খুদে পড়ুয়াদের কাছে যেন ২ বছর পর শাপমুক্তি। শিশুমন একেবারেই আটকে ছিল স্কুল প্রাঙ্গণের বাইরে। ওদের মানসিক চাপ থেকে আচার আচরণ ব্যবহার সবেতেই এসেছিল বিরাট বদল। বেড়েছিল জেদ, কমেছিল শিক্ষায় মনোনিবেশ। তবে আজ থেকে আবার স্কুলে আসা শুরু, কেমন কাটল ওদের স্কুলফেরতের দিন - কী দেখলেন শিক্ষক শিক্ষিকারা? তা জানতেই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা উত্তর কলকাতার প্রাথমিক বিদ্যালয় শ্রী বিদ্যা নিকেতন স্কুলের অন্দরে ঢুঁ মারল।
তিনটি বিল্ডিং রয়েছে এই স্কুলের, তবে এই বিভাগে শুধু জুনিয়র লেভেলের ক্লাস হয়। অন্যান্য দিনের তুলনায় বেশ আগেই শুরু হয় স্কুল। তবে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি ছিল অর্ধেক। প্রধান শিক্ষিকা শর্মিষ্ঠা দত্তর থেকে জেনে নেওয়া হয় সবকিছুই। তিনি বললেন, "ছাত্র ছাত্রীদের উপস্থিতি পঞ্চাশ শতাংশ। কারণ নিজেদেরকে প্রস্তুত করার সুযোগ ওরা খুব কম পেয়েছে। একদিনের বিরতিতে অনেকেই খবর জানতে অবধি পারেনি। যতটা সম্ভব চেষ্টা করা হচ্ছে ওদের তৈরি করে স্কুলে নিয়ে আসার। আগ্রহ রয়েছে ওদের মধ্যে। তবে এতদিন পরে বলে বাবা-মাকে ছেড়ে আসতে চাইছে না।"
ইতিমধ্যেই, কথোপকথনের মাধ্যমে জানা গেল তাদের প্রাক্তন ছাত্র ছাত্রীদের অনেকেই ক্লাসে বেড়ে যাওয়ার কারণে অন্য বিল্ডিংয়ে স্থানান্তরিত হয়েছে, তাদের উপস্থিতির হার স্বাভাবিকই রয়েছে। সেই প্রসঙ্গে তিনি বললেন, "অনেকের স্কুলের পোশাক ছোট হয়ে গিয়েছে - চেষ্টা করা হচ্ছে যেন সেটি আমরা ওদের হাতে তুলে দিতে পারি, ওদের আর্থিক কষ্ট না হয়। সরকার থেকে সাহায্যপ্রাপ্ত বই তুলে দেওয়া হয়েছে। নির্দেশ অনুযায়ী দেওয়া হবে মিড ডে মিল। তার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। ক্লাসের পরেই সেই খাবার দেওয়া হবে ছেলে-মেয়েদের।"
আরও পড়ুন ২ বছর পর বাজল স্কুলের ঘণ্টা, ক্লাসে ফিরতে পেরে খুশি খুদে পড়ুয়ারা
শিক্ষকরাও নিজেদের মতো করে সব সামলে নিচ্ছেন! অনেকেই খবর জানতে পারেননি, কিংবা এখনও স্কুলে আসার বিষয়ে ভীত।তাদেরকে দায়িত্ব নিয়ে ফোন করছে শিক্ষিকারা। আশ্বস্ত করছেন, নির্বিঘ্নে ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে পারেন তাঁরা। এতদিন পর পড়ুয়ারা স্কুলে এসেছে। ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে দেখা গেল মিশ্র প্রতিক্রিয়া। একদল বেশ সাবলীল, বন্ধুদের কাছে পেতেই আনন্দে মশগুল, দিব্যি পড়াশোনায় মন দিয়েছে। আবার দেখা গেল ভিন্ন ছবিও! কেঁদে কেটে একসা এক খুদে। শিক্ষিকাদের বক্তব্য, খুব স্বাভাবিক এরকম কিছু করা। তবে চেষ্টা করা হচ্ছে তার কান্না বন্ধ করানোর।
কীভাবে করোনা বিধি মানছেন তারা? প্রসঙ্গে প্রধান শিক্ষিকা বলেন, অবশ্যই মাস্ক ছাড়া প্রবেশ নিষেধ! এক বেঞ্চে দুই শিক্ষার্থী, এবং তার পরের বেঞ্চে একজন। ক্লাসে ক্লাসে রাখা হয়েছে স্যানিটাইজার এবং অতিরিক্ত মাস্ক। দিনের শুরুতে স্যানিটাইজ করা হবে, এবং শেষেও। আপাতত লক্ষ্য একটাই শিশুদের আতঙ্ক কমিয়ে বিদ্যালয়ে নিয়ে আসা।