কর বিতর্কের তালিকায় সাম্প্রতিকতম সংযোজন রুটি বনাম পরোটা। এর আগে মারিকোর প্যারাশুট কেশ তৈল নাকি শুধু নারকেল তেল, ফ্রায়াম কি পাপড় নাকি নয়, নেসলের কিটক্যাট বিস্কুট না চকোলেট, এবং ডাবরের লাল দন্ত মঞ্জন কেবল দাঁতের পাউডার নাকি ওষুধও বটে এ নিয়ে বিতর্ক হয়েছে।
২০১৯ সালের নভেম্বরে মধ্যপ্রদেশ অথরিটি ফর অ্যাডভান্স রুলিং (AAR)-এ আলিশা ফুড আবেদন করে জানতে চায় যে ফ্রায়ামকে পাপড় হিসেবে গণ্য করা হবে (৫ শতাংশ কর), নাকি অন্য খাদ্যদ্রব্য যা কোথাও নির্দিষ্ট নেই তেমন তালিকায় ফেলা হবে (১৮ শতাংশ কর)। কর্তৃপক্ষ একে ১৮ শতাংশ কর তালিকাভুক্ত করে।
অথরিটি ফর অ্যাডভান্সড রুলিংয়ের কর্নাটক বেঞ্চ শুক্রবার তাদের রায়ে জানিয়েছে রেডি টু ইট পরোটা খাকরা, চাপাটি বা রুটির থেকে আলাদা এবং কর বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন এর ফলে আরও শ্রেণিবিভাগের সমস্যা সামনে আসবে।
আরও পড়ুন, পরোটার ওপর জিএসটি বসলে রুটির ওপর নয় কেন?
শ্রেণিবিভাগের এই সমস্যা জিএসটি পূর্ববর্তী সময়ের। সংস্থাগুলি তাদের উৎপাদিত পণ্যকে কম করের শ্রেণিতে রাখার চেষ্টা করে যাতে তাদের নিজেদের লাভ বেশি থাকে। কারণ শুল্ক, পরিষেবা কর, ভ্যাট বা জিএসটি সবই অপ্রত্যক্ষ কর, ফলে তা পণ্যের দামের সঙ্গে যুক্ত।
অন্যদিকে কর আদায়কারীর আগ্রহ ঠিক উল্টো, তারা চায় পণ্যকে বেশিকরভুক্ত করতে যাতে করজনিত লাভ বেশি হয়। উৎপাদন সংস্থার তরফ থেকে এ ধরনের আবেদনের অন্য আরেকটি কারণ রয়েছে। বছরের শেষ দিকে করের দাবি বাড়িয়ে দেওয়া হতে পারে, যার জেরে জরিমানা ও সুদ সংস্থাগুলির উপর চেপে বসবে এবং সে কারণে স্পষ্ট হয়ে নেওয়া সংস্থাগুলির পক্ষে সুবিধাজনক।
যেহেতু আইনে অনেকগুলি সংশয়ের অবকাশ রয়েছে, অনেক বড় এফএমসিজি সংস্থার সঙ্গেই কর কর্তৃপক্ষের সংঘাত হয়েছে। এর অন্যতম উদাহরণ হল কিটক্যাট। ১৯৯৯ সালে নেসলে ইন্ডিয়া বনাম মুম্বইয়ের কমিশনার অফ সেন্ট্রাল এক্সাইজ মামলায় নেসলের পক্ষে রায় দিয়ে বলা হয়েছিল ওই উৎপাদিত সামগ্রী বিস্কুট, চকোলেট নয়। রায়ে বলা হয়েছিল চকোলেট কোকো দ্বারা নির্মিত হয়েইছিল, কিন্তু কোকো দ্বারা নির্মিত সকল দ্রব্যই চকোলেট নয়।
প্যারাশুট নারকেল তেল প্রস্তুতকারক সংস্থা মারিকোর সঙ্গেও রাজ্য সরকারগুলির সংঘাত বাধে যখন এই সংস্থা তাদের পণ্যকে নারকেল তেলের পর্যায়ভুক্ত করতে চায়, কারণ তাতে কর কম।
২০০৩ সালে ডাবর ইন্ডিয়ার সঙ্গে কর কর্তৃপক্ষের সংঘাত বাধে লাল দন্ত মঞ্জন টুথ পাউডার না ওষধি- সে নিয়ে। কর কর্তৃপক্ষ একে টুথ পাউডার তালিকাভুক্ত করে।
এই ধরনের সংঘাত কেবল অপ্রত্যক্ষ করের ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। ২০১১ সালের মে মাসে, আয়করের এক ট্রাইব্যুনাল তৎকালীন সময়ে বিসিসিআইয়ের ভারতীয় দলভুক্ত ক্রিকেটার শচীন তেন্ডুলকরকে তাঁর বিজ্ঞাপন থেকে সংগৃহীত করযুক্ত আয়ে ছাড়ের জন্য দাবির অনুমতি দেয়।
তেণ্ডুলকরের বক্তব্য ছিল তিনি আয়কর আইনের ৮০ আরআর ধারায় ছাড়ের দাবি করেছেন কারণ তিনি বিজ্ঞাপনে অভিনেতা হিসেবে অবতীর্ণ হন। ২০০১-০২ থেকে ২০০৪-০৫ অর্থবর্ষে যেহেতু ক্রিকেট খেলাই তাঁর মূল পেশা ছিল, সে কারণে তাঁকে অভিনেতা হিসেবে গণ্য করা যাবে না বলে রায় গিয়েছিলেন আয়কর বিভাগের মুখ্য কমিশনার। এরই বিরুদ্ধে আপিল করেছিলেন শচীন।
২০১১ সালে দুই সদস্যের ট্রাইব্যুনাল কমিশনারের রায় খারিজ করে এবং তেণ্ডুলকরের আবেদনে সাড়া দেয়। এর ফলে স্পোর্টস স্পনশরশিপ ও বিজ্ঞাপন থেকে ওই সময়ে আয় করা সমস্ত অর্থের উপর কর ছাড়ের সুযোগ দেওয়া হয় তাঁকে।
কর বিশেষজ্ঞরা বলছেন করের হার যক কম হবে ততই, বিশেষ করে এফএমসিজি পণ্যর ক্ষেত্রে সংস্থাগুলির লাভের সম্ভাবনা বেশি হবে। মুম্বইয়ের এক কর বিশেষজ্ঞের কথায়, এর সেরা উদাহরণ টুথপেস্টের জিএসটি ২৮ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৮ শতাংশ করা।
কিন্তু করের হারে এত রকমফেরের জন্যই পর্যায়ভুক্তি নিয়ে এত বিবাদ। কর বিশেষজ্ঞ অভিষেক জৈনের কথায়, করের স্ল্যাবে এত ব্যাপকতা এবং পরিচ্ছন্নতার অভাবের জন্যই পর্যায়ভুক্তি নিয়ে এত বিবাদ। সে কারণেই সংস্থাগুলি উদ্বিগ্ন থাকে যে কর কর্তৃপক্ষ পরে করের দাবি বাড়াতে পারে। এ ধরনের বিবাদ জিএসটি পূর্ববর্তী সময়েও ছিল, কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হারগুলি মোটামুটি স্থির হয়েছে এবং বিবাদের পরিমাণ কমেছে। জিএসটির ক্ষেত্রেও স্ল্যাব কমালে এ ধরনের বিবাদ কমতে পারে।
সরকার বলেছে করের স্ল্যাব কমানোর সমস্যা হল, ভারতের মত দেশে আয়ের বিভিন্নতা। ফলে বিলাসদ্রব্য ও প্রয়োজনীয় এবং আবশ্যিক দ্রব্য এক পর্যায়ে ফেললে সমস্যার সমাধান হবে না।