বিক্রি কমেছে ১০.২৮ শতাংশ, এবং মহিন্দ্রা অ্যান্ড মহিন্দ্রার বিক্রি কমেছে ১৪.৭৪ শতাংশ।
দু-চাকার গাড়ির ক্ষেত্রে গত বছরের তুলনায় হিরো মোটোকর্পের বিক্রি কমেছে ২২.৯ শতাংশ, এবং তাদের নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী হন্ডা মোটরসাইকেল অ্যান্ড স্কুটার ইন্ডিয়ার বিক্রি কমেছে ১০.৫৩ শতাংশ। একইভাবে ক্ষতিগ্রস্ত চেন্নাইয়ের টিভিএস মোটর কোম্পানি, যাদের বিক্রি কমেছে ১৫.৭২ শতাংশ।