Advertisment

করোনার কোপে দু'বছর স্কুলে তালা, নিজেদের জগতে ফিরে কেমন আছে অটিজম আক্রান্ত শিশুরা?

২ বছরে অভ্যাসগত অনেক পরিবর্তন চোখে পড়ছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের।

author-image
Anurupa Chakraborty
New Update
NULL

অটিজম স্পেশ্যাল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

বছর দুয়েক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দরজায় ছিল তালা। রাজ্যের অন্যান্য স্কুলের মতোই বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন শিশুদের স্কুলগুলি করোনার কোপে বন্ধ ছিল। শিশুরাও বেরতে পারেনি বাড়ি থেকে। সম্পূর্ণ বিষয় বুঝে উঠতে না পারলেও চারিদিকের পরিস্থিতি যে সুস্থ নয়, বাবা মায়েরা এটুকু বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন তৎপরতার সঙ্গে। তবে স্কুল খোলার পরে পুনরায় নিজেদের ভালবাসার জায়গায় ফিরে এসে তাদের কেমন প্রতিক্রিয়া, শিক্ষকরাই বা কী মনে করছেন, জানতেই যোগাযোগ করা হয় 'স্পর্শ - অটিজম ফাউন্ডেশন' এবং  'সানশাইন অটিজম ফাউন্ডেশন' নামক প্রতিষ্ঠানে। 

Advertisment

ওরা মানসিক ভাবে খুব নরম, সব কিছুর প্রতিক্রিয়া দিতে পারে না, বা চাইলেও সেটি ধরা পড়ে না। এতদিন স্কুল থেকে একটা দূরত্ব ছিল... এখন কীভাবে নিজেদের তারা মানিয়ে তুলছে এই পরিবেশে? প্রসঙ্গে স্পর্শ ফাউন্ডেশনের সদস্য মিঠুন দত্ত বলছেন, "এই সমস্ত শিশুদের যেকোনও কিছু বোঝানো খুব মুশকিল। নির্দিষ্ট তারিখ কিংবা সময় অনেক দিন আগে থেকে বোঝাতে হয় আবার তারপরেও দেখা যায় ওদের আবেগগত পরিবর্তন! ধরুন, কোথাও একটা বিয়েবাড়ি যাওয়ার কথা রয়েছে, আপনি ওকে বুঝিয়েছেন কিন্তু যখন সেই সময়টা এল, ওর মনে মনে হয়তো যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে কিন্তু বাহ্যিক ভাবে ও কাঁদতে শুরু করল, বাকিরা দেখে ভাবল সেই শিশুটি হয়তো যেতে চাইছে না...তাই পুনরায় স্কুলে ফিরিয়ে নিয়ে আসার বিষয়ে আমাদের অনেক কাজ করতে হয়েছে। যেদিন থেকে স্কুল খোলার নির্দেশ ছিল তার থেকে ৭/৮ দিন পরেই আমরা স্কুল খুলেছি এই কদিন ওদের রিভার্স সিস্টেমে বোঝানো হয়েছে যে আর বাড়িতে বসে থাকলে চলবে না..."

publive-image

অন্যদিকে সানশাইন ফাউন্ডেশনের সদস্য নীলাঞ্জনা রাম্বাথুরের বক্তব্য, "এতদিন পর ছাত্র-ছাত্রীদের সাধারণ পরিবেশে ফিরে আসার বিষয়টাই যেন কষ্টকর। একটি অটিজম স্পেশাল স্কুলে অনেক কিছু পেশাদারিত্ব অনুযায়ী করা হয়, বাড়িতে সেটা একেবারেই সম্ভব নয়। ফাংশনাল কিছু ক্ষেত্রেও ওদের অসুবিধা হচ্ছে। বেশিক্ষণ সময় যেহেতু ওরা থাকতে চাইছে না, তাই স্কুলের সময় খুব সীমিত রাখা হয়েছে।" তবে নীলাঞ্জনা বলেন, সবথেকে বেশি সমস্যার যদি কিছু সৃষ্টি করে থাকে সেটি হল মোবাইল- বাবা মায়েরা ওদের সামনে এটিকে এমন ভাবে তুলে ধরেছেন যে ওদের মনের দিক থেকে শান্ত রাখা, এই যে রদবদল হচ্ছে সেটির সঙ্গে মানাতে সাহায্য করা ভীষণ মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। ওদের একনাগাড়ে বসে থাকার যে চিকিৎসা সেটিতে প্রচুর সময় ব্যয় করা হয়েছিল, কিন্তু সেই অভ্যাস একদম নষ্ট হয়ে গেছে ওদের.... ফের নতুন লড়াই শুরু।"

publive-image

এ তো গেল পরিবেশ, কিন্তু বন্ধুবান্ধবদের কাছে পাওয়ার পরে কি বাচ্চারা খুশি? ওদের ব্যবহারে কিছু পরিবর্তন দেখছেন? স্পর্শর তরফে মিঠুন বললেন, "তারা স্কুলে আসতে পেরে বেজায় খুশি! কিন্তু চ্যালেঞ্জ একটা জায়গাতেই... যারা দশ বছর বয়সে গেছিল কিন্তু ফিরেছে ১২ বছরে সেই অ্যাডাল্টরেশন করা খুব মুশকিল হয়ে যাচ্ছে। ওদের বোঝাতে হচ্ছে যে ওরা বড় হয়েছে, অ্যাডলেশন পিরিয়ডে ওদের অনেক আগে থেকে বোঝাতে হয় ছেলে-মেয়ে নির্বিশেষে। বাড়িতে বাবা-মা যেটা করেন সেটা তো পেশাদার হিসেবে নয়, সেইদিকে একটা বিরাট সমস্যা আমরা বুঝতে পারছি.. তাই ব্যবহারেও একটু আরষ্ঠ ভাব দেখা যাচ্ছে ওদের। মাস্ক পরা ওদের কাছে বেশ সমস্যার সৃষ্টি করছে! মাস্কের ধরন ওরা সহ্য করতে পারছে না, কেউ কেউ চেবাতে শুরু করছে, যেহেতু ওরা আলাদা আলাদা ডেস্কেই বসে, তাই আমরা মাস্ক পরা নিয়ে জোরজার করছি না।"

আরও পড়ুন স্পর্শকাতর বিষয়ে কী ভাবে প্রতিক্রিয়া দেয় পড়ুয়ারা, ভারসাম্যের কথা বলছেন শিক্ষকরা

অন্যদিকে নীলাঞ্জনা বলছেন, "ভাল খারাপ অভ্যাস বলে কিছুই হয় না। যথাযথ হচ্ছে কিনা সেই দিকে খেয়াল রাখতে হয়। ওরা শুধু জানত যে বাইরে বেরোলে ওরা অসুস্থ হবে বেশ এটুকুই, তার মধ্যে থেকে বের করে নিয়ে আসতে সিলেবাস কমানো হয়েছে, অনেক নতুন খেলার আয়োজন করা হয়েছে। নাচ গানের মাধ্যমে ওদের মন ভাল রাখা হচ্ছে সবথেকে বড় কথা স্কুলের মতো সকলকেই একসময়ে আসতে হবে এমন কিছু নেই...ওদের ভাল রাখতেই সবকিছু করা। তবে সমস্যা এক জায়গায় যাদের মায়েরা চাকরি করেন, ওদের সময় দিতে পারেন না। সকলের অবস্থা তো এক নয়, পারিবারিক বিষয় থাকে সেগুলিও ওদের ওপর প্রভাব ফেলে। তবে হ্যাঁ অনেক সময় লাগবে ওদের আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে...."  

publive-image

দুই ফাউন্ডেশনের সদস্যই বলেন, বিগত বছর গুলিতে হয়তো সম্ভব হয়নি তবে তার আগেও নিয়ম করে দোল উদযাপন থেকে রবীন্দ্র জয়ন্তী এবং সরস্বতী পুজো সবকিছুই পালন করা হত। শিক্ষার সঙ্গে সঙ্গে সংস্কৃতি এই দিকেও কিন্তু লক্ষ্য রাখা হত। আঁকিবুকি হোক কিংবা হাতের কাজের প্রদর্শনী, ওদের কাজকে সবসময় প্রশংসা করা হয়, ওটাতেই ওদের আনন্দ! হয়তো আগের অবস্থায় ফিরতে সময় লাগবে তবে হাল ছাড়তে নারাজ দুই প্রতিষ্ঠানই।  

environment children
Advertisment