বছর দুয়েক ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ! সামান্য কয়েকদিনের জন্য দরজা খুললেও তাতে তালা পড়েছে শীঘ্রই। প্রতিনিয়ত জোরালো থেকে জোরালোতম হয়ে উঠছে ছাত্র আন্দোলন। তাদের সাফ কথা, এবার সম্পূর্ণ ভাবেই খুলে দেওয়া হোক শিক্ষাঙ্গনের দরজা, এই করোনা পরিস্থিতিতে যখন সবকিছুই খোলা রয়েছে তখন, রোগ শুধু স্কুল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে?
প্রতিবাদ জানাতেই আজ সরব হয়েছিলেন অল ইন্ডিয়া মহিলা সংস্কৃতি সংগঠনের সদস্যরা। সঙ্গে শতাধিক ছাত্র ছাত্রী এবং তাদের অভিভাবকরাও সামিল হয়েছেন এই কর্মসূচিতে। দাবি একটাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্কুল এবং সকল শিক্ষাপ্রাঙ্গণ খুলে দেওয়া হোক! তবেই সবার পক্ষে মঙ্গল। শুধু স্কুল প্রাঙ্গণ খোলার বিষয়টি নয়, ২০২০ জাতীয় শিক্ষানীতি যাতে একেবারেই কার্যকর না হতে পারে সেই প্রসঙ্গেও সরব হয়েছেন তারা। বাচ্চারা বাড়িতে থেকে ক্রমশ হতাশ হয়ে পড়ছে সেই প্রসঙ্গে আগেই জানিয়েছেন মনোবিদ এবং চিকিৎসকরা! এবার নিজেদের স্বার্থে পথে বসলেন পড়ুয়ারা, আর বাড়িতে বসে পড়তে চায় না তারা।
গত দুইবছরে, স্কুল কলেজ বন্ধ থাকাতে মানুষের পক্ষে অনলাইন ব্যবস্থায় পড়াশোনা চালানো সম্ভব হচ্ছে না। আর্থিক ভাবে অনেকেই এত সচ্ছল নয়। তাদের মারাত্মক অসুবিধা সৃষ্টি হচ্ছে। কথা বলা হয়েছিল অল ইন্ডিয়া মহিলা সংস্কৃতি সংগঠনের সভাপতি অনন্যা নাইয়ার সঙ্গে। তিনি বিস্ফোরণের সুরেই বলেন, "রাজ্যে যখন সবকিছুই খোলা তাহলে স্কুল কেন নয়? করোনা সতর্কতা মানা আবশ্যিক, কিন্তু স্কুল খোলাও অতটাই গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষাবিদ, মনোবিদ এবং চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে এক মুহূর্ত দেরি না করে স্কুল খোলা হোক। সরকারের উদ্দেশ্য ভাল ঠেকছে না, যাই হোক অনলাইন শিক্ষানীতি চলবে না, স্কুল বন্ধ থাকায় প্রচুর নাবালিকাদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে, ছেলেরা পড়াশোনা ছেড়ে কাজকর্মে ঢুকে গেছে, তাদের অবিলম্বে ফিরিয়ে আনা হোক! ভিত্তিহীন এই চক্রান্ত সরকারের বন্ধ করা উচিত, পরিকল্পনা করে ব্যবস্থা নিতে হবে সরকারকে।"
নিজের মতামত জানিয়েছেন, আরেক সভাপতি অপর্ণা মন্ডল। বলছেন, "দেরি নয়! ফেব্রুয়ারির মধ্যে স্কুল খোলা হোক! নির্দিষ্ট পরিকল্পনা করা হোক, বাচ্চাদের শরীরের সঙ্গে শিক্ষাও অবধারিত প্রয়োজন। ওরা তো সব জায়গাতেই যাচ্ছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে পঠনপাঠন শুরু হওয়া আসলেই দরকার।"
রং বেরং এর প্ল্যাকার্ড, তাতে নিজেদের আর্জি জানিয়েই ওইটুকু শিশুদের বিক্ষোভ বলে দিচ্ছে তাদের মনের অবস্থা। কোনও প্ল্যাকার্ডে লেখা, আমরা পড়াশোনা করতে চাই, স্কুল খুলে দাও। কেউ আবার লিখেছে চাই না অনলাইন, এবার স্কুলে যেতে দাও। খোলা রাস্তায় একসঙ্গে বসে আঁকিবুকির মাধ্যমেই নিজেদের মনের ভাব তুলে ধরছেন ছোটরা। ওদের শৈশব হারিয়ে যাচ্ছে বলেই জানিয়েছেন চিকিৎসক মহল। মানসিক ভাবে সুস্থ রাখতে ওদের বিদ্যালয়ে পাঠানো প্রয়োজন। জানা গিয়েছে, কলকাতা হাইকোর্ট থেকেও আগামী ১৪ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে স্কুল সংক্রান্ত কর্মসূচি জানাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারকে। এই নিয়ে অনেকগুলি মামলাও দায়ের করা হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে। সরকারের এইভাবে দিনের পর দিন স্কুল কলেজ বন্ধ রাখার বিষয়টিকে ভালভাবে দেখছেন না কেউই।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন