'জাতীয় শিক্ষানীতি কোনও নির্দিষ্ট সরকারের নয়, দেশের নীতি। দেশের স্বার্থের নয়া জাতীয় শিক্ষা নীতি বলবৎ হওয়া প্রয়োজন।' সোমবার নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে রাষ্ট্রপতি, রাজ্যপাল ও রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রীদের সঙ্গে ভার্চুয়াল আলোচনা সভায় বক্তব্য পেশের সময় এ কথা বলেন প্রদানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শিক্ষানীতিতে ন্যূনতম সরকারি হস্তক্ষেপের পক্ষে সওয়াল সওয়াল করেন তিনি। জানিয়েদেন, নয়া জাতীয় শিক্ষা নীতি আত্মনির্ভর ভারত গঠনের সহায়ক হবে। তাঁর কথায়, নতুন কোনও নীতি লাগু হওয়ার আগে নান প্রশ্ন ওঠে। এক্ষেত্রে শিক্ষার অংশীদারদের আলোচনার মাধ্যমেই তার নিরসন সম্ভব।
মোদীর কথায়, 'আমরা পরিবকর্তনের দিকে এগোচ্ছি। ফলে একাধিক প্রশ্ন ও সন্দেহের উদ্রেক হচ্ছে। অভিভাবকরা ভাবছেন নতুন ব্যবস্থায় সন্তানদের ক্ষেত্রে কতটা সহায়ক হবে। শিক্ষক সমাজ মনে করছেন পাঠক্রম কেমন হবে। পড়ুয়াদের মনেও নানা প্রশ্ন উঠছে। জাতীয় শিক্ষানীতির উদ্দেশ্য পূরণের জন্য পর্যাপ্ত সংস্থানগুলির প্রাপ্যতা সম্পর্কে অংশীদারদের মনে প্রশ্ন থাকতেই পারে।' প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেছেন, 'আলোচনার মাধ্যমেই নয়া জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে ভ্রান্তি দূর হবে। সচেতন হবেন শিক্ষার সঙ্গে যুক্ত তার প্রধান অংশীদার পড়ুয়া, শিক্ষক-শিক্ষিকা ও অভিভাবকরা। একবার সন্দেহ ও ভ্রান্তি দূর হলেই নয়া নীতি সঠিক ও সিন্দরভাবে বলবৎ করা যাবে।'
জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে প্রশ্নের জবাব দিতে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজ্যগুলোতে অনলাইনে সভা করার জন্য রাজ্যপালদের কাছে আর্জি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
নয়া জাতীয় শিক্ষানীতির গুরুত্ব সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, 'দেশের আশা, আকাঙ্খা পূরণে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে শিক্ষানীতি ও শিক্ষা ব্যবস্থার। এই বিষয়ে রাজ্য, কেন্দ্র সরকার জড়িত থাকে। তবে শিক্ষানীতিতে সরকারি হস্তক্ষেপ অত্যন্ত কম হওয়া উচিত। আজকে সরকারে আছে বা কাল মসনদে কে থাকবে, সেই বিষয়টির প্রভাব শিক্ষানীতিতে পড়া কাম্য নয়। এটা সরকারের শিক্ষানীতি নয়। এটা দেশের শিক্ষানীতি।' তিনি আরও বলেন, 'বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মধ্যে স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা তৈরি করতে হবে। পড়ুয়াদের উপর অযথা চাপ তৈরি না করে কীভাবে ভবিষ্যতের জন্য তাদের তৈরি করা হবে? এই প্রশ্নের সরল উত্তর রয়েছে নয়া শিক্ষানীতিতে।'
আত্মনির্ভর ভারতের লক্ষ্যে নয়া জাতীয় শিক্ষানীতিতে হাতেকলমে শিক্ষার উপরও জোর দেওয়া হয়েছে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী মোদী।
নয়া জাতীয় শিক্ষানীতিতে প্রাথমিক-উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থার খোলনলচে বদলে ফেলা হয়েছে। শিক্ষার অধিকারের আওতায় আনা হয়েছে ৩ থেকে ১৮ বছরের পড়ুয়াদের। পাশাপাশি বদল ঘটানো হয় পরীক্ষা ব্যবস্থায়ও। এই নীতিঅনুসারে গুরুত্বহীন হয়ে যাচ্ছে দশম বা দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ড পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় পড়ুয়াদের মুখস্থ বিদ্যার বদলে হাতেকলমে শিক্ষায় জোর দেওয়া হচ্ছে। প্রতিবছরের বদলে তৃতীয়, পঞ্চম ও অষ্টম শ্রেণিতে পরীক্ষা নেওয়ার সুপারিশ রয়েছে। দশম শ্রেণির পর কলা বিভাগ, বিজ্ঞান বিভাগ বা বাণিজ্য বিভাগের বিভাজন উঠে যাচ্ছে। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত মাতৃভাষা ও আঞ্চলিক ভাষায় শিক্ষা বাধ্যতামূলক। দ্বাদশ শ্রণিতে বোর্ডের পরীক্ষায় ৮টি সেমিস্টারের করা প্রস্তাব রয়েছে। স্নাতক স্তরে অনার্স কোর্স ৪ বছর পর্যন্ত হতে পারে। তবে প্রতি বছরের শেষে পড়ুয়ারা পাবেন সার্টিফিকেট। কোর্স শুরুর ১২ মাসের মধ্যে পড়াশোনা ছেড়ে দিলে পড়ুয়া পাবেন ভোকেশনাল কোর্সের সার্টিফিকেট। দুবছর বা ২৪ মাস পর ছাড়লে ফিলবে ডিপ্লোমার সার্টিফিকেট। আর চার বছরের কোর্স করলে পাওয়া যাবে ডিগ্রি কোর্সের সার্টিফিকেট। ফলে চাকরির ক্ষেত্রে সুবিধা হবে।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন