/indian-express-bangla/media/post_attachments/wp-content/uploads/2022/03/school-uni.jpg)
নীল সাদা পোশাক স্কুলে
রাজ্যের সরকারি স্কুলগুলিতে এবার পড়ুয়াদের পরতে হবে নীল-সাদা ইউনিফর্ম। ছাত্রদের নীল প্যান্ট এবং সাদা জামা। ছাত্রীদের জন্য নীল-সাদা সালোয়ার কামিজ এবং শাড়ি। শিক্ষা কমিশনের এই নোটিস ঘিরে শুরু হয়েছে বিতর্ক। আচমকা ইউনিফর্মের রং নীল সাদা? হঠাৎ কেন এই পরিবর্তন। সরকারি এবং সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলির ইউনিফর্মের রং বদলে করা হবে নীল-সাদা, তাতে থাকবে বিশ্ব বাংলার লোগো! এই প্রসঙ্গে ছাত্র সংগঠন এবং শিক্ষক সংগঠনের সদস্যরা নিজেদের প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন।
শিক্ষকমন্ডলীর তরফে মিলল ভিন্ন প্রতিক্রিয়া, হুগলি ব্রাঞ্চ গভ স্কুলের শিক্ষক শুভ্র চক্রবর্তী বলছেন, "সবে কানে এসেছে এই খবর। আজ স্কুলে না গেলে কিছুই জানা সম্ভব নয়। তবে এরকম পরিস্থিতি আগেও সৃষ্টি হয়েছিল, যখন বিদ্যালয়ের বিল্ডিং নীল সাদা রং করার কথা বলা হয়। তবে আমরা করি নি...এই স্কুলগুলো ২০০ বছরের পুরনো, কত মানুষের স্মৃতি, ঐতিহ্য জড়িয়ে আছে। স্কুলের পোশাক ছাত্রদের পরিচিতি, দুর থেকে বোঝা যায়, তাই আমরা এই বিষয়কে সমর্থন করি না।"
অন্যদিকে গড়িয়া হরিমতী উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ইন্দ্রাণী সেনগুপ্ত বলছেন, "স্কুলের পরিচয় তাদের ইউনিফর্ম। এখন এই বিষয়টিকে সরকার কীভাবে পরিচালনা করবেন সেটাই দেখার। সরকারি এবং সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলোর মধ্যে এখন আর তফাৎ যেমন থাকবে না তেমনই প্রাইভেট স্কুলগুলোর সঙ্গে এক বিভেদ দেখা যাবে। অর্থাৎ সরকারি বনাম বেসরকারি। স্কুলের ঐতিহ্য জড়িয়ে থাকে পোশাকের সঙ্গে, সেটি আর থাকবে না। আগে যেমন স্কুলের নিজস্ব কেউ এসেই ছাত্রীদের জামা কাপড় বানাতেন, ভাল খারাপ আমরা বলতে পারতাম। এখন মনে হয় না আর সেটা সম্ভব হবে! যদিও পরিষ্কার করে বলা সম্ভব নয় তারা লোক পাঠাবেন নাকি শুধুই অর্ডার আসবে।"
এবিটিএ-এর রাজ্য সভাপতি কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য বলছেন, "বিদ্যালয়ের নিজস্বতার ওপর আঘাত ছাড়া আর কিছুই না। এই স্কুলগুলি শুধু সরকার বানায়নি, এলাকার মানুষ শিক্ষার প্রয়োজন অনুভব করেই এই কাজ করেছেন। ইউনিফর্ম পড়ুয়াদের পরিচিতি, সেটিকে এইভাবে শেষ করে দেওয়া একেবারে উচিত নয়। এর আগে দেওয়ালের রং এবার পোশাক। স্কুলের মান মর্যাদা নিয়ে প্রশ্ন উঠবে এবার। এইভাবে পয়সার অপচয় না করে শিক্ষক নিয়োগ হোক, রাজ্যের উন্নতি করা দরকার।"
অন্যদিকে শিক্ষক সংগঠনের সদস্য মণীশ পান্ডা বলছেন, "আসলে কিছুই না, বিদ্যালয়ের ঐতিহ্যের ওপর আঘাত হানা। প্রতিটি স্কুল আলাদা, তাদের নিজস্বতা রয়েছে। সবাইকে একরকম ভাবে নিয়ে এলে, তাদেরকে চেনা দায় হবে। স্কুলের সঙ্গে ছাত্রদের নাম জড়িয়ে থাকে, এগুলো না করলেই ভাল, কোনও মানে হয় না।"
আরও পড়ুন বদলে গেল উচ্চমাধ্যমিকের সময়সূচি, নতুন রুটিন ঘোষণা করলেন মুখ্যমন্ত্রী
ছাত্রসংগঠনের তরফেও রয়েছে ভিন্নমত। ছাত্র-ছাত্রীদের জীবনের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত ইউনিফর্ম। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন যে তাদের পোশাক কী হবে, অন্তত এমনটাই মনে করেন এবিভিপি রাজ্য সম্পাদক সুরঞ্জন সরকার। তার বক্তব্য, "স্কুলের সঙ্গে রাজনীতির আবার কী সম্পর্ক? তারা নিজেদের মতো করে স্কুলে আসবে। ইউনিফর্ম পরবে, ছেলেমেয়েদের আবেগ এটা। স্কুলের সম্মান জড়িয়ে এর সঙ্গে, সরকারি হস্তক্ষেপ উচিত নয়। নীল-সাদা সরকারের রং - এটিকে আমরা কোনওভাবে সমর্থন করি না।"
এ প্রসঙ্গে এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য কটাক্ষ করেই বলেন, "শুধু বিশ্ব বাংলার লোগো কেন, সোজা ঘাসফুলের চিহ্নটা বসিয়ে দিন। রাজ্য যে হারে এগোচ্ছে এটাই সম্ভব, পশ্চিমবঙ্গ তো এখন সব প্রাইভেট কোম্পানি!" অন্যদিকে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য বলছেন, "এটি নিঃসন্দেহে এক ভাল উদ্যোগ। শিক্ষার্থীদের মধ্যে কোনও বিভেদ থাকবে না। উচ্চ-নিম্ন মধ্য সকলেই সমান। বাংলার ছাত্র সমাজ এগিয়ে আসছে এই তার প্রমাণ, এমনিতেও সাদা পবিত্রতার বাহক, শিক্ষা সমাজের উন্নতি হবেই বলা যায়।"
বলাই বাহুল্য, যে ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুল ইউনিফর্ম বিষয়টিকে ভাল চোখে দেখছেন না অনেকেই। পড়ুয়াদের নিজস্বতা এবং বিদ্যালয়ের ঐতিহ্য হারিয়ে যাওয়ার ভয় পাচ্ছেন সকলেই।