হিজাব কাণ্ডের প্রতিবাদে কলকাতায় শুক্রবার বিক্ষোভ মিছিল বের করেন পড়ুয়ারা। এক্সপ্রেস ফটো- শশী ঘোষ
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব প্রতিটা মানুষের জীবনে অপরিসীম। সাধারণত শিশু থেকে মধ্যবয়স্ক মানুষের জীবনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং তার সঙ্গে সম্পর্কিত সবকিছুর গুরুত্বই আকাশছোঁয়া, সেই জায়গায় দাঁড়িয়ে পোশাক নিয়ে এক বিতর্কে উত্তাল কর্ণাটক থেকে দেশের অন্যান্য রাজ্য। শহর কলকাতার বুকেও হিজাব বিতর্কের প্রতিবাদে প্রতিদিন রাস্তায় নামছে পড়ুয়ারা। বিশেষ করে ইসলাম ধর্মাবলম্বী নারীদের ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করা হয়েছে, এই দাবিতে উত্তাল পরিবেশ। ছাত্ররা যেমন সরব হয়েছেন তেমন শিক্ষক সংগঠনের সদস্যদের কী মতামত এই প্রসঙ্গে?
Advertisment
ছাত্রীদের আদৌ হিজাব পরে যাওয়া উচিত কিনা, সেই নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে। কথা বলা হয়েছিল এবিটিএ সভাপতি কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্যের সঙ্গে। তিনি ক্ষোভের সুরেই বলেন, "প্রথম কথা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন আচরণ হওয়াই উচিত নয়। একজন ছাত্রী হিজাব পরে সেখানে প্রবেশ করল এবং অন্যান্য ধর্মের লোকেরা স্লোগান দিয়ে তাকে বের হয়ে যেতে বাধ্য করল, সেটি লজ্জাজনক। এমন একেবারেই নয়, যে হিজাব আমাদের জীবনে নতুন কোনও সংযোজন নয়, এই পোশাক সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানি। স্কুলের ক্ষেত্রে ইউনিফর্ম সবথেকে বেশি শিরোধার্য, তবে যদি কলেজের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কিছু না থাকে তার স্বাধীনতা থাকা অবশ্যই প্রয়োজন। যদি হিজাব বৈধ না হয়, তবে অন্যান্য ধর্মের মানুষের যদি পোশাক সংক্রান্ত প্রতীক চিহ্ন থাকে সেটিও বন্ধ করা উচিত।"
শিক্ষক সমিতির অন্যতম সদস্য মণীশ পান্ডা বলছেন, "শিক্ষাঙ্গণে ধর্ম কিংবা এই সম্পর্কিত পোশাক নিয়ে কোনও ঝামেলা হওয়া উচিত নয়। ছেলে-মেয়েরা কলেজে শিক্ষা গ্রহণ করতে আসে, সেখানে পোশাক কিংবা ধর্মাবেগে আঘাত করার কোনও মানেই হয় না। এটি স্পর্শকাতর ইস্যু! কে কী পোশাক পরে আসবে সেটা তার নিজের বিষয়।"
Advertisment
এ তো গেল শিক্ষক সংগঠনের বিষয়। তবে ছাত্র সমাজের ঠিক কী বক্তব্য এই প্রসঙ্গে? তাঁরা এই ঘটনাকে কীভাবে দেখছেন? এবিভিপি-র রাজ্য সম্পাদক সুরঞ্জন সরকার বিস্তারিত ভাবে জানিয়েছেন, “স্কুলের ক্ষেত্রে তো ইউনিফর্মের উপরে কিছুই হয় না। সেখানে সেটাই শিরোধার্য তবে আসল যে ঘটনার সূত্রপাত সেটি দক্ষিণ ভারতের মাণ্ড্যর। জোর করে আর যাই হোক, ধর্ম নিয়ে কিছুই করা যায় না। যার যেটা ইচ্ছে সে সেটাই পরবে, একসঙ্গে সবে মিলে পড়াশোনা করতে যায় ওখানে, অন্যদিকে অশান্তি করার কোনও দরকার নেই।”
বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের ভিন্নমত। এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য বললেন, “পোশাকের সঙ্গে যদি সর্বস্তরের সম্পর্ক থাকতই তাহলে লোকসভায় গেরুয়া বসন পরে ঢোকার কোনও অধিকার ছিল না। তবে এইভাবে একজন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্রীর উপর যে আচরণ করা হয়েছে সেটি ঘৃণ্য! এটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক বিদ্বেষ, যেটিকে শিক্ষা প্রাঙ্গণে নিয়ে আসার কোনও দরকার ছিল না। ”
সকলের মতামত অন্তত এটুকুই বলছে, শিক্ষাঙ্গণে কোনও ধর্ম বিষয়ক কিছু থাকার কথা নয়। দুটির জায়গা আলাদা, দুটির বাস্তবতা ভিন্ন, সুতরাং দুটিকে মেলানোর বিষয়টি একেবারেই ঠিক নয়।