বছর দুয়েক পর মাধ্যমিক। স্কুল খোলার কিছুদিনের ব্যবধানেই অফলাইন মোডে এবছরের পরীক্ষা। ছাত্র-ছাত্রীদের মনের অবস্থা ঠিক কেমন? বিধিনিষেধই বা কতটা? ঘুরে দেখল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা।
যেহেতু আজ প্রথম দিন, সকাল ১১টার মধ্যেই ছাত্রদের পৌঁছানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। হিন্দু স্কুলের সামনে যেতেই নজরে পড়ল বেশ ফাঁকা পরিস্থিতি। হাতে গুনে দুজন ছাত্র সেখানে। হিন্দু স্কুলে সিট পড়েছে শ্রীজন বিদ্যালয় এবং সংস্কৃত স্কুলের। স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফে জানা গেল সকাল সাড়ে দশটার আগে ঢুকতে দেওয়া হবে না। ধীরে ধীরে কলকাতা পুলিশের তৎপরতায় স্কুলের দরজা খুলে দেওয়া হয়, বাইরে টাঙিয়ে দেওয়া হয় আসন বিন্যাস। পড়ুয়ারা আস্তে আস্তে খুঁজে নেয় নিজেদের বসার ব্যবস্থা। হাতে বই, মুখে চিন্তার হালকা ভাঁজ, তবে খুব একটা ভয়ের লক্ষণ নেই। পরিবারের সদস্যদের সংখ্যাও বেশ কম। ছাত্রদের মুখে মাস্ক কিন্তু যথারীতি বহাল। পরীক্ষাকেন্দ্রে ভিতরে প্রবেশের মুখে স্যানিটাইজ করার ব্যবস্থাও ছিল।
ছাত্রদের বেশিরভাগ নিজেদের মধ্যে আলোচনা করতে ব্যস্ত। এক ছাত্র বলল, "অনলাইন মোড নয় বরং অফলাইন মোডে পরীক্ষা হওয়াই ভাল। নিজেদের পরীক্ষা নিজেরা দিলেই একটা আলাদা আনন্দ থাকে। পরীক্ষা জীবনে অনেক দিয়েছি সুতরাং ভয় থাকার কথা নয় একেবারেই। যা পড়ছি শুধু সেটুকু লিখব, সেই অনুযায়ী নম্বর পাব।" সহমত সংস্কৃত কলেজিয়েট স্কুলের ছাত্রও, তারও একই বক্তব্য যে স্কুলে সেইভাবে আসতে না পারলেও ইচ্ছে ছিল পরীক্ষা হলে এসেই দেব, নিজের কৃতিত্বে পরীক্ষা দেওয়ার আনন্দই আলাদা। ছাত্রের মা জানালেন, স্কুল খোলা নিয়ে একধরনের অসন্তোষ ছিল, চিন্তাও ছিল যে ওরা নিজেদের পরীক্ষা নিজে দিতে পারবে কি না? তবে ভেবে ভাল লাগছে যে এই সমস্যা ওদের ভুগতে হল না। হালকা একটু চাপ তো থাকবেই, তবে স্বস্তিও আছে।
ছেলেদের স্কুলের পাশাপাশি ঢুঁ মারা হল, ভিক্টোরিয়া ইন্সটিটিউশনে। সিট পড়েছে শিয়ালদহ লরেটো স্কুল এবং টাকি হাউস গভঃ গার্লস হাই স্কুলের। সেখানে দেখা মিলল অভিভাবকদের, মেয়েদের নিজ দায়িত্বে পরীক্ষা হলে পৌঁছে দিচ্ছেন তাঁরা। অবশ্যই মুখে রয়েছে মাস্ক, তবে দুরত্ববিধি সেইভাবে নজরে পড়ল না। ওরা নির্দেশ মেনেই ভেতরে প্রবেশ করে লাইন অনুযায়ী। টাকি হাউসের এক ছাত্রী তানিশা চক্রবর্তী জানাল, "পড়াশোনা নিয়ে ভয় কোনওদিন ছিল না, কিন্তু পরীক্ষা নিজে দিতে পারব কিনা সেই নিয়ে চিন্তা ছিল আজ যে সেটা সম্ভব হচ্ছে, একদিকে শান্তি"। আরেক ছাত্রী তিতলি মণ্ডলের বক্তব্য, ঠপরীক্ষা অফলাইন হলেই ভাল! অনলাইনে পড়াশোনা এবং পরীক্ষা দুটোই হয় না। সিলেবাস নিয়েও ভয় ছিল কিন্তু পড়াশোনা করলে আর চিন্তা নেই।ঠ এক পরীক্ষার্থীর মা শুচিস্মিতা মণ্ডলের বক্তব্য, "যেটুকু পড়েছে সেটুকু সুস্থ মতো লিখতে পারলেই হল। জীবনের বড় পরীক্ষা, একটু ভয় থাকা তো স্বাভাবিক মাথা ঠান্ডা রেখে কাজ করলেই হল।"
এবারের মাধ্যমিকের প্রথম দিন উপলক্ষে পুলিশি সাহায্যও দেখবার মতো। স্কুলের দরজায় তারা যথেষ্ট সাহায্য করছেন ছাত্র-ছাত্রীদের। ওদের সুবিধার্থে শিক্ষক-শিক্ষিকারা যে সাহায্য করবেন তা জানানো হয়েছিল আগেই। এবার শুধুই ভালমতো পরীক্ষা দেওয়ার পালা।