২০১৩ সালে পথ চলা শুরু করে GKCIET, উদ্বোধন হয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ও কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গান্ধীর হাত ধরে। মালদহবাসীর এক স্বপ্নের পথ চলা শুরু সেদিন। মড্যুলার প্যাটার্নে চলে কলেজ। মাধ্যমিক পাশের পর প্রথম দু বছরের ভোকেশনাল কোর্স, তারপর দু বছরের ডিপ্লোমা এবং তারপর ইঞ্জিনিয়ারিং (বি টেক) পড়ার সুযোগ, এই হল রুটম্যাপ।
ভর্তি নেওয়া হল সর্বভারতীয় প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে। ২০১৪ সাল, রাষ্ট্রপতি উদ্বোধন করলেন বি টেক কোর্সের। এ যেন স্বপ্ন পূরণের এক ধাপ পেরোনো। ২০১৬ এলো, প্রথম বি টেকের ব্যাচ বেরলো, পড়াশোনা হল, কিন্তু সার্টিফিকেট পাওয়া সম্ভব না। আজব! অবাক হচ্ছেন? সত্যিই, জানা গেল কলেজের বি টেক ডিগ্রি প্রদানের ছাড়পত্র নেই। স্বপ্নেরা ভেঙে খানখান! আকাশ থেকে পড়লাম আমরা, সে আঘাত সহ্য করার ক্ষমতা আমাদের ছিল না। বিশ্বাস হয়নি, আমরা ভুয়ো কলেজের ছাত্র, সামনে অনিশ্চিত ভবিষ্যত!
আমরা লড়াইয়ে নামলাম। আমরা তুচ্ছ! কিন্তু এ লড়াই লড়তেই হবে জীবনের স্বার্থে। দীর্ঘ ২৬ দিন অনশন, জাতীয় সড়ক অবরোধ, রেল অবরোধের পর ডিপ্লোমা পর্যন্ত অ্যাফিলিয়েশন দেওয়ার কথা ঘোষণা করল রাজ্য সরকার। বি টেক ডিগ্রি এন আই টি দুর্গাপুর দেবে, একথা চিঠি দিয়ে জানায় কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন দপ্তর। কিন্তু কথা রাখেনি এন আই টি দুর্গাপুর, কোনো শংসাপত্র দিতে বা ভর্তির সুযোগ দিতে অস্বীকার করে তারা। তারপর চলল এখান থেকে সেখান – সর্বত্র দরবার। কোনো ফল মেলে নি।

২০১৮ র শুরুতে বঞ্চিত ছাত্র-ছাত্রীরা জীবনের একটা বছর বাঁচানোর উদ্দেশ্যে মড্যুলার প্যাটার্নের নতুন নিয়ম অনুযায়ী গণিখান কলেজেই ভর্তির দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন আবার। কর্তৃপক্ষ লিখিত আশ্বাস দেন, ২০১৮ র মার্চ নাগাদ MAKAUT অনুমোদন পাবে কলেজ। মিটবে সমস্যা। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি।
এভাবে বারেবারে আন্দোলন চলে, বারংবার আশ্বাস মেলে, আর এক একটা দিনর শেষে অন্ধকার নেমে আসে। বারবার প্রতারিত হতে থাকি আমরা।

ডিপ্লোমা সার্টিফিকেট নিয়েই কেউ কেউ চাকরির জন্য চেষ্টা চালাল, পেটের দায়! আর কদিন এভাবে শূন্যহাতে ফেরা যায়! কিন্তু সরকারি সংস্থায় চাকরির জন্য গেলে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। স্পষ্ট জানানো হয় দুবছরের ডিপ্লোমা বৈধ নয় যতক্ষণ পর্যন্ত ২ বছরের ডিপ্লোমার আগে দু বছরের ITI অথবা 12th ভোকেশনাল পাস করবে। আমাদের যেহেতু ডিপ্লোমার আগে কলেজ কর্তৃপক্ষ ২ বছরের সার্টিফিকেট কোর্স করিয়েছে আমরা সে ব্যাপারে কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইলে তাঁরা চুপ থাকেন। এবং এটা ITI এবং ভোকেশনাল কোনোটাই নয় তাও জানিয়ে দেওয়া হয়।
এবার আর চুপ থাকা নয়, তীব্র লড়াইয়ে নামি। এবার আর হেরে যাওয়া নয়। এবার শেষ দেখে ছাড়ার পালা। আন্দোলন চলে, চলে দীর্ঘ ১৬ দিনের অনশন, তবুও প্রতারিত ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে ছেলেখেলা চলতে থাকে। জোটে আশ্বাস, জোটে হুমকি, হয় পুলিস কেস, মিথ্যে মামলায় ফাঁসানো। এই মাসেই রেজিস্ট্রার আমাদের সাফ জানিয়ে দেন MAKAUT আমাদের পুরোনো ছাত্রছাত্রীদের কোনো দায়িত্ব নিতে পারবেনা। তাছাড়া ওঁরা এও জানান যে আমাদের প্যাটার্নের সার্টিফিকেটে MAKAUT এ ভর্তি হওয়াও অসম্ভব। এক কথায় এটা একটা অবৈধ সার্টিফিকেট এবং ইতিমধ্যেই আমাদের কিছু ছাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরির পরীক্ষায় পাস করেও ডকুমেন্ট ভেরিফিকেশনের সময়ে বাদ পড়েছে। আমরা এই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা ভেবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি, আন্দোলন করার অপরাধে আমাদের বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
মেডিক্যাল কলেজের অনশন এবং আন্দোলনের সময় থেকেই এ বিষয়টি নিয়ে কলকাতার নাগরিক সমাজের টনক নড়ে। তার নেপথ্যে অবশ্যই রয়েছে ‘বাংলা পক্ষ’ নামের একটি সংগঠন। তাঁরা আমাদের পাশে রয়েছেন নানাভাবে। কিন্তু এ বিষয়টি এতটাই বৃহৎ, যে কেবল একটি সংগঠনের পক্ষে সম্পূর্ণ দায়ভার নেওয়া সম্ভব নয়। আমাদের ন্যায্য দাবির পাশে চাই বৃহত্তর নাগরিক সমাজকে। যাঁরা মেডিক্যাল বা যাদবপুরের আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে কর্তৃপক্ষের উপর চার সৃষ্টি করেন, তাদের বাধ্য করেন পাশা উল্টে দিতে।
(কৃতজ্ঞতা- কৌশিক মাইতি)