করোনা লকডাউনের জেরে কলকাতায় আকাল পড়েছে পাউরুটির। সেই আবহে কাজ চলছে এক পাউরুটির কারখানায়। ছবি: পার্থ পাল, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
সরকারি সাহায্য ছাড়া কর্মীদের বেতন দেওয়ার সংস্থান নেই, এমতাবস্থায় দেশের রপ্তানি ক্ষেত্রের প্রতিনিধিরা কেন্দ্রীয় সরকারকে জানিয়েছেন যে লকডাউনের জেরে বন্ধ হয়ে গিয়েছে যেসব উৎপাদনকারী কারখানা, সেগুলি শিগগিরি খোলার ব্যবস্থা না করলে আন্তর্জাতিক বাজারে চিনের কাছে নিজের জায়গা খোয়াবে ভারত, যেহেতু করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব কাটিয়ে উঠে ফের উৎপাদন চালু করেছে চিন।
Advertisment
গত সোমবার কেন্দ্রীয় বাণিজ্য তথা শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের সঙ্গে এক আলোচনায় রপ্তানিকারকরা বলেন যে ভারত যদি অতি দ্রুত ফের রপ্তানি শুরু না করে, তবে ভারতের রপ্তানির বাজার চলে যাবে চিনের হাতে। এই প্রসঙ্গে তাঁরা বিশেষভাবে উল্লেখ করেন কিছু ওষুধ রপ্তানির কথা, যা করোনা মহামারীর জেরে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, শিগগিরি তাঁদের ওষুধ রপ্তানি করতে না দিলে সমস্ত আন্তর্জাতিক বাজারগুলি অধিগ্রহণ করে নেবে চিন।
ফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশনস-এর ডিরেক্টর-জেনারেল অজয় সহায় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, "যে কোনও দেশকে, বিশেষ করে চিনকে, একবার জমি ছেড়ে দিলে তা ফেরত পাওয়া যে ভীষণ, ভীষণ কঠিন, সেই সমস্যার কথা আমরা জানিয়েছি। সেই কারণেই আমাদের দাবি যে অন্তত ৫০ শতাংশ লোকবল দিয়েই নাহয় আবার উৎপাদন চালু করতে দিন। তার কম লোকবল হলেও হবে, যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা যায়, এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা যায়। এতে করে শিল্পটা বেঁচে যাবে।"
Advertisment
ওই বাণিজ্যিক প্রতিনিধিরা আরও দাবি জানান, গত সপ্তাহে যেমন নির্দিষ্ট কিছু সামগ্রী-বাহী গাড়ি চলাচলের অনুমতি দেয় সরকার, তেমনি নির্দিষ্ট কিছু মানুষজনের চলাচলেরও অনুমতি দেওয়া হোক। এই দলে পড়বেন সেইসব কর্মী, যাঁদের কাজ হলো বেতন দেওয়া বা বিল মেটানো, যাঁদের কারখানায় যেতে দেওয়া উচিত বলে মনে করেন ওই প্রতিনিধিরা।
বৈঠকে রপ্তানিকারকরা কর্মীদের বেতন দেওয়ার জন্য আর্থিক সাহায্য প্রার্থনা করেন এই ভিত্তিতে যে, করোনাভাইরাস মহামারীর দরুন বড় রকমের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ব্যবসায়।
ইএসআই-এর মতো কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষার স্বার্থে কিছু বাধ্যতামূলক খরচের হাত থেকে আপাতত রেহাই দেওয়া হোক মালিকপক্ষকে, এমন প্রস্তাবও ওঠে বৈঠকে। পাশাপাশি এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড (ইপিএফ)-এর ক্ষেত্রেও প্রস্তাব পেশ করা হয় যে, মাসে ১৫ হাজারের ঊর্ধ্বসীমা সরিয়ে দেওয়া হোক। এর আগে সরকার জানিয়েছিল, যেসব কর্মী মাসে ১৫ হাজারের কম বেতন পান, তাঁদের ক্ষেত্রে কর্মচারী এবং কর্তৃপক্ষ, উভয়ের হয়েই মাসিক কিস্তি ভরবে সরকারই।
এছাড়াও একটি বিকল্প প্রস্তাব পেশ হয়, যার দ্বারা 'ওয়েজ বিল (wage bill)'-এর একটি নির্দিষ্ট ভাগ সরাসরি বহন করবে সরকার।
টেলিকম ইকুইপমেন্ট অ্যান্ড সার্ভিসেস এক্সপোর্ট প্রোমোশন কাউন্সিল-এর চেয়ারম্যান শ্যামল ঘোষ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানান, "এমন একটা সময় আসছে, যখন কাউকেই টাকা দেওয়া যাবে না। যদি অর্ডারের মাধ্যমে আপনার ঘরে টাকা না আসে, তাহলে তো সমস্যা। এই অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে যদি মোটামুটি সহজে টাকা না আসে, তবে মাইনে দেওয়া অবশ্যই মুশকিল হবে।"
বৈঠকে উপস্থিত অনেকেরই বক্তব্য, সরকারের তরফে কোনও প্রতিশ্রুতি না এলেও সমস্ত দাবি এবং পরামর্শ নোট করে নেওয়া হয়। অজয় সহায় বলেন, "ভারতীয় উৎপাদন শিল্প যাতে যতটা তাড়াতাড়ি সম্ভব আবার আগের মতো হয়ে যায়, সে ব্যাপারে মন্ত্রীর খুব উৎসাহ।"
অনেকেই সরকারকে পুরোনো বকেয়া মেটাতে বলেন - বিশেষ করে টেলিকম সরঞ্জাম প্রস্তুতকারকরা বলেন যে বিএসএনএল এবং এমটিএনএল-এর মতো সরকারী উদ্যোগ বা পিএসইউ (পাবলিক সেক্টর আন্ডারটেকিং)-এর কাছ থেকে প্রায় ২,০০০ কোটি টাকা পান তাঁরা। শ্যামলবাবু বলেন, "টেলিকম একটি জরুরি পরিষেবা, যেখানে উৎপাদনের লাইন বজায় রাখা প্রয়োজন। উৎপাদন বজায় না রাখলে শ্রমিক বাহিনীকে পুরোপুরি কাজে লাগানো যায় না। এবার এই উৎপাদন বজায় রাখতে গেলে প্রথম কথা হলো, বকেয়া মেটাতে হবে এবং দুই, সহজলভ্য কার্যকরী মূলধন (ওয়ার্কিং ক্যাপিটাল) থাকতে হবে।"