তিন ব্যাঙ্কের সংযুক্তির ব্যাখ্যাসমূহ

লক্ষ্য হল, সংযুক্ত ব্যাঙ্কটিকে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম ব্যাঙ্ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। এদের মোট ব্যবসার পরিমাণ ১৪.৮২ লক্ষ কোটি টাকা।

লক্ষ্য হল, সংযুক্ত ব্যাঙ্কটিকে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম ব্যাঙ্ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। এদের মোট ব্যবসার পরিমাণ ১৪.৮২ লক্ষ কোটি টাকা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি

২৭ বছরের বেশি সময় আগে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের তৎকালীন গভর্নরের নেতৃত্বে একটি কমিটি প্রথমবার সরকারি বা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সংখ্যা ছাঁটার প্রস্তাব করেছিল। সে কমিটি তৈরি হয়েছিল ১৯৯১ সালে, মনমোহন সিংয়ের নির্দেশে। তখন মনমোহন ছিলেন দেশের অর্থমন্ত্রী। তিনি ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলির পুনর্বিন্যাসের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। প্রস্তাব ছিল, দু ডজন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক না-রেখে স্টেট ব্যাঙ্ক সহ তিন-চারটি আন্তর্জাতিক মানের ব্যাঙ্ক রাখা হোক।

Advertisment

টাকার অবমূল্যায়নের বাজারে দাঁড়িয়ে গত সোমবার সরকার তিনটি ব্যাঙ্কের সংযুক্তিকরণের কথা ঘোষণা করেছে। এই তিনটি ব্যাঙ্ক হল বিজয়া ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্ক অফ বরোদা এবং দেনা ব্যাঙ্ক। এই সংযুক্তিকরণের লক্ষ্য হল, সংযুক্ত ব্যাঙ্কটিকে দেশের তৃতীয় বৃহত্তম ব্যাঙ্ক হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। এদের মোট ব্যবসার পরিমাণ ১৪.৮২ লক্ষ কোটি টাকা। সারা দেশে এ তিনটি ব্যাঙ্কের মোট ৯,৬০০ শাখা রয়েছে।

যুক্তি

Advertisment

দীর্ঘদিন যাবৎ দেশের অধিকাংশ ব্যাঙ্কই সরকার নিয়ন্ত্রিত এবং তারা সকলেই মূলত একই ধরনের ব্যবসা করে থাকে। এবং একই ধরনের গ্রাহক নিয়ে তারা পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রতিযোগিতায় রত। কৌশল হিসেবে এ ব্যাপারগুলো যুক্তিসম্মত নয়। এর ফলে সরকার যে পরিমাণ পুঁজি বিনিয়োগ করছে, তার থেকে তুলনামূলক ভাবে কম ফেরৎ পাচ্ছে, একই ফান্ড নিয়ে পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতাও বাড়ছে। সরকার এবং ব্যাঙ্ক নিয়ন্ত্রক সংস্থা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের মুখে দাঁড়িয়ে ব্যাঙ্কিংয়ের ক্ষেত্রে পরিবর্তনের ব্যাপারে জোর দিয়েছে, যাতে নির্দিষ্ট সময়ান্তরে সরকার পুঁজি বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়াতে পারে, ব্যাঙ্কিং সেক্টরে সমন্বয়সাধন ঘটে এবং ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে খণ্ডীভবন রোধ করা যায়।

ইউপিএ সরকারের প্রথম দিকে দুটি ব্যাঙ্কের সংযুক্তির কথা উঠেছিল, কিন্তু রাজনৈতিক বাধা আসতে পারে এ আশঙ্কা.য় সরকার সে পদক্ষেপ আর করেনি। ২০১৬ সালের শেষ দিকে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বেশ কিছু ব্যাঙ্কের মোটা অঙ্কের অনাদায়ী দেনা সহ বিভিন্ন বিষয়ের কথা উল্লেখ করে ব্যাঙ্কিং সেক্টরে সমন্বয়সাধনের কথা বলেছিলেন। সেই মোতাবেক, গতবছর ব্যাঙ্ক সংযুক্তিকরণের বিষয়টি অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রীর নেতৃত্বে কয়েকজন সিনিয়র মন্ত্রীদের নিয়ে একটি বিকল্প পদ্ধতির কথা বলে। সোমবারের ঘোষণা সেই প্রস্তাবেরই প্রথম পর্ব।

তখন ও এখন

ইউপিএ-র মতো কোয়ালিশন সরকারের ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রস্তাব বেশ কিছুটা অসুবিধাজনক ছিল। সে তুলনায় সংখ্যার দিক থেকে এনডিএ অনেকটাই শক্তিশালী ছিল, এবং স্টেট ব্যাঙ্কের পাঁচটি সাবসিডিয়ারি ব্যাঙ্কের সংযুক্তিকরণের অভিজ্ঞতা তাদের আরও বেশি শক্তি জুগিয়েছে। গত বছর স্টেট ব্যাঙ্কের পাঁচটি সাবসিডিয়ারিকে সংযুক্তির পর, তাদের ব্যবসার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৪ লক্ষ কোটি টাকা, যা অন্য ব্যাঙ্কের থেকে অনেকটাই বেশি। তার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ, বেশ কয়েকটি ব্যাঙ্কের দুর্বল আর্থিক পরিস্থিতি আরেকটি বড় যুক্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০০৭-০৮ সালে যে চেষ্টা করা হয়েছিল, এখানেই এখনকার পরিস্থিতি তার চেয়ে অনেকটাই পরিবর্তিত।

সে সময়ে যে দুই ব্যাঙ্কের সংযুক্তির কথা ভাবা হয়েছিল, সে দুটি ব্যাঙ্কই যথেষ্ট ক্ষমতাসম্পন্ন, কিন্তু এবারে তিনটি ব্যাঙ্কের মধ্যে দেনা ব্যাঙ্কের হাল শোচনীয়। এর আগে সরকার বহুবার বলেছে, ব্যাঙ্কগুলি যদি নিজেরা সংযুক্তির পথে পা বাড়ায়, ব্যাঙ্কের বোর্ড যদি তা অনুমোদন করে, সরকারের পক্ষে সেটাই কাঙ্ক্ষিত। এবারে সরকার নিজেই এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছে, এবং রিপোর্ট অনুযায়ী সে সিদ্ধান্তের কথা ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে অনেক পরে।

পূর্ববর্তী উদাহরণ

বছর ১৫ আগে, বেসরকারি ঋণদাতা সংস্থা জিটিবি যখন সমস্যায় পড়েছিল, তখন নিয়ন্ত্রক সংস্থা এবং রাষ্ট্রায়ত্ত ওরিয়েন্টাল ব্যাঙ্ক অফ কমার্স এগিয়ে এসেছিল। তা ছাড়াও ইউনাইটেড ওয়েস্টার্ন ব্যাঙ্ক এবং আইডিবিআই, ব্যাঙ্ক অফ রাজস্থান এবং আইসিআইসিআই ব্যাঙ্ক, এইচডিএফসি এবং ব্যাঙ্ক অফ পাঞ্জাবের উদাহরণও রয়েছে। কিন্তু পরিমাণগত দিক থেকে দেখলে এবারের প্রস্তাব এসবকে ছাপিয়ে যাচ্ছে।

সুবিধাসমূহ

ঐক্যবদ্ধ হিসেবে কাজ করার সুবিধার্থে সাধারণভাবে সংযুক্তির কথা বলা হয়ে থাকে। সেটা নানা কারণেই হতে পারে। এক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে, বিজয়া ব্যাঙ্কের শক্তি রয়েছে দক্ষিণ ভারতে, অন্য দিকে দেনা ব্যাঙ্ক ও ব্যাঙ্ক অফ বরোদার মূল শক্তি পশ্চিম ভারতে। এবারের সংযুক্তির ফলে নতুন চেহারায় নতুন গ্রাহকের কাছে পৌঁছতে পারা সম্ভাবনা প্রচুর। সরকারি এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থার দিক থেকে দেখলে, সংযুক্ত নতুন ব্যাঙ্কের অনুৎপাদক সম্পদের পরিমাণ আনুপাতিক হারে কমবে। অনুৎপাদক সম্পদের বর্তমান পরিমাণ, দেনা ব্যাঙ্কের ১১.০৪ শতাংশ, ব্যাঙ্ক অফ বরোদার ৫.৪০ শতাংশ, এবং বিজয়া ব্যাঙ্কের ৪.১০ শতাংশ।

পরবর্তী পদক্ষেপ

তিনটি ব্যাঙ্কের বোর্ডই এবার নিজেদের মধ্যে মিলিত হয়ে সরকারি প্রস্তাবে অনুমোদন দেবে। সরকারই যেহেতু এ তিনটি ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে মূল শেয়ারহোল্ডার, ফলে এ অনুমোদন পেতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয়।

নতুন ব্যাঙ্কের বিশ্বাসযোগ্যতা নতুন হিসেবে তার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। তা কর্মসংস্কৃতিই হোক বা কাজের ধরন। একটি সাধারণ প্রযুক্তিক্ষেত্রে কাজ করার সুবিধা পাবে এই তিনটি ব্যাঙ্ক, যেরকম সুবিধা পেয়েছিল স্টেট ব্যাঙ্ক ও তার সাবসিডিয়ারি ব্যাঙ্কগুলি। মানব সম্পদের বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কর্মীদের প্রত্যাশা ও আশা আকাঙ্ক্ষা নয়া ম্যানেজমেন্টের কাছে পরীক্ষার বিষয় হয়ে উঠবে। আরেকটি বড় পরীক্ষা হল নতুন সিইও বাছাই। এমন একজনকে এ ক্ষেত্রে বাছাই করতে হবে, যিনি নেতৃত্ব দিতে সক্ষম, এবং তাঁকে একটা পরিমিত সময় দিতে হবে। এ ছাড়া চিন্তার জায়গা থাকবে ইউনিয়ন এবং শেয়ারহোল্ডারদের নিয়েও।