লকডাউন সময়কালে মাত্র ১ বছরের মধ্যে ১৬টি শিক্ষাকেন্দ্র চালু করেছে মহাত্মা গান্ধি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় (MGCU)। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন তৈরি শিক্ষাকেন্দ্রগুলির বেহাল পরিকাঠামোর বেআব্রু ছবি ধরা পড়েছে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের ক্যামেরায়। ন্যূনতম পরিকাঠামো, পর্যাপ্ত শিক্ষক ছাড়াই গড়ে তোলা হয়েছে মহাত্মা গান্ধি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার অফ স্টাডিজ।
একটি ১০X১০ রান্নাঘরের স্টোররুমের পরিকাঠামোয়, গড়ে উঠেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকটি শিক্ষাকেন্দ্র। যেখানে নেই কোনও অফিস, নেই কোনও আসবাবপত্র, এমনকি নেই ছাত্রদের জন্য নেই বসার বেঞ্চও। একসময় যে ঘরে ছিল একটি গোডাউন সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে, মহাত্মা গান্ধী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকেন্দ্র।
মাত্র দুটি শিক্ষাকেন্দ্র ছাড়া আর কোনও কেন্দ্রের জন্য প্রয়োজনীয় অনুমোদন নেওয়া হয়নি। সাধারণ ভাবে যে কোনও কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় সেন্টার ফর স্টাডিজের জন্য অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল (এসি) এবং এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল (ইসি), থেকে অনুমোদন নেওয়া বাধ্যতামূলক, এক্ষেত্রে সেই সব নিয়ম কানুনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়েই গড়ে তোলা হয়েছে এই সেন্টারগুলি। তার মধ্যে ৩টি সেন্টারের জন্য মাসিক বরাদ্দ ভাড়ার পরিমাণ ৪ লক্ষ টাকা।
২০১৪ সালে সংসদীয় আইন মেনে গড়ে তোলা হয়েছিল মহাত্মা গান্ধি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। ২০১৬ সাল থেকে কাজ শুরু হয় এই বিশ্ববিদ্যালয়ের। ২৫ একর জুড়ে বিশাল এলাকা জুড়ে এই বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। ১২০ জন শিক্ষক এবং ১৩০০ ছাত্র। এছাড়াও ৩৫০ রিসার্চ স্কলার রয়েছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশির ভাগ সেন্টারে নেয় পর্যাপ্ত শিক্ষক। পাঁচটি কেন্দ্র সমন্বয়কারী হিসাবে নিযুক্ত শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে থেকে চালানো হচ্ছে। এই বছরের অক্টোবরে অনেক ধুমধাম করে উদ্বোধন করা তিনটি কেন্দ্র। সেখানে নেই ন্যূনতমও কোন সুযোগ-সুবিধা, এমনকি আসবাবপত্র ছাড়াই ছোট কক্ষে খোলা হয়েছে এই সেন্টারগুলি।
বিহারের মহাত্মা গান্ধি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কেন্দ্রগুলি দেখে চোখ কপালে সকলের। মাত্র ১২ মাসের মধ্যেই গড়ে উঠেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬টি সেন্টার। তাদের মধ্যে ১৪টির বেশি শিক্ষাকেন্দ্রের নেই কোনও অনুমতিও। বিনা অনুমতিতে কীভাবে চলছে এই শিক্ষাকেন্দ্রগুলি, প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তরফে বিহারের মোতিহারিতে মহাত্মা গান্ধি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় সেন্টারগুলিতে ঘুরে আসতেই উঠে এসেছে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য, সেখানে বেশির ভাগ সেন্টার গুলিতে নেই পর্যাপ্ত শিক্ষক, ছোট ছোট ঘরে গড়ে উঠেছে এই শিক্ষা কেন্দ্রগুলি। যেখানে নেই কোনও অফিস ঘর, নেই আসবাব পত্র, বেঞ্চ।
১৬টি সেন্টারের মধ্যে ১৪টি সেন্টারের নেই প্রয়োজনীয় অনুমতি। অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল অথবা এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল থেকে নেওয়া হয়নি কোন অনুমোদন। অনুমোদন ছাড়াই রমরমিয়ে চলছে এই সব সেন্টারগুলি। বেশির ভাগ সেন্টারগুলিতে নেই পর্যাপ্ত পরিকাঠামো। শিক্ষকের বদলে কোঅর্ডিনেটা নিয়োগ করেই চলছে সেই সব সেন্টারগুলি।
ছত্রপতি শিবাজি লোকনীতি শিক্ষাকেন্দ্র গড়ে উঠেছে একটি ১০x১০ ফুট ঘরের মধ্যে। এছাড়া সেন্টারে নেই কোনও পরিকাঠামো। ছত্রপতি শিবাজি লোকনীতি শিক্ষাকেন্দ্র, কাশীপ্রসাদ জওসোয়াল সেন্টার-সহ মোট তিনটি সেন্টার গত অক্টোবরে চালু করে হয়েছে। কাশীপ্রসাদ জওসোয়াল সেন্টার গড়ে উঠেছে একটি ১৪x১০ ফুট ফাঁকা ঘরে। এম বিশ্বেশরাইয়া সেন্টার চালু করা হয়েছে ৮x১০ ফুট ফাঁকা ঘরে।
২০০৯ সালের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুসারে প্রতিটি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকেন্দ্র তৈরি করতে কতগুলি নিয়ম মেনে চলা বাধ্যতামূলক, তার মধ্যে রয়েছে, পর্যাপ্ত পরিকাঠামো, অনুমোদন, পর্যাপ্ত শিক্ষকের বন্দোবস্ত থাকা জরুরি। সকল নিয়ম মানার পর সেই আবেদন রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে অনুমোদন মিললে তবেই গড়ে তোলা যাবে কোনও কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর স্টাডিজ।
মোতিহারির মহাত্মা গান্ধি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় ১৬টি কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র ২টি শিক্ষাকেন্দ্র নিয়ম মেনে গড়ে উঠেছে। বাকি সব কটি শিক্ষা কেন্দ্রের নেই কোনও অনুমতি। এই বিষয়ে মহাত্মা গান্ধি কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, মহেশ শর্মাকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি জানিয়েছেন, ‘এই ধরনের কিছু অভিযোগ তার কানে এসেছে, অনেক ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম লঙ্ঘন করা হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই তদন্ত শুরু হয়েছে’। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের তরফে শিক্ষামন্ত্রকের কাছে এই বিষয় সম্পর্কে জানতে চেয়ে একটি ই-মেল করা হলেও তার কোন উত্তর মেলেনি।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন