Advertisment

ভারতে ক্ষতবিক্ষত ভোডাফোন আইডিয়া, হাত গোটাচ্ছে মূল ব্রিটিশ সংস্থা?

জেমস র‍্যাটজারের মতন বিশ্লেষকরা লিখতে শুরু করেছেন যে "সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি যা হতে পারে বলে মনে হচ্ছে, তা হলো ভারতে কোম্পানির কার্যকলাপ একেবারেই শূন্যের কোঠায় এসে দাঁড়াবে"।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
idea vodafone india

প্রতীকী ছবি। অলঙ্করণ: অভিজিৎ বিশ্বাস

নিরন্তর, নির্মম 'প্রাইস ওয়ার', যার মোটামুটি বাংলা করলে দাঁড়ায় 'মূল্য যুদ্ধ'। গত তিন বছর ধরে ভারতের মোবাইল পরিষেবার বাজারে ক্রমাগত এই যুদ্ধ করে, এবং স্পেকট্রামের বিল মেটানোর দায় ঘাড়ে নিয়ে, এবার খাদের কিনারায় এসে দাঁড়িয়েছে ভোডাফোন গ্রুপ পিএলসি। এখন জানা যাচ্ছে, তাদের ভারতীয় উদ্যোগের আনুমানিক মূল্য প্রায় ১ বিলিয়ন ইউরো (৭,৯১৫ কোটি ভারতীয় টাকা) কমিয়ে দিতে চলেছে এই ব্রিটিশ বহুজাতিক সংস্থা।

Advertisment

যে কোনও সম্পত্তির আনুমানিক মূল্যের এই ধরনের হ্রাস পাওয়াকে পরিভাষায় বলা হয় 'রাইট ডউন'। সুতরাং ভারতে ভোডাফোন আইডিয়া লিমিটেড, যাতে ভোডাফোনের অংশীদারি ছিল ৪৫ শতাংশ, হারাতে চলেছে এই ১ বিলিয়ন ইউরো। এর ফলে ভোডাফোন আইডিয়াতে ভোডাফোনের বিনিয়োগের পরিমাণ দাঁড়াবে ৬০০ মিলিয়ন ইউরো (আন্দাজ ৪,৭৫২ কোটি ভারতীয় টাকা), যা সংস্থার অর্ধ-বার্ষিক ফলাফল প্রকাশের সময় ঘোষিত হতে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

ভারতে ৩০০ মিলিয়ন (৩০ কোটি) গ্রাহককে পরিষেবা প্রদান করে ভোডাফোন, যা তাদের আন্তর্জাতিক গ্রাহক সংখ্যার প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ। কিন্তু ভারতে তাদের টালমাটাল অবস্থা বর্তমানে বোঝা হয়ে দাঁড়াচ্ছে সংস্থার পক্ষে, যেহেতু বিশ্বের অন্যান্য বাজারেও কম খরচে পরিষেবা প্রদানকারী প্রতিদ্বন্দ্বী এবং নেটওয়ার্কের খরচ নিয়ে আপাতত নাজেহাল ভোডাফোন।

শেয়ারহোল্ডারদের ডিভিডেন্ড কমিয়ে দেওয়া সত্ত্বেও তাঁদের দলে রাখার চেষ্টা করে চলেছেন ভোডাফোনের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার (সিইও) নিক রিড। তাঁর নজর আপাতত ইউরোপ এবং আফ্রিকার দিকে, যেখানে ব্যবসা সুরক্ষিত রাখার সবচেয়ে বেশি সুযোগ দেখছেন তিনি।

ইতিমধ্যেই ভারতের ব্যবসায় আর গ্রুপের টাকা বিনিয়োগ না করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তিনি। উল্লেখ্য, মে মাসের পর থেকে ভোডাফোনের ভারতীয় ব্যবসার শেয়ারের দাম কমেছে দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি। অক্টোবর মাসে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট রায় দেয় যে এয়ারওয়েভ লাইসেন্স ফি বাবদ ৪ বিলিয়ন ডলার (আন্দাজ ২৯ হাজার কোটি ভারতীয় টাকা) মেটাতে হবে ভোডাফোন আইডিয়াকে।

এমনিতেই গত তিন বছরে ভোডাফোন গ্রুপ কয়েক হাজার কোটি টাকার 'রাইট ডাউন' বহন করেছে। বর্তমানে ১৪ বিলিয়ন ডলার (১০ হাজার কোটি ভারতীয় টাকার বেশি) ঋণের বোঝায় জর্জরিত ভোডাফোন আইডিয়া। অবস্থা এমনই যে জেমস র‍্যাটজারের মতন বিশ্লেষকরা লিখতে শুরু করেছেন যে "সবচেয়ে খারাপ পরিস্থিতি যা হতে পারে বলে মনে হচ্ছে, তা হলো ভারতে কোম্পানির কার্যকলাপ একেবারেই শূন্যের কোঠায় এসে দাঁড়াবে"। এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন ভোডাফোনের এক মুখপাত্র।

প্রাইস ওয়ার, বা মূল্য যুদ্ধ

এই সমস্যার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ পরিচয় রয়েছে রিডের, কারণ ২০১৮ সালের অক্টোবর মাসে সিইও পদে যোগ দেওয়ার আগে তিনি ভোডাফোনের ভারতীয় ব্যবসার বোর্ডের সদস্য ছিলেন।

প্রতিদ্বন্দ্বী রিলায়েন্স জিও ইনফোকম লিমিটেড, যার অর্ধেক মালিক হলেন মুকেশ আম্বানি, ভারতের বাজারে প্রবেশ করে ২০১৬ সালে। তারপর থেকেই শুরু হয়েছে ভোডাফোন এবং ভারতী এয়ারটেলের সঙ্গে নিরন্তর দামের লড়াই।

ভারতে আরও একটি স্পেকট্রাম নিলাম আসন্ন, এ সময় ভোডাফোন আইডিয়া হাবুডুবু খাচ্ছে। এ অবস্থায় রিড মত বদল করে ভারতের ব্যবসাকে আরও একবার উদ্ধার করার সিদ্ধান্ত নেন কিনা, সেদিকে নজর রাখছেন বিনিয়োগকারীরা। অনেক বিশেষজ্ঞের মতে, পরিকাঠামোর ক্ষেত্রে তাদের অন্যান্য স্থানীয় সম্পত্তি ভাঙিয়ে নতুন করে অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করতে পারে ভোডাফোন আইডিয়া।

vodafone IDEA
Advertisment