Education and Sensitive Topic: ছোটবেলা থেকেই বিশেষ করে ভারতীয় শিক্ষানীতির কথা বললে বেশ কিছু স্পর্শকাতর বিষয় কিংবা টপিক ছেলেমেয়েদের সঙ্গে আলোচনা করা হলেও বেশিরভাগ সময় সেটিকে এড়িয়েই যাওয়া হয়। যেমন, বিজ্ঞানের ভাষায় প্রজনন হোক কিংবা মেনস্ট্রুয়েশন এই প্রসঙ্গ গুলি এড়িয়েই যাওয়া হয় একরকম, অনেক সময় ধর্ম সংক্রান্ত কিংবা সামাজিক বিষয়ের অবক্ষয় গুলিও নানা ভাবে তাদের মধ্যে প্রভাব ফেলতে পারে। তবে বদল আনা উচিত অবশ্যই, সিলেবাস হোক কিংবা পড়ার বিষয়, জানার কিন্তু শেষ নেই তবে সেটিকে এমন ভাবে পড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে যেন কোনওরকম সমস্যা না থাকে।
বিশ্বজুড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র হোক কিংবা ব্রিটেনে ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষিত করার বেশ অনন্য উপায় তারা অবলম্বন করেন। তাদের ভাবনা চিন্তায় বদল আনার বিষয়টিকেও যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়া হয়। তবে ভারতের শিক্ষকরাও কিন্তু একেবারেই পিছিয়ে নেই। সর্বধর্ম সমন্বয়ের দেশে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করতে আসেন অনেকেই, তাদের জ্ঞান বুদ্ধি, বিচার বিবেচনা সবকিছুই আলাদা। তাদেরকে বিকশিত করতে গেলে ভারসাম্য বজায় রাখতেই হবে বলে মনে করেন শিক্ষকরা।
অধ্যাপক পূর্ণিমা গুপ্তা বলছেন, "শিক্ষার্থীদের শিক্ষিত করতে হবে, সঙ্গেই খেয়াল রাখতে হবে যে আপনি আপনার ধারণা তাদের ওপর চাপিয়ে দিচ্ছেন না। নিজের দায়বদ্ধতা এড়িয়ে গেলে চলবে না তবে বেশ কিছু প্রক্রিয়া নিশ্চিত করতে গেলে মনে রাখতে হবে এটি একটি সংবেদনশীল বিষয়, বিশেষ করে উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে। তার বক্তব্য, ভারতের বুকে নানা বর্ন নানা শ্রেণী এবং সম্প্রদায়ের ব্যক্তি আছেন তাদের যেন কোনওরকম আঘাত না লাগে সেইদিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। অনেকসময় দেখা যায় উচ্চ শিক্ষার সময় ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের জীবনের সঙ্গেই ঘটনাগুলোকে মিলিয়ে দেখার চেষ্টা করেন, সক্রিয় ভাবে বুঝে নেওয়ার দাবি রাখে, সেইক্ষেত্রে চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।"
তবে ভারসাম্য বজায় রাখার এই বিষয়টি কীভাবে সম্ভব? জয়পুরিয়া ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্টের ডিরেক্টর দেভিন্দর নারাং বলছেন, শিক্ষক যদি নিরপেক্ষ থাকেন তাহলেই এটি সম্ভব! সকল ছাত্রের সঙ্গে একধরনের আচরণ বজায় রাখা খুব দরকার।
কোন কোন বিষয় এড়িয়ে যাওয়া উচিত?
শিক্ষকদের অনেকেরই মতামত, টপিক যাই-ই হোক সেটিকে এড়িয়ে গেলে একেবারেই চলবে না। সবকিছুই জানা দরকার, সীমাবদ্ধ থাকবে এমন ঠিক নয়। নিরপেক্ষ হওয়া উচিত, তবে ভারতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ঠিক অন্যরকম ব্যবস্থাই গ্রহণ করা হয়। অধ্যাপক গুপ্তা জানিয়েছেন, বেশিরভাগ সময় বিতর্কিত কোনও বিষয় ফ্যাকাল্টি মেম্বাররা এড়িয়ে যেতেই পছন্দ করেন। ছাত্রদের সঙ্গে রাজনীতি নিয়ে তারা আলোচনা করেন না, নিজেদের মধ্যে সেই নিয়ে দ্বন্দ্ব থাকলেও সেটি স্বাস্থ্যকর বিতর্ক, দ্বিমত পোষণ করা সম্ভব। তবে এটুকু নিশ্চিত যে ছাত্রদের ওপর মতামত চাপিয়ে দেওয়া হয়না। শিক্ষার্থীদের সামনে রাজনৈতিক আচরণ কিংবা কাকে সাপোর্ট করা হয় সেই নিয়েও কথা বলা হয় না।
প্রসঙ্গে সহমত পোষণ করেছেন শিক্ষিকা সন্ধ্যা গাট্টি। তিনি বলছেন, "যেকোনও স্তরেই শিক্ষক শিক্ষিকাদের নিজেদের শব্দ এবং বাচন ভঙ্গি নিয়ে সতর্ক থাকা উচিত। এটি বাধ্যতামূলক যে শিক্ষকদের দৃষ্টিভঙ্গি বেশ উদ্দেশ্য যুক্ত থাকা উচিত। নিজস্ব চিন্তাভাবনা এবং কর্ম সম্পর্কে সচেতন থাকা উচিত। সহকর্মীদের ঠিক ভুলের ধারণা দেওয়া উচিত সঙ্গেই পক্ষপাত এবং কুসংস্কারের বিরুদ্ধে প্রশ্ন করা উচিত। শিক্ষার্থীরা যে বিশ্বে রয়েছে সেটিকে আরও উন্মুক্ত করে দিতে হবে।"
শিক্ষার্থীদের মতামত ঠিক কেমন?
তারা বলছেন, ভারতে এই পরিস্থিতি বেশ বিরল। এমবিএ- এর এক ছাত্র জানাচ্ছেন অনেকদিন হল স্নাতক শেষ করেছেন, অনেক ছাত্রকে চোখের সামনে দেখছেন বটে তবে স্কুল কলেজে গিয়ে এরকম কিছুর সম্মুখীন হননি যেখানে অধ্যাপকরা বলছেন কিসে বিশ্বাস করা উচিত এবং কেন! শিক্ষার্থীদের চিন্তাভাবনার ওপর শিক্ষকের কোনও হাত নেই..... এবং এটি সম্পূর্ণ সত্যি কথা।
ভিন্ন চিত্র মিলল আরেক ছাত্রের কথায়, তার বক্তব্য - অনেক সময় রাজনৈতিক রসিকতার সম্মুখীন হয়েছেন। সমাজবিজ্ঞানের ক্লাস চলাকালীন অনেক শিক্ষকরাই আলোচনার সময় রাজনৈতিক ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছেন। এটি আমাদের কাছে বেশ স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে উঠেছিল। এমনকি জি এস টি নিয়েও অনেক দ্বন্দ হয় ক্যাম্পাসে, নোট বন্দী নিয়েও বিতর্ক হয়েছিল প্রচুর।