অতিমারিতে গতবছর হয়নি পরীক্ষা। প্রায় ২ বছর পর ফের পরীক্ষাকেন্দ্রে পরীক্ষা। তা-ও আবার মাধ্যমিক। আগামিকাল, সোমবার থেকে পর্ষদের নির্দেশ অনুযায়ী সমস্ত রকম স্বাস্থ্যবিধি মেনেই পরীক্ষা হবে। পরতে হবে মাস্ক, মানতে হবে নির্দিষ্ট দূরত্ববিধি - শুধু কোভিড নয়, শরীরকে সুস্থ রাখতেই পরীক্ষার স্থানে থাকবে আইসোলেশন এবং চিকিৎসকদের উপস্থিতি। এ তো গেল দৈহিক বিষয়, কিন্তু মানসিক ভাবে একজন পরীক্ষার্থী কীভাবে নিজেকে প্রস্তুত করবে, এখন সবথেকে বড় প্রশ্ন এখানেই।
শিশুদের পড়াশোনা ছাড়াও যে বিষয়ে পরীক্ষার সময় সবথেকে বেশি নজর দেওয়া দরকার, সেটি হল ওদের মানসিক চাপ এবং বিষয় সামগ্রী। ওরা মন থেকে ভেঙে পড়েছিল অনেকদিন ধরেই, বাড়িতে আবদ্ধ থাকার কারণে অবসাদ গ্রাস করেছিল, স্কুলে যাওয়ার সুযোগ সেইভাবে পায়নি, তারপরেই পরীক্ষার ব্যস্ততা। মনস্তত্ত্ববিদ অভিষেক হান্সা বলছেন, "সবথেকে ভাল এখানেই হত যদি আরও কিছুদিন আগে স্কুল খুলে ওদের একটু স্বাভাবিক অবস্থায় এনে তারপর পরীক্ষার ব্যবস্থা করা, কারণ নির্দিষ্ট রুটিন থেকে সরে গেলে যে কোনও মানুষের পক্ষে সেটিকে গ্রহণ করা মুশকিল হয়ে যায়। ওদেরও তাই হয়েছে, সুতরাং নার্ভের একটি চাপ তো থাকবেই।"
প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি বললেন, "পরীক্ষার সময় অত্যধিক মাত্রায় রাত জেগে না পড়লেই ভাল, যেটুকু পড়েছে সেটিকে ভাল করে মনে রাখা খুব দরকার। প্রয়োজনে মিনিট দশেকের জন্যে মেডিটেশন করতে পারে। এবং পরীক্ষার হলে প্রশ্নপত্র পাওয়ার পরে যেটা সবথেকে সহজ লাগবে সেগুলো দিয়েই লেখা শুরু করতে হবে। প্রথমেই যদি কঠিনের দিকে চোখ পড়ে তবে শেষে গিয়ে ভাল হবে না। তার সঙ্গে বাবা মায়ের ভূমিকাও কিন্তু ভীষণ প্রয়োজনীয়। ওদের পাশে থাকুন, যদি কোনও বিষয়ের পরীক্ষা খারাপ হয় তবে বকাবকি করবেন না, অতীত ভেবে এগিয়ে যেতে বলুন। ৯০% নম্বর পেতেই হবে এইভাবে চাপ দেবেন না, ওদের মোটিভেট করুন। নইলে অপ্রীতিকর ঘটনার সাক্ষী আপনি আমি যে কেউ হতে পারি।"
আরও পড়ুন সোমবার থেকে শুরু মাধ্যমিক পরীক্ষা, পরীক্ষার্থীদের জন্য গাইডলাইন পর্ষদের
বছর দুয়েকের ব্যবধানে স্কুলে গিয়ে পরীক্ষা দেওয়ার বিষয়টিতে ছেদ পড়েছিল, স্কুলের আবহাওয়ার সঙ্গেই তাদের সেইভাবে সম্পর্ক ছিল না। এই জায়গায় দাঁড়িয়ে ছোটদের মানসিক চাপ এবং পরীক্ষা সংক্রান্ত ভয় থাকা খুব স্বাভাবিক, তার থেকেও বড় কথা মাধ্যমিকের সিট পরে অন্য স্কুলে, সেই নিয়ে এক ধরনের চাপা আতঙ্ক খুবই কাজ করে। জীবনের সবথেকে বড় পরীক্ষা বলে কথা, নিজেকে শান্ত রাখা খুব জরুরি - ঠিক এমনটাই মনে করছেন, হরিমতি গার্লস হাই স্কুলের শিক্ষিকা ইন্দ্রাণী সেনগুপ্ত। বললেন, “যেহেতু এক বছরের ব্যবধানে একটি বড় পরীক্ষার ব্যাপার, তাই অবশ্যই আজ থেকে ওদের শান্ত থাকতে হবে। বেশি মানসিক চাপ নিলে চলবে না। যার যেই স্কুলে সিট পড়েছে চিন্তা নেই, সরকার এবং মধ্যশিক্ষা পর্ষদের নির্দেশ অনুযায়ী ওদের সম্পূর্ণ সাহায্য করা হবে। দেখা হবে যাতে ভয় কেটে যায়, প্রথম দিন পরীক্ষার্থীদের সঙ্গে অভিভাবকের ক্লাসরুমের ভেতরে ঢোকার নির্দেশ রয়েছে। আমাদের শিক্ষক শিক্ষিকাদের থেকে ওরা সবরকম সুবিধা পাবে।”
প্রস্তুতির সম্পর্কে কী বললেন তিনি? শিক্ষিকা জানান, আজ থেকেই একদম নিজেকে মানসিক ভাবে শান্ত থাকতে হবে। যা পড়াশোনা ওরা করেছে সেটিকে একটু দেখে নিতে হবে, যাকে বলা হয় রিভিশন। হালকা খাবার খাক, পরীক্ষার সময় শুধু পড়লেই হল না বরং শরীরকে ঠিক রাখতে হবে। দরকার পড়লে বাবা মায়ের সঙ্গে কথা বলুক, নিজের মতো করেই পড়াশোনা নিয়ে চিন্তা ভাবনা করুক, তাহলে খুবই ভাল হবে। লেখাপড়ার সঙ্গে ওরা অনেকদিন জড়িয়ে আছে, শুধু বাহ্যিক চাপ না থাকলেই হল।
আরও পড়ুন কোর্স বন্ধ হবে না! ভারতীয় মেডিক্যাল পড়ুয়াদের স্থানান্তরিত করা হবে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে?
সহজ অর্থে, আজকে থেকে গোটা পরীক্ষায় নিজেকে এক্কেবারে শান্ত থাকতেই পরামর্শ দিচ্ছেন সকলে। যাই-ই হোক না কেন, উত্তেজিত এবং ভয় পেলে চলবে না তাহলেই সুষ্ঠুভাবে ওরা পরীক্ষা দিতে পারবে।