ভালমন্দ মিলিয়ে কেটে গিয়েছে ২০১৮। খানিকটা সাবালক হয়েছে সময়, পাশাপাশি পিছিয়ে পড়ার নজিরও নেহাত কম নয়। এমন টালমাটাল পরিস্থিতিতে শিক্ষাব্যবস্থাতেও ঘটে গিয়েছে একাধিক ঘটনা। একাধিক ছাত্র আন্দোলন ছাপ ফেলেছে সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে। কিছু ক্ষেত্রে "অন্যায় আবদার" থাকলেও বেশিরভাগই নিজেদের প্রাপ্যটুকু ছিনিয়ে নিতে বদ্ধপরিকর ছিলেন তাঁরা। চলুন ফিরে দেখা যাক বছরভর ছাত্র আন্দোলনের কিছু টুকরো মূহুর্ত।
কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল:
জুলাই-এর মাঝামাঝি সময় থেকে মেডিক্যাল কলেজের ১১ তলার নতুন হস্টেল বিল্ডিং-কে ঘিরেই ছড়ায় সমস্যা। পুরনো ছাত্রদের জন্য নয়, নতুন হস্টেল বিল্ডিং শুধুমাত্র নতুন ভর্তি হওয়া প্রথম বর্ষের ছাত্রছাত্রীদের জন্য, এই মর্মে কর্তৃপক্ষের বিজ্ঞপ্তি জারির পরই ছড়ায় অশান্তির আগুন। এরপর টানা ১৪ দিনের অনশনের পর অবশেষে কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত বদলালে শেষ হয় অনশন। কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়, নতুন হস্টেলের দুটি তলা নিয়ম মেনেই বরাদ্দ করা হবে পুরনো বর্ষের ছাত্রদের জন্যও। পাশাপাশি মেরামত করা হবে পুরনো ভেঙে পড়া হস্টেলও। আবর্জনা পরিষ্কার করার আশ্বাস দেন তাঁরা, এবং শেষে আশ্বাস মতো সমস্ত দায়িত্বও পালন করেন কলেজ কর্তৃপক্ষ। সব মিলিয়ে এদিন জয়ের হাসিমুখগুলোর সাক্ষী থাকল মেডিক্যাল কলেজ চত্তর এবং সন ২০১৮।
আরও পড়ুন: চালু হলো ভারতের প্রথম রেলওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়: জানানো হয়েছিল, প্রবেশিকা পরীক্ষা বাতিল হলো। উচ্চমাধ্যমিক বা তার সমতুল পরীক্ষায় প্রাপ্ত নম্বরের ভিত্তিতেই স্নাতক স্তরে ভর্তি প্রক্রিয়া চলবে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। কিন্তু প্রবেশিকা বাতিলের সিদ্ধান্তে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দেয় ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে। সিদ্ধান্ত জানার পরেই উপাচার্য ও রেজিস্ট্রারকে ঘেরাও করেন তাঁরা। অবস্থান বিক্ষোভ, অনশন শুরু হয় এরপর। বেশ কয়েকটি জটের পর অবশেষে পড়ুয়াদের দাবিতে পিছু হটে বিশ্ববিদ্যালয়, পিছু হটেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ও। টানা অবস্থান অনশনের পর জট কাটে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। জানানো হয়, আপাতত বহাল থাকবে প্রবেশিকা পরীক্ষা, এবং পরীক্ষার মাধ্যমেই ভর্তি নেওয়া হবে কলা বিভাগে। সিদ্ধান্তে স্বভাবতই খুশি পড়ুয়ারা। পড়ুয়াদের দাবি মেনে ভর্তি এবং প্রবেশিকায় একাধিক রদবদলও করেন কর্তৃপক্ষ।
প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়: মিছিল, মিটিং, অবস্থান বিক্ষোভে কোনও সুরাহা না মেলায় অবশেষে অনশনের পথই বেছেছিলেন প্রেসিডেন্সির পড়ুয়ারাও। হিন্দু হস্টেলের দাবিতে গত ১ অক্টোবর থেকে অনশনে বসেন ১০ জন পড়ুয়া। এরপর সকালে অনশন মঞ্চে দেখা করতে আসেন উপাচার্য থেকে রেজিস্ট্রার, প্রত্যেকেই। একাধিক টালবাহানার পর প্রতিশ্রুতি মতো নভেম্বরেই খুলে দেওয়া হয় বহু কাঙ্ক্ষিত হিন্দু হস্টেল। ওয়ার্ড ১ এবং ২, অর্থাৎ বিল্ডিং ১-এর কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। কিছুদিন আগেই মিলেছে পূর্ত দফতরের ছাড়পত্র৷ ইতিমধ্যেই প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের জন্য হস্টেলে আসন বন্টনের নির্দেশ দিয়েছেন উপাচার্য ডাঃ অনুরাধা লোহিয়া। ছাত্রছাত্রীদের তরফে জানানো হয়েছে, রাজারহাট হস্টেল থেকে হিন্দু হস্টেলে চলে এসেছেন মোট ৬৪ জন পড়ুয়া। সব মিলিয়ে, হাজার কাঠখড় পুড়িয়ে, দীর্ঘ তিন বছর পর জয়ের মুখ দেখায় অবশ্যই খুশি প্রেসিডেন্সির পড়ুয়া।
আরও পড়ুন: রাজ্যে তৈরি হবে পাঁচটি নতুন মেডিক্যাল কলেজ
গণি খান চৌধুরী ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজি, মালদা: ২০১০-এ মালদহের নারায়ণপুরে পত্তন হয় গণি খান চৌধুরী ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির। বছর ছয় পর প্রথম ব্যাচ পাশ করার পরই পড়ুয়ারা জানতে পারেন, সার্টিফিকেট কোর্স, ডিপ্লোমা এবং বি টেক-এর প্রথম বর্ষের আগের দুটি কোর্স করার পর প্রতিষ্ঠান থেকে তাঁদের যে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে, অন্য প্রতিষ্ঠান বা চাকরীর ক্ষেত্রে তার কোনও মান্যতা নেই। ২০১০-এ জিকেসিআইইটি শুরু হয়েছিল ২+২+২ মডিউল প্যাটার্নে। এরপরই বৈধ সার্টিফিকেটের দাবিতে কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হন ছাত্ররা। তবে তাতেও কোনও সুরাহা না মেলায়, কলকাতায় ফুটপাথে দীর্ঘ তিন মাস অবস্থান চালিয়ে গিয়েছেন তাঁরা। অবশেষে কার্যত ব্যর্থ হয়েই ফিরে গিয়েছেন তাঁরা। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারের হস্তক্ষেপেও ফল মেলেনি আজও।
কলেজে ভর্তি কেলেঙ্কারি: চলতি বছর কলেজে ভর্তির সময় তোলাবাজি নিয়ে একাধিক অভিযোগ ওঠে। পড়ুয়াদের টাকার বদলে বেআইনিভাবে কলেজে ভর্তি করে নেওয়া হয়েছে বলেও জানা যায়। কার্যত ভর্তি নিয়ে শহর জুড়ে একাধিক ঘটনায় তোলপাড় হয় উত্তর থেকে দক্ষিণ। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তোলাবাজির দায় গিয়ে বর্তায় তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ওপর। মুখ্যমন্ত্রী নিজেও যান সরেজমিন পরিদর্শনে। রাজ্যের কোনও কলেজেও তোলাবাজির অভিযোগ উঠলে তদন্ত করা হবে বলে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, "নির্দিষ্ট কোনও অভিযোগ থাকলে অবশ্যই তদন্ত করা হবে। কোনও পরিস্থিতিতেই এ ধরনের ঘটনা সহ্য করা হবে না।”