আগামী ১৫ অগাস্টের পর স্কুল চালু করার ভাবনা চিন্তা রয়েছে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের (এইচআরডি) অভ্যন্তরে। কিন্তু কীভাবে চলবে স্কুল, তার স্পষ্ট কোনও গাইডলাইন এখনও প্রকাশ করা হয়নি। স্কুল প্রশাসনের হাতে দুুই মাসের চেয়েও কম সময় রয়েছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্কুলের পরিকাঠামো তৈরি করার। তবে অভিভাবকরা শিক্ষার্থীদের স্কুলে পাঠাতে এখনও স্বচ্ছন্দ বোধ করছেন না।
অনেক বাবা-মা তাঁদের বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে রাজি নন, এবং অনলাইন মাধ্যমে ক্লাস চালিয়ে যাওয়ার দাবি জানিয়েছেন। তবে যাঁদের হাতের কাছে অনলাইন ব্যবস্থা নেই, তাঁদের সমস্যার মুখমুখি হতে হয়েছে। পেরেন্টস অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃক অনলাইন শিক্ষা চালিয়ে যাওয়ার একটি আবেদনে দাবি করা হয়েছে যে স্কুলগুলি "(সংশ্লিষ্ট) রাজ্যে করোনা পরিস্থিতি নির্মূল না হওয়া পর্যন্ত" বন্ধ রাখতে হবে। আবেদনে ২২ জুন পর্যন্ত ৯.০৬ লক্ষেরও বেশি স্বাক্ষর করা রয়েছে। দাবি করা হয়েছে, " বাচ্চাদের নিজেদের সুরক্ষার কারণেই বিদ্যালয়ে পাঠানো হবে না, সুতরাং ই-লার্নিং মোডে শিক্ষা চালিয়ে যাওয়া উচিত।"
গুরুগ্রামের (গুড়গাঁও) দশম শ্রেণীর এক শিক্ষার্থীর মা ইন্ডিয়ানএক্সপ্রেস ডটকমকে বলেছেন, “বাচ্চাকে স্কুলে পিপিই কিট পরে পাঠাতে হবে, ভাবতেই ভয়ানক লাগছে। মা হিসেবে আমার সন্তানের সুরক্ষাটাই আমার প্রাথমিক চিন্তার বিষয়, এবং আমাদের বাচ্চাদের সম্পূর্ণ সুরক্ষিত না হওয়া পর্যন্ত কেউ আমাদের জোর করে তাদের স্কুলে পাঠাতে বাধ্য করতে পারে না। পরিস্থিতির আরও উন্নতি না হওয়া অবধি অনলাইন ক্লাস চলতে থাকুক।”
আরও পড়ুন: করোনা যোদ্ধা শিক্ষকরাও, বেতন কাটা নিয়ে অসন্তুষ্ট হাইকোর্ট
সিলেবাস কমিয়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি আরও বলেছেন, "শিশুদের চাপ কিছুটা হালকা করতে স্কুলগুলির সিলেবাস ব্যাপকভাবে কমিয়ে দেওয়া উচিত। বাড়িতে বন্দী থেকে, সম্পূর্ণ বছর পড়াশোনা করে, তারপর পরীক্ষা বাতিল হতে দেখা, তার ওপর অতিমারীর ভয় এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা, এতে এমনিতেই যথেষ্ট চাপ পড়ছে ওদের ওপর।"
অন্যদিকে, অনেক বাবা-মা, যাঁদের মধ্যে এর আগে অনলাইনে ক্লাসের পড়াশোনার সঠিক পদ্ধতি না জানার কারণে উদ্বেগ তৈরি হয়েছিল, তাঁরাও এখন অন-ক্যাম্পাসের তুলনায় অনলাইন শিক্ষাকেই বেছে নিচ্ছেন। তবে এই প্রসঙ্গে দিল্লির ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরোলজিকাল সায়েন্সেস-এর একটি গবেষণা উদ্ধৃত করে অমৃতসর পেরেন্টস ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বরুণ খান্না বলেছেন, "অনলাইন শিক্ষার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের অনেক বেশি সময় স্ক্রিনের সামনে থাকতে হচ্ছে, যা তাদের মানসিক বিকাশকে প্রভাবিত করতে পারে।"
খান্না আরও বলেন, “যদি অনলাইন শিক্ষাই একমাত্র পন্থা হয়, তবে আমাদের নিশ্চিত করা উচিত যে, এটি সঠিকভাবে পরিচালনা করতে কী কী করা প্রয়োজন। কেবল শিশুদের জন্যই নয়, শিক্ষকদেরও ক্লাস সামলে, বাবা-মায়েদের সঙ্গে কথা বলে, নিজেদের ঘরবাড়িও সামলাতে হয়। সুতরাং সঠিক গাইডলাইন তৈরি করতে হবে।”
চিকিৎসক তথা অভিভাবক রাধিকা সিং বলেন, “বাবা-মায়েরা যদি মনে করেন যে অগাস্টের মধ্যে তাঁদের বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোর পক্ষে পরিস্থিতি অনুকূল হয়েছে, তবে তাঁদের সন্তানের মধ্য়েও সেই বিশ্বাস জাগাতে হবে। তাদের বোঝাতে হবে গাইডলাইন সম্পর্কে।"
উল্লেখ্য, দিল্লির এক স্কুল প্রিন্সিপালের কথায়, বর্ষার মরসুমে এমনিতেই নানারকম রোগের শিকার হয়ে থাকে শিশুরা, অতএব এই মুহূর্তে অতিমারীর আবহে স্কুল খুলে দেওয়াটা খুব বুদ্ধির কাজ নাও হতে পারে। তবে একটি শিশুও যদি স্কুলে এসে পড়তে চায়, এবং সরকারের তাতে অনুমোদন থাকে, তবে স্কুল খোলা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
Read the full story in English