আদানি গোষ্ঠীর শেয়ারের পতনের বাজারে বড়সড় প্রভাব দেখা দিয়েছে। ঝুঁকির মুখে সরকারি ব্যাঙ্ক থেকে শুরু করে বৃহত্তম জীবন বীমা সংস্থা এলআইসি পর্যন্ত। হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের একটি রিপোর্ট ঘিরে বাজারে শুরু হয়েছে আতঙ্ক। আদানি গ্রুপের শেয়ারে ব্যাপক পতন হয়েছে। আদানি গোষ্ঠীর কোম্পানিতে যেখানে এলআইসির বড় বিনিয়োগ রয়েছে। একই সঙ্গে অনেক সরকারি ব্যাংক এ গ্রুপকে বড় পরিসরে ঋণ দিয়েছে। সব মিলিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা গৌতম আদানির কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা হয়েছে। আদানি গ্রুপের শেয়ারে পতন হতেই ক্ষতির মুখে এলআইসি, স্টেটব্যাঙ্ক সহ একাধিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান।
আমেরিকার লগ্নি সংক্রান্ত গবেষণাকারী সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্টে প্রকাশিত অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হলে দেশের অর্থনীতি নতুন করে ঝুঁকির মুখে পড়বে না তো? আদানিদের সংস্থায় এলআইসি-র বিপুল লগ্নি আছে। স্টেট ব্যাঙ্ক-সহ বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে রয়েছে গোষ্ঠীর ঋণ। ফলে আদানিদের শেয়ার মূল্য কমলে তাদের ক্ষতি। যেখানে মানুষের পুঁজি থাকে। ইতিমধ্যেই এলআইসি-র লগ্নি মূল্য কমেছে। এ দিন তাদের শেয়ার দর ৩.৪৫% পড়েছে। বেশ খানিকটা নেমেছে স্টেট ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্ক অব বরোদা-সহ ব্যাঙ্কিং শিল্পের শেয়ারও। হিন্ডেনবার্গের অভিযোগ, কৃত্রিম ভাবে শেয়ারের দর বহু গুণ বাড়িয়েই আদানিরা বিশাল শেয়ার সম্পদ গড়েছে। গত তিন বছরে কর্ণধার গৌতম আদানির শেয়ার সম্পদ বেড়েছে ৮০০ শতাংশের বেশি। এমন গুরুতর অভিযোগের তদন্ত হওয়া দরকার, মত কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশের।
শুক্রবার টানা দ্বিতীয় অধিবেশনে আদানি গ্রুপের শেয়ারের দাম ব্যাপকভাবে পড়ে। এর প্রভাব পড়েছে ব্যাংক ও এলআইসি ওপরও। ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলি আদানি গ্রুপের সংস্থাগুলিকে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে। অন্যদিকে LIC-এর আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলিতে ৭০ হাজার কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ রয়েছে। ব্যাঙ্ক অফ বরোদার শেয়ার সাত শতাংশেরও বেশি কমেছে যখন SBI-এর শেয়ার ৪.৬৯ শতাংশ কমেছে। দেশের বৃহত্তম বীমা সংস্থা এলআইসির শেয়ার কমেছে ৩.২৫ শতাংশ । ২০২২ সালের অর্থ বছরে, আদানি গ্রুপের মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ২ লক্ষ কোটি টাকা। যার মধ্যে প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা ছিল ব্যাঙ্কগুলির থেকে।
কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ এক বিবৃতিতে বলেছেন যে আদানি গোষ্ঠীর বেসরকারি ব্যাঙ্কগুলির তুলনায় সরকারি ব্যাঙ্কগুলি দ্বিগুণ ঋণ দিয়েছে। এর মধ্যে ৪০ শতাংশ ঋণ দিয়েছে এসবিআই। এই কারণে, যারা তাদের কষ্টার্জিত অর্থ এলআইসি এবং এসবিআই-তে বিনিয়োগ করেছেন তারা ডুবে যাওয়ার পথে। তিনি আরও বলেন, ‘আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে অভিযোগ সত্য হলে এসবিআইয়ের মতো সরকারী ব্যাঙ্কগুলি বিশাল ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে’।
এলআইসি দিনের পর দিন আদানি গ্রুপের কোম্পানিতে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। ৩০ সেপ্টেম্বর, ২০২২ পর্যন্ত, LIC-এর মোট বিনিয়োগের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়ায় ১০.২৭ লক্ষ কোটি টাকা।। এর মধ্যে আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলিতে এলআইসির বিনিয়োগ প্রায় সাত শতাংশ। এলআইসি সম্প্রতি আদানি এন্টারপ্রাইজ, আদানি টোটাল গ্যাস এবং আদানি ট্রান্সমিশনে বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। গত দুই বছরে, এলআইসি আদানি গ্রুপের কোম্পানিগুলিতে দ্রুত বিনিয়োগ বাড়িয়েছে। আদানি গ্রুপের ৭টি কোম্পানির মধ্যে ৪টিতে বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়িয়েছে এলআইসি।
এদিকে বাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা সেবি (SEBI)ও এ ব্যাপারে সতর্ক হয়েছে। রয়টার্সের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত বছর আদানি গোষ্ঠীর প্রতিটি চুক্তি নিবিড়ভাবে খতিয়ে দেখবে সেবি। আদানি গ্রুপ সম্প্রতি অনেক বড় চুক্তি করেছে। এর মধ্যে রয়েছে অম্বুজা সিমেন্টস এবং এসিসি লিমিটেডের অধিগ্রহণ। এর পাশাপাশি আমেরিকার শর্ট সেলার কোম্পানি হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্টও খতিয়ে দেখা হবে। এই রিপোর্টে আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে অনেক গুরুতর অভিযোগ আনা হয়েছে। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে মার্কিন কোম্পানির বিরুদ্ধে আদালতে যাওয়ার কথা বলেছে আদানি গ্রুপ।
আদানি শেয়ারের দরপতনের প্রভাব LIC-তেও, জানুন ক্ষতির পরিমাণ
শুক্রবার আদানি গ্রুপের শেয়ারে বড় পতন দেখা গেছে। শেয়ারের দাম পড়ে যাওয়ায় একদিনে ৩.৩৭ লক্ষ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে আদানি গ্রুপের। আদানি গ্রুপের শেয়ারের পতনের জেরে ক্ষতির মুখে পড়েছে এলআইসিও। আদানি গ্রুপের শেয়ারের দাম কমে যাওয়ায় LIC ১৬,৬২৭ কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে।