শীতের কলকাতায় উষ্ণতার পারদ চড়ানোর জন্য শহরবাসীর কাছে ইভেন্টের কোনও ঘাটতি নেই। ক্রীড়াপ্রেমিরাও সেই স্বাদ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন না। আগামী এক সপ্তাহ নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়াম বলবে, 'লে পাঙ্গা'! ফের এসে গিয়েছে প্রো-কাবাডি। শুক্রবার অর্থাৎ আজ থেকে কবাডির এই ফ্র্যাঞ্চাইজি ভিত্তিক টুর্নামেন্টের কলকাতা লেগ শুরু হচ্ছে। এবং যুদ্ধের ময়দানে নামার জন্য মুখিয়ে রয়েছে ক্যাপ্টেন সুরজিত সিংয়ের বেঙ্গল ওয়ারিয়র্স।
মনিন্দর সিং, কুন লি ও রন সিংয়ের টিমেই রয়েছেন দু’জন বাঙালি। বনগাঁর অলরাউন্ডার অমরেশ মণ্ডলের সঙ্গে খেলছেন ওপার বাংলার ডিফেন্ডার জিয়াউর রহমান। ঘটনাচক্রে হোটেলে একই কামরায় রয়েছেন অমরেশ ও জিয়াউর। বৃহস্পতিবার টলি ক্লাবে সুরজিতের দলের সঙ্গে সংবাদ মাধ্যমের আড্ডা জমে উঠেছিল। কখনও বল রুমে তো কখনও লনেই চলল প্রশ্নোত্তরের পালা।
বাংলাদেশের রংপুরের কুড়িগ্রামের বাসিন্দা বছর আঠাশের জিয়াউর। বাংলাদেশ নৌসেনার ল্যান্স কর্পোরালও তিনি। ফুটবলটাই খেলতেন। সেনায় তাঁর ফিজিক্যাল ইন্সট্রাক্টরের পরামর্শেই কাবাডিতে আসেন। এরপর রীতিমতো খেলাটাকে ভালবেসে ফেলেন। ডাক পেয়ে যান দেশের জাতীয় দলে। এক যুগ আগে এশিয়ান গেমসে ব্রোঞ্জ জয়ী বাংলাদেশ দলের সদস্যও ছিলেন তিনি।
অতীতে পুণের হয়ে প্রো কবাডি খেলা জিয়াউর ভালবেসে ফেলেছেন কলকাতাকেও। অবশ্যই ভাললাগার অন্যতম কারণ মাতৃভাষায় কথা বলার সুযোগ পাওয়া। বললেন, "অমরেশের সঙ্গে বাংলায় কথা বলতে পারছি। এটা অন্যরকম ভাললাগা। এছাড়াও বাংলাদেশের খাবারের সঙ্গেও এখানকার খাবারের বেশ মিল আছে। কিন্তু পদ্মার ইলিশ খুব মিস করছি। এখানে ইলিশ খাওয়া হয়নি এখনও।"
নৌসেনায় থাকার জন্য এক বছর জলেই কাটিয়েছেন। ছিলেন জাহাজে। ওই জীবনটা পছন্দ হয়নি জিয়াউরের। খেলাটাই এখন তাঁর ধ্যানজ্ঞান। কাবাডি বাংলাদেশের জাতীয় খেলা, কিন্তু সেদেশেও ক্রিকেটটাই প্রাধান্য পায়। ভারতে এসে কাবাডির সংষ্কৃতি দেখে মোহিত জিয়াউর। বললেন, "জানেন, আমাদের ওখানে কাবাডি জাতীয় খেলা ঠিকই। কিন্তু সেভাবে আমরা এগোতে পারিনি। ক্রিকেটের মতো অত নজর দেওয়া হয় না। তবে এখন যিনি ডিআইজি রয়েছেন, হাবিবুর রহমান, উনি নিজে কাবাডিতে এশিয়ান ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট। উনি খুব জোর দিচ্ছেন। ন্যাশনাল কাপ, স্বাধীনতা কাপ, বিজয় দিবস কাপ, প্রিমিয়র লিগ, বিচ কাবাডির মতো টুর্নামেন্ট হচ্ছে। কিন্তু ভারতে ক্রিকেট এত জনপ্রিয়, তাও এখানে এরকম বিশ্বমানের কাবাডি লিগ হচ্ছে। এটাই ভাল লাগে।"
বাংলাদেশি ক্রিকেট জুটি শাকিব আল হাসান ও মাশরাফি মোর্তাজা এক সময় কলকাতার ঘরের ছেলে হয়ে গিয়েছিলেন। দুই স্টার ক্রিকেটার খেলেছেন কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে। শাকিব-মোর্তাজাকে অসম্ভব সমীহ করেন জিয়াউর। বললেন, "ভাবতেও পারিনি নিলামে কলকাতা আমায় নেবে। আর এই শহরের হয়ে খেলেই শাকিব-মোর্তাজা চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন। ভেবে খুবই ভাল লাগছে যে এই শহরের হয়েই খেলব, চেষ্টা করব টিমকে চ্যাম্পিয়ন করার। আমাদের দেশে শাকিবরা স্টার। অনেক উঁচু মানের। মোর্তাজার মতো মানুষ হয় না। উনি অসাধারণ। সমাজের জন্য অনেক কিছু করেছেন। আমার এখনও মনে আছে এশিয়ান গেমসের সময় মোর্তাজা আমাদের হোটেলে এসে সিনিয়রদের সঙ্গে দাবা খেলেছিলেন। তখন বাংলাদেশেরও ক্যাম্প চলছিল। আমরা ঢাকায় এক হোটেলে ছিলাম।"
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দল আওয়ামি লিগ। এই দলের হয়েই মোর্তাজা ভোটে দাঁড়িয়েছেন। জিয়াউর বলছেন, "আল্লাহ চাইলে মোর্তাজাই জিতবেন। উনি যেখান থেকে দাঁড়িয়েছেন, ওখানে ওঁকে হারাতে পারবে না কেউ। মানুষের ভালবাসা ওঁর সঙ্গে রয়েছে।" সঙ্গে জিয়াউর এও জুড়ে দিলেন, তিনি তাঁর দেশে স্টার হয়ে ওঠেন নি। ফলে রাজনীতির ময়দানে আসতে চান না। ভবিষ্যতে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারলে ভোটের কথা ভেবে দেখবেন।
জিয়াউর নিজে ঠাট্টা তামাশা করায় একেবারে ওস্তাদ। কিন্তু রুমমেট ও সতীর্থ অমরেশ তাঁর চেয়ে অনেকটাই ছোট। ফলে অমরেশকে ভাইয়ের মতো দেখেন। বললেন, "অমরেশ খুবই শান্ত স্বভাবের, লাজুক।" বছর তেইশের অমরেশ বলছেন, "আমাদের রাজ্যে কাবাডি এগোচ্ছে। কিন্তু আমরা বেকার। কোনও চাকরি নেই। যদি সরকার একটু দেখত বিষয়টা ভাল হতো। সবারই চাকরি প্রয়োজন।"
আজ থেকে বেঙ্গল ওয়ারিয়র্সের একটাই লক্ষ্য। টানা ছ'টি ম্যাচ জিতে টেবিলের শীর্ষে উঠে ফাইনাল খেলা। তিনটে জিততে পারলেই তারা ফাইনালের জন্য কোয়ালিফাই করে যাবে। কিন্তু টেবিল টপার হয়ে শেষ করতে পারলে ফাইনালে দু'টো সুযোগ পাবে তারা। রাত আটটায় তামিল থালাইভাদের মুখোমুখি সুরজিতরা।