স্কুল প্রাঙ্গণের সঙ্গে সম্পর্ক নেই কম করে বছর দুয়েক! তার মাঝে যদিও এক দুইবার দরজা খুললেও মেয়াদ ছিল বেশ কম! স্বল্প দিনের মধ্যেই স্কুল আসায় ছেদ পড়েছিল শিক্ষার্থীদের। আগামীকাল থেকে খুলছে স্কুল, অষ্টম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি ছাড়াও পঞ্চম এবং সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়াদের কিন্তু স্কুল প্রাঙ্গণেই যেতে হবে কিছু সময়ের জন্য। লক্ষ্য একটাই ভিড় না বাড়িয়ে সুষ্ঠ ভাবে পঠনপাঠন। তবে ছাত্র ছাত্রীদের ভয়ের রেশ কি কেটেছে? তাদের কতটা উপস্থিতি আশা করছেন শিক্ষকরা? প্রসঙ্গেই কথা বলা হয়েছিল নানান বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকাদের সঙ্গে! তারা কী বলছেন জেনে নিন।
ভারতীয় বিদ্যা ভবনের শিক্ষিকা অবন্তিকা সেন বলছেন, "বাচ্চারা খবরটা শোনার পর থেকেই মারাত্বকভাবে আগ্রহী। ওরা সকলেই খুশি মনে আসতে চাইছে স্কুলে। একটু আধটু ভয় তো থাকবেই, তবে বাড়ি থেকে না বেরোলে সেই ভয় কিন্তু কাটবে না। চারিপাশের পরিস্থিতি বুঝতে গেলে বাড়ি বসে থাকলে ওদের চলবে না। আর সেফটি প্রোটোকল অবশ্যই থাকবে, বারবার স্যানিটাইজার ব্যবহার করা থেকে, মাস্ক পড়া, ল্যাব থাকলে সেটিকে স্যানিটাইজ করা- এগুলি মেনে চলতে হবে, শুধু স্কুলে নয় বাড়িতেও বাচ্চাদের এইসব নিয়ম গুলো শেখাতে হবে।"
শুধু ক্লাসরুম নয়, তৎপরতার ঠিক অন্য ছবি দেখা যাচ্ছে গড়িয়া হীরামতি দেবী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ে। শিক্ষিকা ইন্দ্রানী সেনগুপ্ত বলছেন, "গুগল মিটে ক্লাস চলছে যেহেতু এই খবর জানার পর থেকেই অসাধারণ প্রতিক্রিয়া ওদের। এর আগে যেহেতু একবার স্কুল খুলেছিল, তখনও ওরা সবরকম বিধি নিষেধ মেনেই স্কুলে এসেছিল, ভয়ের কোনও জায়গা নেই! বিশেষ করে যারা উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থী তারা কিন্তু বড়দির সঙ্গে কথা বলে এক্সট্রা ক্লাস পর্যন্ত চেয়েছিল। ওদের আর বাড়ি বসে থাকতে ভাল লাগছে না। কিছু নিয়ম অবশ্যই থাকছে, প্রথম একটা বিভাগকে দুইভাগে ভাগ করা যাতে একটা ক্লাসে ৩০ জনের বেশি ছাত্রী না থাকে। গঠন করা হয়েছে কোভিড টিম, প্রার্থনার লাইনে এবং করিডরে এই টিম সবসময় তৎপর। একজন শিক্ষিকা না এলে অন্যজন ক্লাস থেকে বেরোবেন না। এমনকি বাথরুমের সামনেও শিক্ষিকারা পর্যবেক্ষণ করছেন।"
শহরতলির স্কুলগুলোর চিত্র বেশ কিছুটা একই। ছাত্ররা বেজায় উচ্ছ্বসিত বলেই জানিয়েছেন হুগলি ব্রাঞ্চ স্কুলের শিক্ষক শ্রী শুভ্র চক্রবর্তী। তিনি বলছেন, "আগের বার কম করে ৮০% ছাত্র এসেছে। আমরা এবারও আশা করছি ঠিক তাই! ওরা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, কেমন কি ধার্য করা হয়েছে সেই নিয়ে খুব আগ্রহ ওদের। তবে স্কুলের বেঞ্চে দুজনের বেশি বসার অনুমতি নেই। চেষ্টা করা হচ্ছে যেন প্রত্যেকেই ডবল মাস্ক নিয়ে আসে। সরকারের গাইডলাইন মানা হবে। ক্লাসে ঢোকার সময় শারীরিক তাপমাত্রা দেখে নেওয়া, বারবার ওদের স্যানিটাইজার ব্যবহার করতে বলা এগুলোর দিকেও ধ্যান দেওয়া হবে।"
শিক্ষকমহল ছাড়াও কথা বলা হয় শিশু মনোবিদ দেবজিতা মজুমদারের সঙ্গে। তার কাছ থেকে এই প্রসঙ্গে মতামত চাইলে তিনি বলছেন, "যেটা হল ভাল হল। ওরা মানসিক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অনেক। বেশিরভাগই যথেষ্ট আগ্রহী! স্কুলে যাওয়ার যে স্বতস্ফূর্ততা সেটি ফিরে এসেছে ওদের মধ্যে। বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে, কথা বলবে এসব ভেবেই ওরা খুশি! এমনকি কেউ কেউ বলছে যেন ফের বন্ধ না হয়ে যায়, তাহলেই মুশকিল! আর পড়ায় মন বসানোর দিকে এবার একটু বেশিই খাটতে হবে, ফের নিয়মের গণ্ডিতে আবদ্ধ হবে ওরা, ভালভাবে কথা বলে ওদের পুরনো জায়গায় ফিরিয়ে নিয়ে যেতে হবে।"
এতদিন পর শুরু হচ্ছে স্কুল। ভাল লাগার অন্ত নেই! তবে আশঙ্কাও রয়েছে তাদের মধ্যে ফের যেন বন্ধ না হয় বিদ্যালয়ের দরজা, সুস্থ ভাবে ক্লাস করলেই শিশুরা খুশি থাকবেন বলেই ধারণা তাঁদের।