ভাষার গণ্ডি অতিক্রম করে কেরালার এসএসএলসি পরীক্ষায় “এ + গ্রেড” অর্জন করল মুর্শিদাবাদের রোকশত খাতুন। কেরালায় এবছর এসএসএলসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া প্রায় ৩০ শতাংশ পরীক্ষার্থী এ + গ্রেড অর্জন করেছে। কাজেই দশম শ্রেণির মুল্যায়নে এ+ গ্রেড অর্জন করায় অবাক হওয়ার কিছুই নেই। কিন্তু এর মধ্যেও রোকশত খাতুনের কৃতিত্ব এক আলাদা মাত্রা পেয়েছে। মুর্শিদাবাদের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছোট মেয়ে রোকশত। মালায়ালাম সহ সকল বিষয়ে এ + গ্রেড অর্জন করেছে সে । এতেই থেমে থাকেনি, স্থানীয় কোঝিকোড জিএনএসএস-এর এনজিও কোয়ার্টারস স্কুলে ইতিহাসেও সে এ+ গ্রেড পেয়েছে।
কেমন লাগছে এ+ গ্রেড পেয়ে? উত্তরে রোকশত জানাল, “আমি খুব খুশি যে আমি সমস্ত বিষয়ে এ + গ্রেড পেয়েছি। এতটা আমি এটা আশা করিনি”। ১২ বছর আগে কর্মসংস্থানের খোঁজে খাতুন এবং তার পরিবার বাংলা ছেড়ে কেরালায় আসে। রোকশতের কথায়, বাংলায় ক্লাস ওয়ান পর্যন্ত পড়াশোনা করে সে। পরে কেরালার স্কুলে ভর্তি হয়। যেহেতু কেরালা পড়াশোনা মালয়ালম ভাষাতে, তাই প্রথমে ভাষা বুঝতে আর পড়তে খুবই আসুবিধা হয়েছিল।
পরবর্তী সময়ে বন্ধুদের সঙ্গে যখন থেকে মালয়ালম ভাষাতে কথা বলতে শুরু করে ধীরে ধীরে তার জড়তা কাটতে থাকে। এখন মালয়ালম আর তার কাছে কোনও কঠিন বিষয় নয়। এব্যাপারে স্কুলের শিক্ষিকরা তাকে যথেষ্ট সাহায্য করেছিল। তাঁরাও কঠোর পরিশ্রম করেছিলেন রোকশতকে শব্দ, ভাষা ইত্যাদি বিষয় শেখাতে। হিন্দি তার প্রথম পছন্দের বিষয়।
আরও পড়ুন করোনায় বন্ধ পড়াশোনা! আহমেদাবাদে খোলা পার্কেই বসেছে স্কুল, চলছে অঙ্ক-ইংরাজির ক্লাস
রোকশতের কথায়, তার পরিবারের সকল সদস্য এখনও মুর্শিদাবাদেই থাকেন, ছুটি বা অন্যান্য অনুষ্ঠানে প্রায়ই বাড়িতে আসে সে। তার পরিবারে আছেন মা-বাবা আর দিদি। তাদের সঙ্গেই থাকে ছোট্ট রোকশত। তার দিদিও একই স্কুলের প্রাক্তন ছাত্রী। অত্যন্ত মেধাবী বলে তার দিদিরও যথেষ্ট সুনাম রয়েছে স্কুলে। দুবছর আগে এসএসএলসিতে নয়টি এ + গ্রেড অর্জন করেছিল দিদি।
কোঝিকোডের শেভরামবালামের সিএইচ হাউজিং কলোনিতে বর্তমানে খাতুন পরিবারের বাস। তার বাবা একজন শিল্পী, মা স্থানীয় এক বাড়িতে মহিলা কর্মচারী হিসাবে কাজ করেন। মেয়ের এই সাফল্যে রীতিমতো খুশি তার মা। তাঁর কথায়, খুব শান্ত স্বভাবের মেয়ে রোকশত, পড়াশোনা নিয়েই দিনের বেশির ভাগ সময় ব্যস্ত থাকে সে, বলেন মা। তিনি আরও বলেন তার দুই মেয়ে যতদূর পড়াশোনা করতে চায়, তিনি ততদুর পর্যন্ত তাদের পড়াতে চান, তিনি এখনই চান না তার মেয়েরা উপার্জন করুক।
“এখানে আসার আগে আমাদের অনেক লড়াই করতে হয়েছিল। আমাদের কিছুই ছিল না। আমরা ভাষা জানতাম না এবং স্কুলে কীভাবে বাচ্চাদের ভর্তি করবো সেই বিষয়েও কিছু জানতাম না। খানিক ঋণ পরিশোধ করার জন্য এখানে আসা, এখন অবস্থা আগের থেকে ভালো। গ্রামের দিকে একটা ছোট্ট বাড়িও নিজেরা করতে পেরেছি”, বলেন- ঝুমা বিবি, রোকশতের মা।
তিনি আরও বলেন “কয়েক বছর ধরে, আমরা তাদের বাড়িতে পড়িয়েছি এবং পরে আমাদের এক প্রতিবেশী তাদের স্কুলে ভর্তি করতে সাহায্য করেছিলেন। সেই থেকে আমাদের দুই মেয়েই ওই স্কুলে পড়াশোনা করে। সেখানকার সমস্ত শিক্ষকই অত্যন্ত নম্র ও বিনয়ী স্বভাবের।
জিএনএসএস-এর এনজিও কোয়ার্টারের এক শিক্ষক বলেন “রোকশত খুবই মেধাবী ছাত্রী। প্রথমে সে এখানে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হয়েছিল। তখন তাঁর বয়স প্রায় সাত বছর। তার বয়স এবং মানসিক ক্ষমতা বিবেচনা করে স্কুল তাকে চতুর্থ শ্রেণিতে উন্নীত করে। পরীক্ষার পরে তার বোনকেও দ্বিগুণ পদোন্নতি দেওয়া হয়েছিল”। ভবিষ্যতে একজন ব্যাঙ্কার হিসাবে নিজেকে দেখতে চায় রোকশত খাতুন, তার স্কুলেই সে বাণিজ্য বিষয়ে ভর্তি হয়ে পড়াশোনা এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন