সোমবার কেন্দ্রীয় সরকারকে ১.৭৬ লক্ষ কোটি টাকা সাহায্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া (আরবিআই), যা নিয়ে সরগরম গোটা দেশ। এরই মাঝে জানা গিয়েছে, আরবিআই-এর মূলধনী কাঠামো (ক্যাপিটাল ফ্রেমওয়ার্ক) পর্যালোচনা করতে যে কমিটি গঠিত হয়, সেই কমিটিতে কেন্দ্রীয় সরকারের মনোনীত সদস্য আবেদন জানিয়েছিলেন আরও প্রায় ৫৪,২৫৫ কোটি টাকার, যা কিনা আরবিআই-এর ব্যালান্স শিটের ১.৫ পারসেন্টেজ পয়েন্ট।
ঝুঁকি সহনশীলতা পরিসীমা (রিস্ক টলারেন্স রেঞ্জ) বাড়ানোর এই দাবি মেনে নিলে আরও বেশি অর্থসাহায্য পেত সরকার, কিন্তু সেই দাবি নাকচ করে দেন কমিটির প্রধান তথা আরবিআই-এর প্রাক্তন গভর্নর বিমল জালান।
আরবিআই এই কমিটির রিপোর্ট প্রকাশ করে মঙ্গলবার, অর্থাৎ কমিটির সমস্ত সুপারিশ আরবিআই-এর কেন্দ্রীয় বোর্ড মেনে নেওয়ার একদিন পর। রিপোর্ট বলছে, কেন্দ্রীয় অর্থসচিব রাজীব কুমার প্রস্তাব দেন যে "আর্থিক স্থিতির ঝুঁকি বজায় রাখার যে সংস্থান, তা (আরবিআই-এর ব্যালান্স শিটের) ৩ শতাংশ করে দেওয়া যায়", যেখানে কমিটির সুপারিশ ছিল ৪.৫ থেকে ৫.৫ শতাংশ।
প্রাক্তন অর্থসচিব সুভাষচন্দ্র গর্গ বিদ্যুৎ মন্ত্রকে বদলি হওয়ার পর জালান কমিটির সদস্য হিসেবে ৩০ জুলাই কেন্দ্রীয় সরকারের মনোনয়ন পান কুমার। তাঁর প্রস্তাব গৃহীত হলে আরবিআই-কে আরও অতিরিক্ত ৫৪,২৫৫ কোটি টাকার মূলধন সরকারের হাতে তুলে দিতে হতো।
সরকারকে যে ১ লক্ষ ৭৬ হাজার ৫০১ কোটি টাকা হস্তান্তর করেছে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক,তার মধ্যে ১ লক্ষ ২৩ হাজার ৪১৪ কোটি হলো ২০১৮-১৯ আর্থিক বর্ষের উদ্বৃত্ত এবং বাকি ৫২ হাজার ৬৩৭ কোটি হলো সংশোধিত আর্থিক মূলধনী কাঠামো অনুযায়ী ব্যাঙ্কের সেন্ট্রাল বোর্ড দ্বারা নির্ধারিত বাড়তি পুঁজি। গত পাঁচ বছরের গড় হস্তান্তরিত পরিমান ছিল ৫৩ হাজার কোটি। এবারের পরিমাণ তার তিন গুণেরও বেশি।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর উরজিত প্যাটেলের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের সংঘাতের একটি অন্যতম প্রধান কারণ ছিল বাড়তি পুঁজি হস্তান্তর। আরবিআই-এর বোর্ড নতুন কাঠামো গঠন করতে একটি কমিটি বসাতে রাজি হওয়ার তিন সপ্তাহের মধ্যে গত বছরের ১০ ডিসেম্বর পদ থেকে ইস্তফা দেন প্যাটেল।
তবে এই ঘটনার আগেই কেন্দ্রের সঙ্গে সম্পর্কের অবনতি ঘটছিল প্যাটেলের। মূলে ছিল আরবিআই অ্যাক্টের সাত নম্বর ধারা লাগু করার কেন্দ্রের অভূতপূর্ব সিদ্ধান্ত, যার ফলে আরবিআই বোর্ডকে নির্দেশ দেওয়ার ক্ষমতা কেন্দ্রের হাতে চলে যায়। যাতে টাকা উদ্বৃত্ত হয়, সেজন্য প্রাপ্ত ইকুইটির পরিমাণ ব্যালান্স শিটের ৬.৮ শতাংশের পরিবর্তে ৫.৫ শতাংশ করে দেওয়া হয়।
জালান কমিটি এও সুপারিশ করেছে যে ২০২০-২১ থেকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের হিসাব বর্ষ (যা বর্তমানে জুলাই থেকে জুন)-কে আর্থিক বর্ষের সঙ্গে সাযুজ্য রাখতে এপ্রিল থেকে মার্চ করে দেওয়া হোক। এছাড়াও সুপারিশ করে হয়েছে যে পাঁচ বছর অন্তর আর্থিক মূলধনী কাঠামোর পর্যালোচনা করা হোক।