বছর নয়েক আগেও এক পরীক্ষার ফল তাঁকে সংবাদ শিরনামে এনেছিল। এরপর আরও একবার। সেবার ২০১১ সালের উচ্চমাধ্যমিক মেধাতালিকা চিনিয়ে দিয়েছিল বাণিজ্য বিভাগে প্রথম স্থানাধিকারীকে। আর এবার ইউপিএসসি-র সফল প্রার্থীদের তালিকাও ত্রয়োদশ স্থানে দেখাচ্ছে ওই একই নাম। তিনি উত্তর কলকাতার কাশী বোস লেনের বাসিন্দা রৌণক আগরওয়াল। দু'বারের চেষ্টার পর, তৃতীয়বারে ভারতের সর্বোচ্চ সরকারি চাকরির লক্ষ্যভেদ করেছেন ২৬ বছরের রৌণক। ধমনীতে (বংশ পরম্পরায়) ব্যবসা থাকলেও ছেলেটির এই লক্ষ্য স্থির করে দিয়েছিলেন তাঁর ঠাকুর্দা। সেই থেকেই সাফল্যের জন্য ঘাম ঝরান লড়াই। কেমন ছিল সেই লড়াই? আজকের সাফল্যের পর জীবনের পরবর্তী লক্ষ্য কী? দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা-কে সে সব কথাই অকপটে জানালেন হবু আইএএস অফিসার রৌণক আগরওয়াল।
পারিবারিক ব্যবসা ছেড়ে হঠাৎ কেন আইএএস? শুধুই কি সরকারি চাকরি নাকি অন্য কোনও ভাবনা চিন্তা থেকে এই সিদ্ধান্ত?
আমি সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েট হই। এরপর সিএফএ পাশ করি। একটা প্রাইভেট সেক্টরে ভাল চাকরিও পাই। কিন্তু সেদিকে যাইনি। উচ্চমাধ্যমিকের পর আমার দাদু আমায় বলতেন, আইএএস হলে টাকার চেয়ে সম্মান বেশি পাওয়া যাবে। সেদিন থেকে ওটাই আমার লক্ষ্য হয়ে উঠেছিল। সিএফএ-তে আমি ১৫ র্যাঙ্ক করি। তাই সবটাই টাকার জন্য নয়। আমার পরিবার আমার পাশে ছিল সবসময়।
আপনি কি একমাত্র সন্তান?
হ্যাঁ।
তাহলে পারিবারিক ব্যবসার কী হবে?
এখনই ব্যবসার কথা ভাবছি না। আপাতত বাবা ও পরিবারের অন্যান্যরা আছেন। ভবিষ্যত্ কী হবে জানা নেই। তবে আমার লক্ষ্য ট্রেনিং-এর পর নিজেকে আইএএস অফিসার হিসেবেই দেখার। আমার তুতোভাইরা আগামী দিনে ব্যবসার হাল ধরতে পারেন।
ঠাকুরদা যে স্বপ্নের বীজটা আপনার মনে বপন করেছিলেন সেটিতে সার-জল দিয়ে কীভাবে বড় করলেন?
দ্বাদশ শ্রেণি পাশ করার পর ইউপিএসসি-র জন্য লক্ষ্য স্থির করি। তবে সিএফএ শেষ করার পরই মূল প্রিপারেশন শুরু হয়। আমি দিল্লিতে গিয়ে কোটিং নিই মাস ছয়েক। এরপর কলকাতায় ফিরে এসে নিজের মতো করে পড়া শুরু করি।
কতক্ষণ লেখাপড়া করতেন?
বেশিক্ষণ নয়। দিনে ঠিক করে নিতাম কতটা পড়ব, কী পড়ব, সেটা শেষ করতে যতটা সময় লাগত ততটুকুই। টানা আট ঘণ্টা, নয় ঘণ্টা লেখাপড়া আমি করিনি। আসলে সময় মেপে পড়লে তেমন কাজ হয় বলে আমার মনেও হয় না।
আর তাতেই লক্ষ্যভেদ?
(মুখে হাসি) হ্যাঁ, তা বলতে পারেন। তবে এই লেখাপড়ার জার্নিটা কিন্তু বেশ সিরিয়াস এবং অনেক দিন ধরে।
আগে দু'বার ইউপিএসসি-র পরীক্ষায় আপনি সাফল্য পাননি। এবার যে পাবেন, সেটা নিশ্চিত ছিলেন?
পরীক্ষা এবার খুব ভাল হয়েছিল। ইন্টারভিউটাও বেশ হয়েছিল। ভাল ফল হবে ভেবেছিলাম। কিন্তু, এতটা ভাল হবে সত্যিই আশা করিনি।
আচ্ছা, ইউপিএসসি-র ইন্টারভিউ কেমন হয়? আপনার অভিজ্ঞতাটা একটু বলবেন...
দেখুন, ইউপিএসসি-র ইন্টারভিউ কেমন হয়- এ প্রশ্নের এক কথায় উত্তর নেই। কারণ, ক্যান্ডিডেট টু ক্যান্ডিডেট এবং ইন্টারভিউয়ার প্যানেল টু প্যানেল এটা আলাদা আলাদা হয়। আমারটা কেমন হয়েছিল সেটা বলতে পারি....
হ্যাঁ, সেটাই জানতে চাইছি...
আমার যেহেতু কমার্স ব্যাকগ্রাউন্ড, তাই সাবজেক্ট থেকে অনেক প্রশ্ন করা হয়েছিল। আসলে এখানে পার্সোনালিটি টেস্ট হয়। ইন্টারভিউ হয় না ঠিক। তাই একদম সঠিক উত্তর দিতে হবে, এমনটা হয় না। কিন্তু আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে উত্তর দিতে হয়। ইনভেনশন ও ডিসকোভারির মধ্যে পার্থক্য কী, সেটা আমার থেকে জানতে চাওয়া হয়েছিল।
বাংলার ছেলে মেয়েদের ইদানীং ইউপিএসসি-র সফল প্রার্থীদের তালিকায় তেমনভাবে দেখাই যায় না, তোমার কী মনে হয়?
আসল কারণটা ঠিক বলতে পারব না। তবে, সাকসেস রেট কম এটা না বলে আমি বলব, তাঁরা ইউপিএসসি-তে ইন্টারেস্টই দেখাচ্ছে খুব কম। আমাদের এখানকার ছেলে-মেয়েদের ইঞ্জিনিয়ারিং-এর প্রতি ঝোঁক বেশি। ফলাফলের চেয়ে আমার যেটা মনে হয় বাকি রাজ্যের পড়ুয়াদের তুলনায় বাংলার ছেলে মেয়েরা সংখ্যায় কমজন ইউপিএসসি পরীক্ষা দেয়। আমি অনুশীলন করতে গিয়ে দেখেছি, বাংলার ছেলে মেয়ের সংখ্যা খুবই কম। এখানে সাধারণত, সবাই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে, তারপর চাকরিতে ঢুকে যায়। আর এখানে যেহুতু পরীক্ষার্থী নেই, তাই এখানে অনুশীলন করার জন্য ভালো কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেই।
এর কারণ কি, ইউপিএসসি কঠিন, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়লে সহজে সাফল্য?
ওভাবে বলব না। ইঞ্জিনিয়ারিং-ও যথেষ্ট কঠিন। আমার মনে হয়, জাস্ট ইন্টারেস্ট নেই...
উজ্জ্বল উদাহরণের অভাবই কি এই ছেলে-মেয়েদের আগ্রহহীনতার কারণ?
সম্ভবত সেটাই। আমার তাই মনে হয়।
এবার একটা পার্সোনালিটি টেস্ট মার্কা প্রশ্ন, পাঁচ বছর পর নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
(মুখে হাসি) এখনই তেমন কিছু ভাবিনি। আগে ট্রেনিং শেষ হোক। কাজ শুরু হোক। আমি যখন অনুশীলন শুরু করেছি, তখন ভাবতে পারতাম যে কোথায় নিজেকে দেখতে চাই। এখন এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটা মুশকিল।
আপনার ক্যাডার কি পশ্চিমবঙ্গ?
হ্যাঁ। আমি আমার রাজ্য পশ্চিমবঙ্গেই আইএএস হয়ে কাজ করতে চাই, মানুষকে সার্ভিস দিতে চাই।
যাঁরা ইউপিএসসি পরীক্ষায় সাফল্যের স্বপ্ন দেখেন তাদের উদ্দেশে কী বলবেন আপনি?
হার্ড ওয়ার্ক এবং স্মার্ট ওয়ার্ক। পরিবারের সাপোর্ট চাই। তাহলেই লক্ষ্যে পৌঁছন যাবে।