সামনেই মাধ্যমিক। জীবনের প্রথম বড় পরীক্ষা হিসেবে একটু ভয় তো থেকেই যায়। একেই নিজের চাপ, তাঁর সঙ্গে পরিবারের সকলের চাপ, অন্য স্কুলে পরীক্ষা দিতে যাওয়ার ভয়ও কাজ করে। গার্ড কেমন পড়বে, প্রশ্ন কেমন আসবে, এই নিয়েও অনেক চিন্তিত থাকে পড়ুয়ারা। সাতটি বিষয়ের মধ্যে অনেকেই যে বিষয়টিতে সবথেকে বেশি ভয় পায় সেটি হল গণিত। কথায় বলে, শুরুতেই অঙ্ক পরীক্ষায় গোলমাল হলে পরের পরীক্ষাগুলোও নাকি খারাপ হয়।
কিন্তু অঙ্ক নিয়ে আদৌ ভয় পাওয়ার কি কিছু আছে? সহজ হিসেব এবং ফর্মুলাই অঙ্ক থেকে উদ্ধার পাওয়ার একমাত্র রাস্তা। না রয়েছে মুখস্থ করার সুযোগ। কেবলমাত্র বারবার অভ্যাসই অঙ্কের ভয় কমিয়ে দিতে পারে। দীর্ঘ দুবছর করোনা মহামারীর পর মাধ্যমিক পরীক্ষার্থীদের আবারও সুস্থ পরিবেশে পরীক্ষা। হাতে গুনে আর কিছুদিন। কী অভ্যাস করবেন আর কী নয়? জানাচ্ছেন হুগলি ব্রাঞ্চ স্কুলের গণিতের শিক্ষক শ্রী শুভ্রকুমার চক্রবর্তী।
প্রশ্ন কেমন আসবে, এই নিয়েই শুরু থেকে চিন্তায় থাকেন পড়ুয়ারা। জটিল অথবা ঘোরালো অঙ্ক দেখলেই পরীক্ষা হলে যেন মাথায় বাজ পড়ে পড়ুয়াদের। উত্তরে শুভ্রবাবু বলেন, "প্রশ্ন নিয়ে চিন্তার কোনও কারণ নেই। সিলেবাসের বাইরে প্রশ্ন কোনওদিন আসে না। সবার জন্য চিন্তা করেই তো প্রশ্ন করা, সেই নিয়ে ভয় পাওয়ার কারণ নেই"।
শেষ মুহূর্তে কোন কোন বিষয়ে চোখ বোলালে ভাল?
প্রথমত, এখন যেহেতু হাতে আর বেশি সময় নেই, সব তো চ্যাপ্টার ধরে ধরে করা সম্ভব নয়। তাই, আগামী ১০ দিনের মধ্যে টেস্ট পেপার অথবা Question Bank ভাল করে অনুশীলন করতে হবে। সময় ধরে ধরে যদি এটা করতে শুরু করে তাহলেই বুঝতে পারবে যে কোন বিভাগটি ওদের অসুবিধা হচ্ছে। সেই অনুযায়ী ওরা নিজেদের দুর্বল দিকটা আরও ভাল করে খতিয়ে দেখতে পারবে। যদি পাটিগণিত এর কোনও দিকে সমস্যা হয় তাহলে সেটা ভাল করে সলভ করতে হবে।
দ্বিতীয়ত, অবজেকটিভ এবং শর্ট প্রশ্ন প্রায় ৩৬ নম্বর। এটা কিন্তু নম্বর তোলার এক বিরাট সুযোগ। তাই এই বিভাগে ভুল করলে চলবে না। প্রতিদিন এগুলো অনুশীলন করা উচিত। তাহলে ফর্মুলা ভুলবে না পড়ুয়ারা। আগামী দু তিনদিনের মধ্যে ফর্মুলা একদম মনের মধ্যে গেঁথে নিতে হবে।
তৃতীয়ত, উপপাদ্য। যত শেষের দিন আসবে উপপাদ্য কিন্তু ভাল করে অভ্যাস করতে হবে। কারণ এতে অদল বদলের কোনও জায়গা নেই। আর অনেক উপপাদ্য সিলেবাসের বাইরে আছে। যেগুলো রয়েছে সেগুলো ভাল করে প্র্যাকটিস করতে হবে, কারণ নম্বর ভাল উঠবে। সম্পাদ্য এবং ত্রিকোণমিতি। সূত্রে বাঁধা। আঁকা প্র্যাকটিস করলে খুব ভাল। এগুলো থেকে নম্বর কাটার জায়গা থাকে না।
চতুর্থত, জ্যামিতির প্রয়োগ। বইতে যেগুলো করা আছে ওগুলোই করুক। ছোট ছোট অঙ্ক গুলো, কারণ মাত্র ৩ নম্বর আছে এতে। খুব বড় প্রয়োগ দেখার দরকার নেই। ছোট প্রয়োগ অভ্যাস করলেই ভাল।
পরীক্ষা হলে পৌঁছানোর পর কোনও টিপস?
- পরীক্ষা হলে পৌঁছতে গেলেও শরীর ঠিক রাখা খুব দরকার। অন্তত ৫/৬ দিন আগে থেকে খাটাখাটনি কমিয়ে দেওয়া উচিত। কারণ এতে খুব সমস্যা। সুস্থ থাকলেই পরীক্ষা ভাল হয়।
- পরীক্ষা হলে অঙ্কের ক্ষেত্রে ক্যালকুলেশন যেন ভুল না হয়। অনেকেই তিন দুগুনে ৫ করে আসেন চাপের চোটে তাই সেটা একটু সামলে। এইসব ভুল খাতায় অনেক থাকে। তাই, শান্ত মাথায় সঠিক গণনা করা এবং ক্রসচেক করা দরকার।
- আর যেটা না বললেই নয়, খাতায় প্রশ্নের উত্তরগুলো সিরিয়ালি রাখা দরকার। যদি ৩ নম্বর প্রশ্নের উত্তর লেখ তবে পরপর ৩ এর উত্তর লিখতে হবে। ৩ এর প্রথম অঙ্কটা করলাম, তারপর ৫ এর তৃতীয় অঙ্কটা করলাম এতে কিন্তু যারা খাতা দেখেন তাঁদের সমস্যা হয়ে যায়। অঙ্ক অনেকসময় বোঝা যায় না, ফলে শিক্ষকদের অসুবিধে হলে নম্বরের দিকে ছাত্রদের অসুবিধা হবে।