আজ ২৯ দিন হয়ে গেল। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের হিন্দু হস্টেল সংক্রান্ত দাবি মেটে নি। প্রায় ৫০ জন ছাত্রছাত্রী এখনও দিন কাটাচ্ছেন প্রেসিডেন্সির করিডোরেই। হস্টেল প্রাঙ্গনেই বালিশ বিছানা নিয়ে ধর্ণায় বসেছেন তাঁরা। স্নান, খাওয়াদাওয়া, ঘুম, সমস্তই সারছেন সেখানে। এর আগে ছাত্র আন্দোলনের মুখে পড়ে উপাচার্য ডাঃ অনুরাধা লোহিয়া ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে সংস্কারের কাজ শেষ করে ১ অগাস্টের মধ্যে হোস্টেল ফেরত দেওয়ার কথা লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন ছাত্রদের। তবে ছাত্রদের বক্তব্য, নির্ধারিত দিন পেরিয়ে যাওয়ার পর জানা যায়, হোস্টেল সংস্কারের কাজ এখনও বিশ বাঁও জলে। ইতিমধ্যেই ফিরে গেছে সংস্কারের জন্য বরাদ্দ অর্থও।
এদিকে আবার গত ৬ অগাস্ট হস্টেলের কাজ শেষ করার জন্য চার-পাঁচ মাস সময় চেয়ে নিয়েছিলেন উপাচার্য। কর্তৃপক্ষ ছাত্রছাত্রীদের জানিয়েছেন, পি ডব্লু ডি হস্টেলের কাজ শেষ করলেই স্থানান্তরিত করা হবে তাঁদের। এ প্রসঙ্গে আন্দোলনকারী অনিত বৈদ্য বলেন, "হিন্দু হস্টেলের ছ'টা ব্লকের মধ্যে চারটের কাজ এখনও শুরুই হয়নি। আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন জানিয়েছিলাম, হস্টেলের অন্যান্য ব্লকের থেকে যে দুটো ব্লক সম্পূর্ণ আলাদা তাতে আমাদের থাকতে দেওয়া হোক, বাকি কাজ যেমন চলছে চলুক। তবে ভিসি তা মানতে নারাজ, কাজেই জানা নেই কী করব, কিন্তু রাজারহাট থেকে নিয়মিত কলেজ করা সম্ভব নয় আর।"
করিডোরেই বিক্ষিপ্তভাবে দিন কাটাচ্ছে পড়ুয়ারা। নিজস্ব চিত্র
ইতিমধ্যেই ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন উৎসব নামে এক ছাত্র। অন্যান্য ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, গত রাতে এ বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষের কোনও সহায়তাই মেলেনি। এ দিকে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করার কথা জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা, চলছে সই সংগ্রহ। আগামী সপ্তাহে জেনারেল বডি মিটিংয়ের পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তাঁরা। প্রাক্তন থেকে বর্তমান, অনেকেই যোগ দিয়েছেন আন্দোলনে।
এক প্রাক্তন ছাত্র রেজাউলের কথায়, "দু'বছর আগে পাশ করে গিয়েছি আমি, হিন্দু হস্টেলে থাকার সুযোগ পাইনি। প্রতিবারই শুনতাম এগারো মাস, পাঁচ মাস পর কাজ শেষ হবে, তবে এই সময়টা আর শেষ হয় না। প্রায় তিন বছর কেটে গিয়েছে।" প্রসঙ্গত, কিছুদিন আগেই যত শীঘ্র সম্ভব ছাত্রদের হস্টেল ফিরিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়, এবং ডাঃ লোহিয়া জানিয়েছিলেন, কাজ পুরোপুরি শেষ না হলে ছাত্রদের হিন্দু হস্টেলে স্থানান্তরিত করা যাবে না। কারণ ছাত্রদের নিরাপত্তার সঙ্গে কোনওরকম আপোস করবেন না তিনি। তবে ঠিক কতদিন অপেক্ষার পর হস্টেলের স্বাদ পাবে ছাত্ররা, একথা লিখিতভাবে জানানো হয়নি বলেই অভিযোগ আন্দোলনকারীদের।
আরো পড়ুন: ছাত্র আন্দোলনের হিড়িক, হস্টেলের দাবিতে উত্তপ্ত প্রেসিডেন্সি
এ দিকে রাজারহাট ছাত্র আবাসিকের প্রসঙ্গ তুলতেই সামনে আসে একাধিক অভিযোগ। এক ছাত্র জানান, কর্তৃপক্ষ সারাদিনে তিনটে বাসের ব্যবস্থা করেছিলেন হস্টেলে যাওয়ার, তবে এখন সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে এক-এ। কাজেই বাস না ধরতে পারলে ট্যাঁকের কড়ি খরচ করেই যাতায়াত করতে হয়, যা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। পাশাপাশি, রাতের খাবার ছাড়া সকালের খাবার মেলে না সেখানে, এবং রাতের খাবারের দামও অনেক। তাঁদের আরও অভিযোগ, কলেজের মেইন ক্যাম্পাসে ৩০ টাকার যে মিলের দোহাই দিয়েছেন উপাচার্য, সেই মিলে থাকত পচে যাওয়া খাবার, যা মুখে দেওয়ার মতো ছিল না। কাজেই আপাতত বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৩০ টাকার মিল। আর ভাল খাবারের যা খরচ, তা কোনও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়।
এখানেই শেষ হয়নি অভিযোগ, কলেজ প্রাঙ্গনকে ম্যালেরিয়া, ডেঙ্গুর আঁতুড়ঘর বলে দাবি করেছেন ছাত্রছাত্রীরা। ইতিমধ্যেই আক্রান্তের সংখ্যা চার। পৌরসভা থেকে লোক এলেও কাজ না করেই ফিরে গিয়েছেন তাঁরা। এমনই হাজারো অভিযোগের পাহাড় জমেছে পড়ুয়াদের মধ্যে। সব মিলিয়ে, কার্যত কঠিন দ্বন্দ্বের মধ্যে দিন কাটছে প্রেসিডেন্সির একদল ছাত্রছাত্রীর।
২৯ দিন ধরে বিছানা বালিশ নিয়ে প্রেসিডেন্সির করিডোরে থাকছেন ছাত্রছাত্রীরা। নিজস্ব চিত্র
ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, তিন বছর আগে হিন্দু হস্টেল সারানোর অজুহাতে ১১ মাস সময় চেয়ে রাজাবাজার আবাসিকে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের। সেই সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ার পর লিখিতভাবে পড়ুয়াদের এই বছরের ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে হস্টেল ফিরিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন উপাচার্য। তবে তিন বছর কেটে গেলেও হস্টেলের কোনও উন্নতি দেখতে পাওয়া যায়নি। কিছুদিন আগে হস্টেল ফিরিয়ে দেওয়ার দাবী জানিয়ে ছাত্রছাত্রীরা আবেদন জানিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষের কাছে। এতে গত মাসের প্রথম সপ্তাহ অবধি সময়ও চান কর্তৃপক্ষ। তাতেও কোনও উপায় না মেলায় সোমবার দুপুরে চরম বিক্ষোভের মুখে পড়েন উপাচার্য। কোনও সাফাই মানতেই নারাজ আন্দোলনকারীরা। হিন্দু হস্টেল না মিললে অবস্থান চলবে বলেই জানাচ্ছেন তাঁরা।