Advertisment

'দুয়ারে শিক্ষা', 'পাড়ায় শিক্ষালয়' করে আদৌ লাভ হবে পড়ুয়াদের? কী বলছে শিক্ষামহল?

নিজেদের মতামত জানিয়েছেন ছাত্র সংগঠনের নেতারাও, ধোঁয়াশায় অভিভাবকরা।

author-image
Anurupa Chakraborty
New Update
'দুয়ারে শিক্ষা', 'পাড়ায় শিক্ষালয়' করে আদৌ লাভ হবে পড়ুয়াদের? কী বলছে শিক্ষামহল?

আবার কবে ফিরবে স্কুলের পঠনপাঠন?

শিক্ষা শব্দটির সঙ্গে জড়িয়ে থাকে শ্রদ্ধা এবং ভালবাসা। ছোট থেকেই পড়াশোনাকে সন্মানের আসনে বসানোর মত শিক্ষায় শিক্ষিত করা হয় প্রত্যেককেই। করোনা মহামারীতে দুই বছর ধরে প্রাথমিক স্তরের স্কুলগুলো একেবারেই বন্ধ। কোনও কোনও শিশু আজ অবধি স্কুল মুখো হয়নি। ওদের জীবনযাত্রায় বিরাট মাপের ছেদ তৈরি হয়েছে। শিক্ষকরাও তাঁদের বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে নিয়ে আসার মতো প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন। গত পরশু যদিও বা শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন স্কুল খোলার বিষয়ে, শীঘ্রই জানানো হবে সেই প্রসঙ্গে। তারপরেও বাচ্চাদের অথবা প্রাথমিক স্তরের পড়ুয়াদের উদ্দেশ্যে পাড়ায় শিক্ষালয়- এই উদ্যোগের কথাই ভাবা হয়েছে।

Advertisment

প্রশ্ন এখানেই এটি কতটা যুক্তিযুক্ত! আদৌ যারা এখনও পর্যন্ত স্কুলের গণ্ডি পার করেনি, তাদের কাছে কতটা গ্রহণীয় হবে এটি? শিশুদের স্কুলের বেঞ্চে না বসিয়ে পাড়ায় শিক্ষাদানের বিষয়টি আদৌ কি সঠিক? এই নিয়েই কথা বলা হয় তিন ছাত্র সংগঠনের সদস্যের সঙ্গে! কী বলছেন তাঁরা জেনে নিন। 

প্রসঙ্গে যখন 'পাড়ায় শিক্ষালয়' তখন, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের রাজ্য সভাপতি তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য বলছেন, "এটি নিঃসন্দেহে একটি ভাল উদ্যোগ। একেবারে যখন বাচ্চারা ঘরমুখো হয়েছিল তখন সেই জায়গায় তাদের পাড়ায় গিয়ে পড়ানোর চিন্তা বেশ অভিনব। অতীত ঘাঁটলে দেখা যাবে টোল কিংবা পাঠশালার মতো স্থানেই আগে শিক্ষাদান করা হত সুতরাং এটি একটি ভাল প্রয়াস। বাচ্চারা শিখতে পারবে।"  

অন্যদিকে এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য আগেই জানিয়ে ছিলেন সরকার তাদের অনুকরণ করেই পাড়ায় শিক্ষালয় শুরু করছেন। যদিও বা এটি কোনও সমাধান নয়। তিনি বলছেন, "আমরা বাচ্চাদের মঙ্গলার্থে এমন কিছু শুরু করেছিলাম, যাতে ওরা পড়াশোনা থেকে একেবারে দূরে না সরে যায়। তবে শাসকদলের কড়া সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত, সমস্ত বিধি মেনে প্রটোকল বিচার করে প্রাথমিক স্কুল অবশ্যই খোলা উচিত। সেই কারণেই তারা শাসকদল! নিশ্চিত বিচার করা আরও পিছিয়ে গেল।" 

আরও পড়ুন বন্ধ স্কুল-অনলাইন ক্লাসে আটকে শৈশব, একাগ্রতা হারাচ্ছে শিশুরা?

সহমত পোষণ করেছেন এবিভিপির পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক সুরঞ্জন সরকার। তাঁর বক্তব্য, "সম্পূর্ণ বিষয়টি হাস্যকর! পাড়ায় আবার শিক্ষালয়? এ আবার কেমন করে হয়? একজন শিক্ষক কোথা থেকে বাচ্চাদের জোগাড় করবেন? তার পক্ষে আদৌ সম্ভব? শিক্ষা নিয়ে নতুন চক্রান্ত, ছিনিমিনি খেলার সুযোগ! শিক্ষাকে জলাঞ্জলি দেওয়ার এক অভিনব প্রয়াস। অবশ্যই ভাবনা চিন্তা করা উচিত, নয়তো মুশকিল, বাচ্চাদের ভবিষ্যৎ কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে এটা ভাবনাতীত।"  

আরও পড়ুন টিভির মাধ্য়মে পড়াশোনা! পড়ুয়াদের পক্ষে আদৌ লাভদায়ক? কী বলছে শিক্ষামহল?

'দুয়ারে শিক্ষা' কতটা যুক্তিযুক্ত তাদের কাছে? শিক্ষার সঙ্গে দুয়ার কী মনে করছেন তারা? এপ্রসঙ্গে তৃণাঙ্কুর ভট্টাচার্য বলছেন, "মুখ্যমন্ত্রী সবকিছুই মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে হাজির করছেন, যাতে সকলে সমানভাবে সুবিধা পায়। এটি তারই এক রূপ, যেটি কার্যকর হলে অনেকেরই লাভ হবে।" অন্যদিকে সৃজন ভট্টাচার্য বলছেন, "বাচ্চাদের স্কুল মানে শুধুই পড়াশোনা নয়, তাদের নিয়মানুবর্তিতা শেখানো, সোশ্যাল তৈরি করা, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো সবকিছুই আছে, কাজেই সুরাহা কিছু হবে বলে মনে হয় না।"  

শুধু সংগঠন নয়, ধোঁয়াশায় রয়েছেন অভিভাবকরাও। তাদের বেশিরভাগই জানিয়েছেন, পাড়ায় শিক্ষালয় শুনে যা মনে হচ্ছে ঠিক যেন টিউশনের মতো। বাচ্চারা স্কুলে না গিয়ে ওদের অভ্যাস খারাপ হয়ে গেছে। ওদের পড়াশোনায় মন নেই। সবথেকে বড় কথা স্কুলের সঙ্গে অনুশাসন জড়িয়ে থাকে যেটি বাড়িতে বসে সম্ভব নয়। আর একটি এলাকায় নানান স্কুলের ছাত্র-ছাত্রী থাকে, অনেকে আবার দূরের স্কুলেও পড়াশোনা করে। কীভাবে বিষয়টিকে পরিচালনা করা হবে সেই নিয়েও তাঁরা চিন্তায়। 

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

Education SFI Primary School ABVP duare sikkha paray sikkhalay
Advertisment