বছর দুয়েক ধরে সেইভাবে বইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ নেই! কেউ বা হয়তো লেখাপড়া জীবনের প্রথম থেকেই অনলাইন মাধ্যমকেই বুঝেছে। কার্যতই পড়াশোনা সংক্রান্ত বিষয়টা ওদের কাছে একদম অন্যরকম। একদম যারা ছোট শিশু, তাদের মধ্যে বই পড়ার ধৈর্য নেই, লেখাপড়ায় একাগ্রতা একেবারেই কমে যাচ্ছে। বাবা মায়েরা যথেষ্ট চিন্তায়, বার বার তাঁদের একটাই বক্তব্য - কীভাবে সুস্থ রাখবেন তাঁদের শিশুকে।
বর্তমানে অনলাইন পড়াশোনার যুগে ছোট ছোট শিশুদের মধ্যে একবারে বসে বই পড়ার কিংবা মনোযোগ দিয়ে কাজ করার সময় টুকু নেই। এই প্রসঙ্গেই কথা বলা হয়েছিল শিশু মনস্তত্ত্ববিদ দেবজিতা মজুমদারের সঙ্গে। তিনি বেশ কয়েকটি বিষয়ের উল্লেখ যেমন করেছেন তেমনই সমাধানও দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, "স্কুলে নির্দিষ্ট কিছু সময়ের পর বাচ্চারা টিফিনে খেলা করতে পারত, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাতে পারত এখন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেটা নেই - একজন বাচ্চা মানসিক ভাবে বেশ আবদ্ধ হয়ে পড়ছে।"
তিনি বলছেন, "সবথেকে বেশি যে বিষয়টি আতঙ্ক দিচ্ছে যে একজন বাচ্চার একটুও একাগ্রতা নেই। এবং তার সঙ্গেই বাবা মায়ের সঠিকভাবে সঙ্গ দেওয়ার অভাব বেশ দেখা যাচ্ছে। ওরা অধৈর্য হয়ে পড়ছে এবং সবথেকে বড় কথা জেদ! এটি সবথেকে ভয়ংকর। অনেক বাচ্চাই বাবা মায়ের কাছে নিজে থেকে আগ্রহ নিয়ে গেলেও তারা নিজেদের কাজে বিরক্ত হয়ে ওদের সরিয়ে দেয়, এটি ভীষণ খারাপ!"
তাহলে উপায়?
তিনি জানাচ্ছেন, বাবা-মা এবং শিক্ষকদের একসঙ্গে ওদের খেয়াল রাখতে হবে। রং বেরঙের সব অ্যাকটিভিটি ওরা যা করতে ভালবাসে সেগুলি করতে দিন। ভাল করে বাচ্চার প্রতি নজর দেওয়া প্রয়োজন। সবথেকে বড় কথা ক্লাস শেষ হলেই মোবাইল ওর থেকে একদম দূরে রাখার ব্যবস্থা করুন, যখন যেটা চাইছে সেটা একেবারেই নয়। এবং শিক্ষকদের ক্ষেত্রে ৪০ মিনিটের ক্লাস হলে অনলাইন মাধ্যমেই ১০ মিনিটের জন্য ওদের মন ভাল রাখার কাজ করান। কোনও অ্যাকটিভিটি হোক কিংবা ওয়ার্ড প্লে, মোট কথা ওদের নজর আকর্ষণ করা এবং রিফ্রেশ রাখা বেশ দরকার।
একজন বাচ্চা নিজে থেকে সচরাচর পড়াশোনায় আগ্রহ পায় না। আর বছর দুয়েক করোনা প্রভাবে যেন তাতে আরও সমস্যা দেখা দিয়েছে। তাদের মন আর মানসিক আটকে গেছে মুঠোফোনের মধ্যে। ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট ইশান্ত রানা অন্তত তাই মনে করছেন। তাঁর বক্তব্য, "টেকনোলজি একেবারেই খারাপ কিছু না - বরং বাবা মাকে জানতে হয় কীকরে এটিকে সঠিক মাত্রায় ব্যবহার করতে হয়। নিজেদের ভাল থাকার অর্থ একেবারেই এটা নয় যে বাচ্চাদের হাতে ফাঁকা সময়েও মোবাইল তুলে দিতে হবে। ঠিক ভুলের পরখ ওদের নেই তবে বড়দের আছে।"
তিনি আরও বলছেন, "সবসময় যে ক্লাসের বাহানায় ছেলে মেয়েদের সঙ্গে সময় কাটাতে হবে তেমন নয়, অন্য সময় ওদের সঙ্গে কথা বলুন, গল্প করুন - কোনদিকে ওর মনোযোগ সেটি জানুন। সবথেকে বড় কথা মোবাইল ফোনে গেম খেলার অভ্যাসটি ওদের কমাতে হবে, ওদের যেন একবারও মনে না হয় যে আপনার দৃষ্টি ওর ওপর নেই। শিক্ষকদের অবশ্যই আকর্ষণীয় কোনও অ্যাকটিভিটি রাখতেই হবে যাতে ওরা মনোযোগ দিতে পারে। দুষ্টুমি করা, পড়াশোনা করতে না চাওয়া এগুলি খুব স্বাভাবিক তবে জেদ এবং মনোযোগের অভাব, কিংবা অযথা রেগে যাওয়া এগুলো থেকে বড় সমস্যা হতে পারে। তাই এখন মনে হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই নিন।"
বাচ্চাদের সুস্থ রাখতে এবং মানসিক ভাবে সবল রাখতে সবথেকে আগে বাবা-মাকেই সতর্ক হতে হবে এবং সময় দিতে হবে বলেই জানিয়েছেন দুজনেই। ঘর থেকেই মানুষের বেড়ে ওঠা এবং সুস্থ পরিবেশে বড় হওয়া। বিরক্ত হবেন না, ওদের সঙ্গে সময় কাটান।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন