ভারতে খুচরো মুদ্রাস্ফীতি (রিটেল ইনফ্লেশন) এক লাফে বেড়ে ২০১৯-এর ডিসেম্বর মাসের হিসেব অনুযায়ী হয়ে দাঁড়িয়েছে ৭.৩৫ শতাংশ, যা গত সাড়ে পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। এর ফলে অনেকটাই কমে গেল রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পলিসি রেট আরও কমানোর সুযোগ, প্রধানত সবজি এবং অন্যান্য খাবারের বাড়তে থাকা দামের কারণে। খুচরো মুদ্রাস্ফীতির প্রায় ৪৬ শতাংশ আসে খাদ্যদ্রব্যের দাম থেকে।
কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (Consumer Price Index বা CPI)-এর দ্বারা চালিত এই মুদ্রাস্ফীতির দুই অন্যতম কারণ হলো বাড়তে থাকা সবজির দাম, যা গত ছ'বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ, এবং ক্রমবর্ধমান ডাল ও ডাল-জাতীয় খাবারের দাম, যা ছাপিয়ে গেছে গত তিন বছরের বিপদসীমা। এছাড়াও রয়েছে পরিবহণ এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার বর্ধিত খরচ।
সোমবার প্রকাশিত ন্যাশনাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিস (National Statistical Office বা NSO)-এর পরিসংখ্যান বলছে, ডিসেম্বর ২০১৯-এ সবজির দামে মুদ্রাস্ফীতির হার ছিল ৬০.৫ শতাংশ, যা সর্বোচ্চ। এর পর অন্যান্যদের মধ্যে ছিল ডালের দামে ১৫.৪৪ শতাংশ মুদ্রাস্ফীতি, মাছমাংসের দামে ৯.৫৭ শতাংশ, এবং ডিমের দামে ৮.৭৯ শতাংশ।
আরও পড়ুন: ছ’বছরে রেকর্ড খাদ্যস্ফীতি, ক্রমশ নিম্নমুখী শিল্পোৎপাদনের হারও
সামগ্রিকভাবে CPI-ভিত্তিক খুচরো মুদ্রাস্ফীতির হার ২০১৯-এর ডিসেম্বরে ছিল ২.১১ শতাংশ এবং নভেম্বরে ৫.৫৪ শতাংশ। সর্বশেষ পরিসংখ্যান যা বলছে, তাতে শহরাঞ্চলে CPI মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে হয় ৭.৫ শতাংশ, যা গত ছ'বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ, এবং নভেম্বর মাসে যা ছিল ৫.৮ শতাংশ। গ্রামাঞ্চলে CPI মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে হয় ৭.৩ শতাংশ, যা গত পাঁচ বছরে সর্বোচ্চ।
মূল CPI মুদ্রাস্ফীতি - যার আওতায় পড়ছে না খাদ্য এবং তৈলজাত সামগ্রী - ডিসেম্বর ২০১৯-এ বেড়ে দাঁড়ায় ৩.৭৫ শতাংশ, যেখানে নভেম্বরে বৃদ্ধির হার ছিল ৩.৫ শতাংশ। এপ্রিল-ডিসেম্বর ২০১৯-২০'র ক্রমসঞ্চিত (cumulative) মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে হয় ৪.১৩ শতাংশ, যেখানে এপ্রিল-ডিসেম্বর ২০১৮'য় এই হার ছিল ৩.৭৩ শতাংশ।
গত বছরের গোড়া থেকেই ইঞ্চি ইঞ্চি করে বাড়ছিল খুচরো মুদ্রাস্ফীতি, কিন্তু ফেব্রুয়ারি ২০১৯ পর্যন্ত তা ছিল শূন্যের নীচে, এবং অগাস্ট ২০১৯ পর্যন্ত শূন্য ছাড়ালেও ছিল কমের দিকেই। তারপরেই তা লাফে লাফে বৃদ্ধি পেতে থাকে, এবং বিশেষ করে টম্যাটো ও পেঁয়াজের বাড়তে থাকা দাম হয়ে ওঠে গোদের ওপর বিষফোঁড়া, জানিয়েছে ইন্ডিয়া রেটিংস অ্যান্ড রিসার্চ।
২০১৯-এর ডিসেম্বরে সামগ্রিক খাদ্যস্ফীতি বেড়ে হয় ১৪.১২ শতাংশ, যেখানে ঠিক এক বছর আগে এই হার ছিল (-)২.৬৫ শতাংশ, এবং নভেম্বর ২০১৯-এ ছিল ১০.০১ শতাংশ। এর আগে খুচরো মুদ্রাস্ফীতির সর্বোচ্চ হার ছিল ৭.৩৯ শতাংশ, যা নথিভুক্ত হয় ২০১৪ সালে, যে বছর প্রথমবার ক্ষমতায় আসে মোদী সরকার।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মনেটারি পলিসি কমিটি মুদ্রাস্ফীতির যে ঊর্ধ্বসীমার সুপারিশ করেছে, তা ইতিমধ্যে ছাপিয়ে গিয়েছে দেশের খুচরো মুদ্রাস্ফীতি। রিজার্ভ ব্যাঙ্ককে কেন্দ্রীয় সরকারের বিধান, ৪ শতাংশের পরিসরে রাখতে হবে মুদ্রাস্ফীতি, ২ শতাংশ পর্যন্ত ওপর-নীচ হতে পারে।
আগামী ৬ ফেব্রুয়ারি তাদের পরবর্তী দ্বিমাসিক আর্থিক নীতি ঘোষণা করার কথা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের, যা অনেকাংশেই নির্ভর করে CPI-ভিত্তিক মুদ্রাস্ফীতির ওপর। ডিসেম্বরে তাদের আর্থিক নীতি ঘোষণার সময় রেপো রেট (দেশের ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থাকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে হারে ঋণ দেয়) অপরিবর্তিত রাখে আরবিআই, যেখানে প্রত্যাশা ছিল রেপো রেট ২৫ বেসিস পয়েন্ট কমার।
CARE Ratings-এর মুখ্য অর্থনীতিবিদ মদন সবনাভিস বলেছেন, "আগামী কয়েকমাসে কিছুটা কমতে পারে মুদ্রাস্ফীতি, যদিও তা উচ্চস্তরেই থাকবে। বেস পয়েন্ট না কমার প্রভাব পড়বে জানুয়ারি মাসে, এবং আগামী দুমাসে আরও বাড়বে। অন্যদিকে পেঁয়াজ এবং অন্যান্য সবজির দাম কিছুটা কমায়, যা জানুয়ারি মাসে কিছুটা বোঝা যাচ্ছে, হয়তো সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতির ওপর কিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।" তিনি আরও বলেন যে আগামীতে পলিসি রেটের কোনও পরিবর্তন করবে না আরবিআই, প্রধানত মুদ্রাস্ফীতির হার নির্ধারিত সীমার ওপরে থাকায়, এবং সরকারের সামনে আর্থিক চ্যালেঞ্জের কারণে।