আয়কর বিভাগের নোটিশ পেয়ে ঘাবড়ে যান না, এমন করদাতা কমই আছেন। নানা কারণেই আপনাকে নোটিশ পাঠাতে পারে ইনকাম ট্যাক্স বিভাগ, কিন্তু প্রতি ক্ষেত্রেই সাবধানে পা ফেলা উচিত আপনার। দৈবাৎ কখনও নোটিশ পেলে কিছু করার আগে নোটিশের কারণ স্পষ্টভাবে বুঝে নেওয়া খুব জরুরি। এই প্রতিবেদনে কিছু প্রচলিত কারণ আলোচনা করব আমরা, যাতে নোটিশ পেলে কী করবেন, তা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে সুবিধে হয়।
দেরিতে ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন (ITR) জমা দিলে
২০১৯-২০ করবর্ষের জন্য ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ইতিমধ্যেই বাড়িয়ে ৩১ অগাস্ট করা হয়েছে। যদি এই সময়ের মধ্যে কর জমা না দেন, তবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তা জমা করার তাগাদা সমেত আয়কর বিভাগের নোটিশ পেতে পারেন। এছাড়াও মনে রাখবেন, দেরিতে কর জমা দিলে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা হতে পারে। অতএব সময়ের মধ্যে রিটার্ন ফাইল করাই শ্রেয়।
টিডিএস-ফর্ম ২৬ এএস না মিললে
আপনার ট্যাক্স ডিডাক্টেড অ্যাট সোর্স (টিডিএস)-এর পরিমাণ ফর্ম ২৬ এএস (26 AS)-এর সঙ্গে মেলা উচিত। কিন্তু কিছু ক্ষেত্রে নাও মিলতে পারে। সেক্ষেত্রে এই না মেলার যথার্থ কারণ থাকতে হবে, যেমন গত বছরের আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতি, বা আয়ের একাধিক উৎস থাকলে।
যাই হোক, কোনোরকম অসঙ্গতি দেখলে আয়কর বিভাগ তার কৈফিয়ত চেয়ে আপনাকে নোটিশ পাঠাতে পারে অনুচ্ছেদ নং 143(1A)-র আওতায়। জবাবে আপনি ITR জমা দেওয়ার পোর্টালে লগ ইন করে অসঙ্গতির কারণ বিস্তারিত জানাতে পারেন, তথ্যপ্রমাণ সমেত। কোথাও আটকে গেলে আয়কর বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিতে পারেন।
ইনকাম ট্যাক্স রিটার্নে কোনও আয় না দেখালে
আপনি নিজের আয় যাই ঘোষণা করুন, আয়কর বিভাগ তা বিশ্বাস নাও করতে পারে। করদাতার আয় সংক্রান্ত তথ্য চাইতে পারে ব্যাঙ্ক, আর্থিক সংস্থা, মিউচুয়াল ফান্ড সংস্থা ইত্যাদির কাছ থেকে। এবং এতে যদি আবিষ্কার হয় যে আপনি নিজের আয় সম্পর্কিত সমস্ত তথ্য খোলসা করেন নি, তবে আপনাকে অনুচ্ছেদ নং 143(1A)-র আওতায় নোটিশ পাঠাতে পারে। সুতরাং ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়ার আগে সাবধান হন, নিজের আয়ের সমস্ত উৎস আগে থেকেই যাচাই করে নিন।
আপনার মাইনে বা বেতন থেকে আয় ছাড়াও বাড়ি থেকে আয়, ক্যাপিটাল গেইনস, লভ্যাংশ বা ডিভিডেন্ড, পারিবারিক পেনশন এবং কিছু বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত অর্থ (যেমন ফিক্সড ডিপোজিট থেকে সুদ), এমনকি আপনার সেভিংস অ্যাকাউন্ট থেকে প্রাপ্ত সুদও মাথায় রাখবেন ইনকাম ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেওয়ার সময়।
মন দিয়ে পড়বেন আপনার ব্যাঙ্ক স্টেটমেন্ট, হিসেব রাখবেন সমস্ত ইনভেস্টমেন্টের, এবং নিশ্চিত করবেন যাতে রিটার্ন জমা করার সময় আয় সংক্রান্ত কোনোরকম ভুলত্রুটি না হয়। যদি কোনও ভুল না করে থাকেন, তবে আয়ের তথ্যপ্রমাণ সমেত নোটিশের জবাব দিতে পারবেন। রিটার্নে কোনোরকম অসঙ্গতি থাকলে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে বকেয়া ট্যাক্স জমা দিতে হবে।
আপনার ITR-এর স্ক্রুটিনি হলে
আজকাল ইনকাম ট্যাক্স দফতর কোনও পূর্ব পরিকল্পনা ছাড়াই ফাইল বেছে নেয় স্ক্রুটিনির জন্য। কাজেই আপনি 143(2)-এর আওতায় নোটিশ পেয়ে থাকলে বুঝবেন আপনার ফাইলের স্ক্রুটিনি হয়েছে। নোটিশ পেলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে উত্তর দেওয়া উচিত। সমস্ত প্রামাণ্য নথিপত্র হাতের কাছে রাখবেন, প্রয়োজনে ট্যাক্স বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
ভুল ITR ফর্ম হলে
একাধিক আয়ের উৎস থাকলে অনেকসময় ভুল ট্যাক্স রিটার্ন ফর্ম বেছে নিতে পারেন অনেকেই। সেক্ষেত্রে 139 (9) অনুচ্ছেদের অধীনে নোটিশ পাবেন করদাতা.
সাধারণভাবে আয়কর বিভাগ ১৫ দিন পর্যন্ত সময় দেয় নোটিশের জবাব পেশ করার। কাজেই আপনি যদি নোটিশ পান, নিশ্চিতভাবেই সময়সীমার আগে সংশোধিত রিটার্ন জমা করুন। নাহলে আপনার রিটার্ন আয়কর বিভাগ দ্বারা বাতিল করা হতে পারে।
উপরে আলোচিত ক্ষেত্রগুলি ছাড়াও এমন কিছু পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে যাতে আপনি নোটিশ পান। যেমন বড় রকম লেনদেনের ক্ষেত্রে, বা ইকুইটি ইনভেস্টমেন্ট থেকে প্রাপ্ত লং-টার্ম ক্যাপিটাল গেইনস সম্পর্কে ভুল তথ্য দেওয়া, নিজের স্বামী বা স্ত্রীর নামে করা ইনভেস্টমেন্ট গোপন রাখা, বা জরিমানার টাকা জমা না দেওয়া, ইত্যাদি।
পরিশেষে, ট্যাক্স নোটিশ পেয়ে ঘাবড়ে যাবেন না। ভালো করে পড়ুন, বুঝুন কী কারণে নোটিশ জারি হয়েছে, এবং সময়মত উপযুক্ত ব্যবস্থা নিন। সর্বোপরি, ট্যাক্স বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিতে দ্বিধা করবেন না।
(লেখক BankBazaar.com এর সিইও। মতামত ব্যক্তিগত)