Advertisment

টাকার দামে রেকর্ড পতন, খুব শিগগির বাড়তে পারে আরবিআই-এর সুদের হার

মার্কিন মুদ্রার পাশাপাশি যদি প্রতিদ্বন্দ্বী অর্থনীতির চাহিদা বাড়ত, সেক্ষেত্রে টাকার দাম আরও পড়লেও চিন্তার তেমন কারণ ছিল না। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। মার্কিন ডলারের চাহিদাই কেবল চড়চড় করে বাড়ছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

বৃহস্পতিবারও মার্কিন ডলারের তুলনায় কমছে ভারতীয় টাকার দাম

শেয়ার বাজার খোলার পর পরই আশঙ্কায় থাকেন ভারতের ফরেন এক্সচেঞ্জ বা ফরেক্স ডিলাররা, আজ কতটা পড়বে টাকার দাম? এবং হ্যাঁ, বিগত কয়েকদিনের ট্র্যাডিশন মেনে বৃহস্পতিবারেও পড়ল টাকার দাম। এদিন সকালে মার্কিন ডলার পিছু ভারতীয় টাকার দাম দাঁড়াল ৭৩ টাকা ৭৭ পয়সা। বুধবার বাজার বন্ধের সময় ডলার পিছু টাকার দাম ছিল ৭৩ টাকা ৩৪ পয়সা।

Advertisment

এতদিন একদিকে একটানা দেশ জুড়ে বাড়ছিল পেট্রোল-ডিজেলের দাম, অন্যদিকে মার্কিন ডলার পিছু কমছিল ভারতীয় টাকার দাম। বৃহস্পতিবার দুপুরে সাংবাদিক বৈঠক করে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ঘোষণা করেছেন, লিটার পিছু ২.৫০ টাকা কমানো হয়েছে তেলের দাম। লিটার পিছু ১.৫০ টাকা আবগারি শুল্ক কমিয়েছে কেন্দ্র। বাকি ১ টাকা কমিয়েছে তেল পরিশোধনকারী সংস্থাগুলি।

টাকার দাম পড়া নিয়ে কেন্দ্রকে ব্যঙ্গ করে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী এ দিন টুইট করে বলেন, টাকার দাম পড়ার খবর আর 'ব্রেকিং' নয়, 'ব্রোকেন'।

সপ্তাহের শুরুতেই সারা দেশে রান্নার গ্যাসের দাম এক লাফে অনেকটা বেড়েছে। পাশাপাশি, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর টাকার এতটা দাম পড়ার নজির নেই। ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলাররাও বলছেন, মার্কিন ডলারের চাহিদা এমনিতেই বাড়ছে। বিদেশ থেকে মার্কিন ডলারের বিনিময়ে তেল কিনতে হয় বিভিন্ন সংস্থাকে। এছাড়া চিনের সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক খারাপ হওয়ার ফলে তারও ছাপ পড়ছে আন্তর্জাতিক বাজারে।

দেশের অর্থনৈতিক বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন, টাকার দাম কমার ফলস্বরূপ আরবিআই বাড়াতে পারে ঋণের ওপর সুদের হার। গত সপ্তাহেই রেপো রেট (যে হারে দেশের বাকি ব্যাঙ্কগুলোকে ঋণ দেয় আরবিআই) ২৫ বেসিস পয়েন্ট বাড়িয়েছে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক। বর্তমানে রেপো রেটের পরিমাণ ৬.৫০। এই সপ্তাহেও টাকার দাম ক্রমশ কমতে থাকায় খুব শিগগির বেসিস পয়েন্ট বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে আরবিআই এর। ব্যাঙ্কগুলিকে চড়া হারে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের কাছ থেকে ঋণ নিতে হলে স্বভাবতই ব্যাঙ্কের সুদের হারও বাড়বে। অর্থাৎ সাধারণ মানুষ যদি ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিতে চান, শোধ করতে হবে চড়া সুদে।

অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেছেন, টাকার দাম পড়ার পেছনে সবটাই ‘বাহ্যিক কারণ’। আন্তর্জাতিক সংকটকেও দায়ী করেছেন তিনি। আশ্বাস দিয়েছেন, দেশের আভ্যন্তরীণ অর্থনীতি মজবুত রয়েছে। তবে শেয়ার বাজার বিশেষজ্ঞরা প্রমাদ গুনছেন অন্যখানে। তাঁরা বলছেন, মার্কিন মুদ্রার পাশাপাশি যদি প্রতিদ্বন্দ্বী অর্থনীতির চাহিদা বাড়ত, সেক্ষেত্রে টাকার দাম আরও পড়লেও চিন্তার তেমন কারণ ছিল না। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। মার্কিন ডলারের চাহিদাই কেবল চড়চড় করে বাড়ছে।

টাকার দামের ক্রমাগত পতনে চিন্তিত দেশের অর্থনীতিবিদরা। অধিকাংশের বিশ্লেষণ বলছে, একদিকে যেমন মার্কিন ডলারের চাহিদা বাড়ছে, অন্যদিকে অপরিশোধিত তেলের দাম বাড়ছে আন্তর্জাতিক বাজারে। স্বভাবতই ভারতের তেল পরিশোধনকারী সংস্থাকে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে মার্কিন ডলারের বিনিময়েই কিনতে হচ্ছে তেল। টাকার দাম পড়ে যাওয়ার পেছনে রয়েছে এইসব কারণ। আন্তর্জাতিক বাজারে তেল সরবরাহকারী দেশগুলির মধ্যে ইরান অন্যতম। অথচ সেই ইরানের তেল সরবরাহের ওপরেই নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। সেক্ষেত্রে তেলের মন্দা দেখা দিতে পারে, এই আশঙ্কা থেকে সাত তাড়াতাড়ি বেশি পরিমাণ অপরিশোধিত তেল কিনতে চাইছে বাকি দেশ। তাই ক্রমশ চাহিদা বাড়ায় দাম বাড়ছে তেলেরও। স্বাভাবিকভাবেই মার্কিন ডলারের তুলনায় পড়ছে ভারতীয় টাকার দাম।

indian currency
Advertisment