প্রথম জীবনে ছিলেন ত্রিপুরার যুবরাজ। কিন্তু আজও সারা বিশ্ব তাঁকে মনে রেখেছে সুরের জাদুকর হিসেবে। তিনি শচিন দেব বর্মণ, যিনি তৈরি করে দিয়ে গেছেন বলিউডের সঙ্গীতের ব্যাকরণ, আজও যাঁর অবদান ভুলতে পারে নি গোটা ইন্ডাস্ট্রি। এহেন 'শচিন কর্তার' কর্ম এবং ব্যক্তিগত জীবন নিয়েই প্রকাশিত হলো অনিরুদ্ধ ভট্টাচার্য এবং বালাজি ভিট্টলের বই, 'S.D. Burman: The Prince-Musician' (Westland/Tranquebar, Rs 799)। আজ শহরে বইটির আনুষ্ঠানিক প্রকাশ, রাজ্যের স্বরাষ্ট্র সচিব অত্রি ভট্টাচার্যের হাতে।
অনিরুদ্ধ-বালাজি জুটি এর আগেও বম্বের চলচ্চিত্র জগৎ নিয়ে দুটি বই লিখেছেন। মজার কথা হল, প্রথমটি লেখা হয়েছিল শচিন-পুত্র রাহুলকে নিয়ে। 'R. D. Burman: The Man The Music' প্রকাশিত হয় ২০১১ সালে, এবং সেবছরই সন্মানিত হয় জাতীয় পুরস্কার দ্বারা, পোশাকিভাবে বলতে গেলে National Film Award for Best Book on Cinema। তার পরেই তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন Westland/Tranquebar-এর বর্তমান ম্যানেজিং এডিটর সুধা সদানন্দ, রাহুল দেব বর্মণের বাবার ওপরেও বই লেখার প্রস্তাব নিয়ে। পরিবারকেন্দ্রিকই থাক বিষয়টা, এমনটাই ছিল প্রস্তাবের চরিত্র!
আজ মুক্তি পাচ্ছে সেই বই, যদিও ইতিমধ্যে অনিরুদ্ধ-বালাজি লিখে ফেলেছেন 'Gaata Rahe Mera Dil: 50 Classic Hindi Film Songs' (Harper Collins India), যেটি প্রকাশ পায় ২০১৫ সালে। অধুনা কলকাতাবাসী অনিরুদ্ধ, যিনি সুগায়কও বটে, বলছেন, বর্তমান বইটি যে শুধু শচিন কর্তার জীবনী তাই নয়, এর মধ্যে রয়েছে এক মহান শিল্পীর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি, এবং তাঁর সঙ্গীত দর্শনের গভীরে যাওয়ার প্রচেষ্টা। এবং ভাষা, সংস্কৃতির বাধা পেরিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করবার তাঁর লড়াইয়ের কাহিনি।
তাছাড়াও, এটি শচিন দেব বর্মণের সমসাময়িক হিন্দি ছবির জগতের আখ্যানও বটে, যার ফলে বইটির ঐতিহাসিক মূল্যও নেহাত কম নয়। "বইটা লিখতে লেগেছিল তিন বছর," বলছেন অনিরুদ্ধ। "রাহুলকে নিয়ে যখন লিখছিলাম, কাজটা অপেক্ষাকৃত সোজা ছিল, কারণ ওঁর সমকালীন অনেকেই আজও জীবিত। শচিন কর্তাকে নিয়ে লিখতে গিয়ে আরেকটু বেশি পরিশ্রম করতে হয়েছে রিসার্চের দিক থেকে, যদিও ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই প্রচুর সাহায্য করেছেন।"
বইটিতে বেশ কিছু দুর্লভ, না-দেখা ছবি রয়েছে, প্রধানত শচিন-পত্নী মীরা দেব বর্মণের ভাই অভিজিৎ দাসগুপ্তের ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে। "বইটা লিখতে গিয়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম যা আমাদের কাছেও নতুন, যদিও আমরা প্রায় সারা জীবনই ভারতীয় সিনেমার ইতিহাস নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করেছি," বলছেন অনিরুদ্ধ। "শচিন কর্তার জীবনের ব্যক্তিগত দিকটাও আরও গভীরভাবে জানলাম।" সেই জানার মধ্যে কি কিংবদন্তী সঙ্গীত পরিচালক এবং তাঁর পুত্রের মধ্যে আপাত তিক্ত সম্পর্কের কোন হদিস পেলেন? "বাজে কথা। এটা চলে আসছে লোকমুখে, কিন্তু আমরা যা জেনেছি, দুজনের সম্পর্ক অত্যন্ত ভালো ছিল।"
আরও এমন অনেক কিছুই জানার আছে। যেমন ধরুন, শচিন দেব বর্মণ নিজের নামের বানান লিখতেন Sachin Dev Varman, যা ১৯৫০ সালের পর থেকে বম্বে টকিজ এবং নবকেতনের দৌলতে হয়ে যায় Burman। বা লতা মঙ্গেশকরের সঙ্গে তাঁর বহুচর্চিত বিবাদের এবং পুনর্মিলনের ইতিহাস, যা তৎকালীন বলিউডে সাড়া ফেলে দিয়েছিল।
বিশদ বিবরণ দিয়ে পড়ার মজাটা মাটি করা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। পরিশেষে এটুকুই বলার, এই লেখক-দ্বয়ের পরবর্তী বইয়ের বিষয় - হিন্দি ছবিতে ভিলেনের বিবর্তন। অপেক্ষায় রইলাম।