অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র শারীরিক অসুস্থতার কারণে এ বার বাজেটে পেশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। আর কয়েক মাসের মধ্যেই রাজ্যে বিধানসভা ভোট। আগামী তিন সপ্তাহের মধ্যেই ভোটের নির্ঘণ্টও ঘোষণা করতে পারে নির্বাচন কমিশন। ফলে তিন মাসের জন্য ‘ভোট অন অ্যাকাউন্ট’ পেশ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
মুখ্যমন্ত্রী বাজেট বক্তব্য পেশ করাতের শুরুতেই বিরোধী বিজেপি বিধায়করা স্লোগান গিতে শুরু করেন। মনোজ টিগ্গার নেতৃত্বে ওয়ালে নেমে আসেন তাঁরা। হইহট্টগোলে বক্তৃতা থামিয়ে দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্পিকার বিরোধী বিধায়কদের সান্ত হতে বলেন। নয়তো কঠোর পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দেন। পরে বিজেপি বিধায়করা সভা ছেড়ে বেড়িয়ে যান।
এরপর ফের বক্তব্য শুরু করেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, 'আমি নিজেই ৫টা রেল বাজেট পেশ করেছি। বাজেটে সময়ে কেউ কোনও কথা বলে না। বিজেপি এই সদস্যরা কিছু জানে না। বিতর্ক করন, আলোচনায় অংশ নিন। তা না করে ৪-৫ জন মিলে এই করলে বোঝা যাচ্ছে কী অবস্থা হবে।'
মুখ্যমন্ত্রীর বাজেট বক্তব্য আগেই বয়কট করার কথা জানিয়েছিল কংগ্রেস-বাম বিধায়করা।
বাজেটে কী ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী?
- মমতা বলেন, 'করোনা অতিমারী, আম্ফান ও কেন্দ্রীয় বঞ্চনার হয়েছে বাংলা। বিশ্ব মানচিত্র বাংলা হয়ে উঠেছে নতুন গন্তব্য। অশোকনগরে তেলে নতুন অর্থনৈতিক দিক খুলেছে। অন্ডালে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। নিউটাউনের সিলিকন ভ্যালি। বাংলা দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার অর্থনৈতিক দিক হতে চলেছে।'
- মুখ্যমন্ত্রী বলেন, '১০০ দিনে কাজে বাংলা এক নম্বর। সংখ্যালঘু বৃত্তি প্রদানে এক নম্বর। ১০০ দিনে প্রকল্পে ১.১ কোটি মানুষকে কাজ দেওয়া হয়েছে। ৯.২৩ লাখ নতুন পাকা বাড়ি তৈরি হয়েছে বাংলা আবাস যোজনা প্রথম স্থান পেয়েছে। ২০ হাজার কিমি রাস্তা নির্মাণ করে দেশের মধ্যে প্রথম। রাজ্যের রাজস্ব আদায় ২.৯ গুন বৃদ্ধি পেয়েছে।'
- মমতা বলেন, 'নেপালি, হিন্দ, উর্দু, কামতাপুরী জন্য ১০০টি নতুন স্কুল। দেড় বাজার প্যারা টিচার। চা বাগান এলাকায় ১০০টি নতুন স্কুল। ৩০০ জন প্যারা টিচার থাকবে। রাজবংশী ভাষায় ২০০টি বিদ্যালয়কে সরকারি অনুমোদন। আর্থিক ভাবে সাহায্যের জন্য ৫০ কোটি টাকা। তফশিলি জাতি ও উপজাতিদের জন্য ২০ লাখ ঘর নির্মাণ। আগামী ৫ বছরের জন্য আরও নতুন বাড়ি নির্মান হবে। এর জন্য দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ হবে। কৃষক বন্ধু প্রকল্পে ৫ থেকে বেড়ে ৬ হাজার টাকা।'
- 'কৃষক সম্মান নিধি প্রকল্পে সবাইকে নিয়ে আসা হবে। কেন্দ্রীয় সরকারকে বলা হয়েছে। ২৫ হাজার কোটি ঋনের ঘোষণা করা হয়েছে। মাতৃবন্দনা নামে নতুন কর্মসূচি করা হয়েছে। আরও স্বনির্ভরত গোষ্ঠীকে এর আওতায় নিয়ে আসা হবে। ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দা করা হবে।'
- 'নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর সম্মানে আজাদ হিন্দ স্মারক নির্মাণ করছি। নিউটাউনে হবে এই স্মারক। এর জন্য ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দা। প্রতিটি জেলায় জয় হিন্দ ভবন নির্মাণ হবে। কলকাতা পুলিশে নতুন নেতাজি ব্যাটেলিয়ান। এর জন্য ১০ কোটি টাকা বরাদ্দ।'
- 'নেতাজি রাজ্য যোজনা কমিশন গঠন করা হবে। পশ্চিমবঙ্গে ১০ কোটি মানুষকে স্বাস্থ্যসাথীতে নিয়ে আসা হয়েছে। সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চিকিৎসা বিনামূল্যে পেতে পারেন। এই প্রকল্প প্রতি বছর ধারাবাহিক ভাবে চলবে। এর জন্য দেড় হাজার কোটি কাটা বরাদ্দ। দুয়ারে সরকার ও পাড়ায় সমাধান বছরে দু বার করে হবে। মানুষের কাছে বিভিন্ন ভাবে পৌছানোর জন্য এই সরকার প্রশাসনিক সভা করছে।'
- 'আইএএস ও আইপিএস পরীক্ষার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণকেন্দ্র। আগামী অর্থবর্ষ থেকে প্রত্যেক দ্বাদশ শ্রেণীর পড়ুয়াকে ট্যাব দেওয়া হবে।'
- যাত্রী পরিবহণে সব যানবাহনের ক্ষেত্রে ১ জানুয়ারি, ২০২১ থেকে ৩০ জুন, ২০২১ পর্যন্ত রোড ট্যাক্স সম্পূর্ণ মকুবের ঘোষণা মুখ্যমন্ত্রীর।
- 'পথশ্রী প্রকল্প ১০ হাজার কিমি রাস্তা তৈরি হবে। নন্দীগ্রামে হলদিয়ার মধ্যে সংযোগকারী সেতু তৈরি করা হবে। কলকাতা থেকে বাসন্তী পর্যন্ত ৪ লেনের রাস্তা।'
- মমতা বলেন, 'দেড় হাজার পার্শ্ব শিক্ষক নিয়োগ। দরিদ্র মাঝিদের আগামী অর্থবর্ষ থেকে হাজার টাকা করে ভাতা দেওয়া হবে।'
- 'দুয়ারে সরকার ও পাড়ায় পাড়ায় সমাধান কর্মসূচি এখনই শেষ হয়ে যাচ্ছে না। এবার থেকে এই দুটি কর্মসূচি বছরের দু'বার করে হবে।'
- ইএম বাইপাস থেকে নিউটাউ, মা থেকে বালিগঞ্জ, গড়িয়া থকে যাদবপুর, পাইক পাড়া থেকে শিয়ালদহ স্টেশন পর্যন্ত উড়ালপুল, টালা থেকে ডানলপ ছ'লেনের উড়ালপুল হবে। কলকাতা থেকে বাসন্তী চার লেনের রাস্তা। পার্ক সার্কাস পথচারীদের জন্য স্কাইওয়াক।
- পথশ্রী প্রকল্প ১০ হাজার কিমি রাস্তা তৈরি হবে। নন্দীগ্রামে হলদিয়ার মধ্যে সংযোগকারী সেতু তৈরি করা হবে।
- সেচের জন্য ১০০ কোটি বরাদ্দ।
- তাজপুরে গভীর সমুদ্র বন্দর, অশোকনদরে গ্যাস উত্তোলন প্রকল্প, পুরুলিয়ার রঘুনাথপুরে শিল্প নগরী, পর্যন্ত শিল্পের বিকাসে বিশেষ উদ্যোগ।
- ১০ বছরে ৪ লক্ষ পদে নিয়োগ। শূন্য পদ পূরণে আরও উদ্যোগ নিয়েছে রাজ্য সরকার। ধোষণা মুখ্যমন্ত্রীর।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন