রুশ ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে আন্তর্জাতিক স্তরে বেলাগাম পরিস্থিতি। তেমনই ভারতীয় ছাত্র ছাত্রীদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসার তাগিদ, সীমান্ত অতিক্রম করে বেশ কিছু পড়ুয়া বাড়ি ফিরলেও নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তারা বেশ উদ্বিগ্ন। পড়াশোনা এখনও শেষ হয়নি অনেকের, কী হতে পারে এই নিয়ে চিন্তার শেষ নেই। শ্রী রবি কুমার কৌল ( অধ্যয়ন পরামর্শদাতা ) এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা নিয়ে একেবারেই চিন্তা নেই। তাদের শিক্ষাগত কোর্স একেবারেই হারাবে না, কারণ ন্যাশানাল মেডিক্যাল কমিশন তাদের অন্যত্র স্থানাতরিত করার সুযোগ দেবে। তিনি বলছেন, ইউক্রেনের পরিস্থিতি ভাল নয়, এখন শুধু একটাই বিষয় তাদের সুস্থভাবে ফিরিয়ে নিয়ে আসা, গত সপ্তাহেই ভারত সরকার যে সকল ভারতীয় ছাত্র ছাত্রীরা ইউক্রেনে ছিলেন তাদের ডেটা সংগ্রহ করেছেন। যদি পরবর্তী দিনে পরিস্থিতি ভাল হয়, তবে তারা পুনরায় নিজেদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরবেই।
প্রসঙ্গেই তিনি জানান, ছাত্র ছাত্রীদের দুটি অপশন দেওয়া হতে পারে। নয়তো ইউক্রেনের অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে, কিংবা অন্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো হবে…পড়ুয়াদের খুব সাবধানে এবং বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দেশের পূর্বাঞ্চলের পরিস্থিতি খুব খারাপ, তাই যদি এই প্রান্তের ছাত্ররা ফিরতে পারে, তাদের পশ্চিমের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়েই পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এবং সেই কর্তৃপক্ষ সুত্রে খবর, সাদরেই ছাত্রদের আমন্ত্রণ জানাবে তারা। তবে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে সাবধানতা রাখতে হবে, সেখানে শিক্ষাপদ্ধতির সঙ্গে সঙ্গে খরচাও একটু বেশি। সহমত জানিয়েছেন অক্ষয় চতুর্বেদী ( Leverage Edu, অধ্যয়ন পরামর্শদাতা ) তারও মতামত এদিকেই- এই দুই সুযোগকেই কাজে লাগাতে হবে।
অক্ষয় বলছেন, গত পাঁচ বছরে অনেক দেশই নিজেদের স্বাস্থ্য এবং অবকাঠামো উন্নত করার চেষ্টা করেছে। নিজেদের দেশেই মেডিক্যাল ব্যাবস্থা উন্নত করার মাধ্যমে তারা ছাত্র ছাত্রীদের পড়াশোনার দিক খতিয়ে দেখবে। দেশের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, ওয়েস্ট ইন্ডিজ হোক কিংবা যুক্তরাজ্য অথবা কানাডা এই প্রদেশগুলিতে মেডিক্যাল পড়ুয়াদের পড়াশোনা করতে গেলে একটু বেশিই খরচ হবে। তবে অধ্যয়ন পরবর্তী সময়ে বিনিয়োগে অনেক সুযোগ পাওয়া যাবে, এমনকি কর্মযোগতে যথেষ্ট সুবিধা পাওয়া যাবে। তবে এই বিষয়ে ছাত্রদের মতামত ঠিক কী?
চণ্ডীগড়ের এক ছাত্র, যিনি ন্যাশানাল খারকিভ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন, বললেন- বিশ্ববিদ্যালয় আমাকে আশ্বস্ত করেছে যে অনলাইন ক্লাস চলবে। আমি আমার এমবিবিএস ডিগ্রিতে ছয় বছর কাজ করেছি। KROK 2 পরীক্ষা, যা একটি লাইসেন্সিং পরীক্ষা এবং ডাক্তার বা ফার্মাসিস্ট হওয়ার জন্য রাষ্ট্রীয় শংসাপত্রের একটি বাধ্যতামূলক অংশ, ২৪ মে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা তবে সম্ভব বলে মনে হচ্ছে না। আমরা জানি না কী হবে।”
২০১৪ সালের স্মৃতি রোমন্থন করেই কৌল বলেন, বর্তমান পরিস্থিতি আগের থেকে অনেক আলাদা, সেইসময় বেশীরভাগ ছাত্ররাই দেশে ফেরেনি। পরিস্থিতি পঞ্চম বা শেষ বর্ষের এমবিবিএস শিক্ষার্থীদের জন্য আরও বিভ্রান্তিকর হতে পারে কারণ তাদের ক্লিনিকাল প্রশিক্ষণের প্রয়োজন হয়। “ভারত সরকারকে এই ছাত্রদের স্থানান্তর করার জন্য একটি অধ্যয়ন-বিদেশে পরামর্শদাতা হিসাবে কাজ করতে হবে কারণ সীমিত পরিকাঠামোর কারণে তাদের সকলকে ভারতীয় মেডিকেল স্কুলে ভর্তি করা সম্ভব নয়। শেষ বর্ষের ছাত্রদের অনেক কিছু শেখার প্রয়োজন হয়, তাই সেইদিকে খেয়াল রাখতেই হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হাত তুলে নেওয়া একেবারেই কাম্য নয়।
সেইসময় পরিস্থিতি সমস্যাদায়ক ছিল বটে, কিন্তু চিন্তার কারণ ছিল না। বলা উচিত, দেশে ফেরার কোনও প্রয়োজন ছিল না… বেশীরভাগ অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থানান্তরিত হয়েছিল। আর বাকিরা ছিল নিজেদের কলেজগুলিতেই। তবে সমস্যা দেখা দিয়েছিল প্রাতিষ্ঠানিক কোর্স ফি নিয়ে, ভারতীয় দূতাবাসের কাছে যখন বেশ কয়েকজন ভারতীয় ছাত্র পৌঁছায়, তাদের বলা হয়েছিল- যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে তারা স্থানান্তরিত হয়েছিল সেখানে কোনও ফি দিতে হবে না, তবে নির্দেশগুলি ভিন্নভাবে প্রয়োগ করা হয়েছিল। পরবর্তীতে এই নিয়ে সমস্যা দেখা যায়।