Advertisment

অর্থনৈতিক মন্দা নিয়ে উদ্বিগ্ন নীতি আয়োগ কর্তা, 'অভূতপূর্ব' পরিস্থিতিতে সরকার

কুমার বলেন এই ভরসা শুধুমাত্র সরকারি এবং বেসরকারি ক্ষেত্রেই নয়, "প্রাইভেট সেক্টরের মধ্যেও কেউ কাউকে ধার দিতে চাইছে না...সবাই টাকার ওপর বসে আছে, কিন্তু কেউ নড়ছে না"।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
niti aayog

নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান রাজীব কুমার। ফাইল ছবি

দেশের আর্থিক ক্ষেত্রে মন্দা, নগদ জোগানের দুরবস্থা, এবং অর্থনীতিতে পর্যাপ্ত বেসরকারি বিনিয়োগের অভাবের কথা মাথায় রেখে নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান রাজীব কুমার বলেছেন সরকার বর্তমানে "এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির" সম্মুখীন হয়েছে, এবং "সাধারণের বাইরে গিয়ে" কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা আবশ্যক।

Advertisment

"ভারত সরকারের কাছে এ এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। গত ৭০ বছরে এই ধরনের আর্থিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হই নি আমরা। গোটা আর্থিক ক্ষেত্রটাই এক ঘূর্ণিপাকের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে...কেউ কাউকে ভরসা করছে না...এমন কিছু পদক্ষেপ নিতে হতে পারে যা সাধারণের বাইরে...আমার মতে সরকারের অবশ্য কর্তব্য, যেমন করে হোক প্রাইভেট সেক্টরের আশঙ্কা দূর করা," হিরো মাইন্ডমাইন সামিটে এক আলোচনায় বলেন রাজীব কুমার।

বাজারে ভরসাহীনতা নিয়ে কথা বলতে গিয়ে কুমার বলেন এই ভরসা শুধুমাত্র সরকারি এবং বেসরকারি ক্ষেত্রেই নয়, "প্রাইভেট সেক্টরের মধ্যেও কেউ কাউকে ধার দিতে চাইছে না...সবাই টাকার ওপর বসে আছে, কিন্তু কেউ নড়ছে না"।

আরও পড়ুন: বাজারে মন্দা, ১০ হাজার কর্মী ছাঁটাইয়ের মুখে বিস্কুট নির্মাতা পার্লে

বর্তমান সমস্যার জন্য অনেকাংশেই ২০০৪ থেকে ২০১১ সালের মধ্যে ধারের পরিমাণ বৃদ্ধিকে দায়ী করেছেন কুমার। তাঁর বক্তব্য, ওই সময়ের মধ্যে ধারের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় ২৭ শতাংশ, যা জন্ম দেয় 'নন-পারফর্মিং অ্যাসেট' অথবা NPA-র, কাজেই উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া "প্রক্রিয়া এবং নিষ্ক্রিয়তা" নিয়ে নাজেহাল হচ্ছে সরকার।

গত চার বছরে নেওয়া সরকারি পদক্ষেপ, যেমন নোট বাতিল, জিএসটি এবং আইবিসি (ইন্সল্ভেন্সি অ্যান্ড ব্যাঙ্করাপ্টসি কোড), বাজারে নগদ টাকার পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছে, বলেন কুমার। তাঁর কথায়, "এর আগে ১০ থেকে ৩৫ শতাংশ নগদ টাকা মজুত থাকত বাজারে, যার ফলে মানুষের সাহায্য হতো। সেই নগদ টাকাটা কমে গেছে।" তিনি আরও বলেন, সব সমস্যা মিলে "বেশ জটিল পরিস্থিতির" সৃষ্টি হয়েছে। "এর কোনও সহজ উত্তর নেই।"

কুমারের মতে, বেসরকারি বিনিয়োগ হলে ভারত 'মিডল ইনকাম ট্র্যাপ' (মধ্যম আয়ের ফাঁদ) থেকে বেরোতে পারবে। তাঁর আরও বক্তব্য, কেন্দ্রীয় বাজেটে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে চাপ কমানোর কিছু পন্থার কথা বলা হয়েছে। সঙ্গে দেওয়া হয়েছে গত পাঁচ বছরে সর্বনিম্ন আর্থিক বৃদ্ধির হার বাড়ানোর দাওয়াই।

আরও পড়ুন: ডেবিট কার্ড বাতিলের পথে এসবিআই, আপামর ভারতবাসীর কপালে ভাঁজ

এছাড়াও রয়েছে বেসরকারি পরিষেবা প্রদানকারী এবং মাল সরবরাহকারীদের বকেয়া টাকা মেটানোর বিলম্ব, যার জন্য দায়ী মূলত সরকার এবং তার বিভিন্ন দফতর, যার ফলে ঢিমে হয়ে এসেছে বাজারের গতি। কুমার বলেন, এই বিলম্ব দূরীকরণের সবরকম চেষ্টা হচ্ছে। "বলতে দ্বিধা নেই, এভাবে বেসরকারি সংস্থার ন্যায্য পেমেন্ট ধরে রাখতে পারে না সরকার। এই মুহূর্তে বড়সড় চেষ্টা চলছে যাতে এই জট কাটানো যায়," বলেন তিনি।

সামিটে বক্তব্য রাখতে গিয়ে অর্থ মন্ত্রকের মুখ্য অর্থনৈতিক উপদেষ্টা কৃষ্ণমূর্তি সুব্রমানিয়ান বলেন বেসরকারি ক্ষেত্রে প্রতিবার "সানসেট ফেজ" (সূর্যাস্তের ক্ষণ) এলেই যদি সরকারি পরিত্রাণ এবং হস্তক্ষেপের দাবি ওঠে, তবে তা "নৈতিক বিপত্তি" ডেকে আনে এবং বাজারি অর্থনীতির পক্ষে "অভিশাপ" হয়ে দেখা দেয়।

এর আগে সুব্রমানিয়ান বলেছিলেন, সরকারি সাহায্যের প্রয়োজন শৈশবে হতে পারে, বড় হয়ে গেলে নয়। "আমি তো বলব ১৯৯১ সাল (উদারীকরণের পর) থেকে ভারতে বেসরকারি সেক্টর রয়েছে, কাজেই তার বয়স এখন ৩০। একজন ৩০ বছর বয়সী ব্যক্তির বলা উচিত, আমি আমার নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারি। আমাকে কথায় কথায় বাবার কাছে ছুটতে হবে না," বুধবার মুম্বইয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেন তিনি।

Advertisment