ছাত্র ভোটের দাবিতে উত্তাল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়। উপাচার্যকে ঘিরে পড়ুয়াদের বিক্ষোভ চলাকালীন হাতাহাতি অবধি গড়ায় তা। ঘটনায় অসুস্থ হয়ে মঙ্গলবার সন্ধেবেলা দক্ষিণ কলকাতার এক হাসপাতালে ভর্তি হন উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। তাঁকে দেখতে বুধবার সকালে হাসপাতালে যান রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। ঘটনা প্রসঙ্গে প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে শিক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন উচ্ছৃঙ্খলতা বরদাস্ত করা হবে না। মঙ্গলবারের ঘটনার ভিডিও ফুটেজ চেয়েছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাসের শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল রয়েছে। ছাত্র ভোটের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে মঙ্গলবার যে অশান্তি হয়েছে, সেই প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, "অপরাধীদের চিহ্নিত করা হবে"। পড়ুয়াদের উদ্দেশে যাদবপুরের ঐতিহ্য নষ্ট না করার বার্তাও দিয়েছেন মন্ত্রী। সমগ্র বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ দেখান যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। একইসঙ্গে সিসিটিভি বসানোর দাবিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন তাঁরা। সামনেই লোকসভা ভোট। যে কারণে এখন ছাত্র সংসদ নির্বাচন করা যাবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়াদের দাবিতে আজ বৈঠকে বসেছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এগজিকিউটিভ কাউন্সিল। বৈঠকের আলোচ্য বিষয় ছিল ছাত্র সংসদের নির্বাচন। কিন্তু বৈঠক শেষে ছাত্র নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তার আভাস বুঝতে পেরে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে গোটা পরিস্থিতি। বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন ছাত্রছাত্রীরা।
রাজ্য সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করলেও, এ রাজ্যে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনৈতিক ছাত্র কাউন্সিল তৈরির আবেদন করা হয়। যার প্রক্রিয়া এখনও শেষ হয় নি। যে কারণে গত দু'বছর ধরে বন্ধ রয়েছে ছাত্র সংসদের নির্বাচন।
বৈঠক শেষে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস গাড়িতে উঠতে গেলে তাকে বাধা দেওয়া হয়। শুরু হয় ধস্তাধস্তি। সুরঞ্জনবাবুকে ঘিরে ধরেন পড়ুয়ারা। শেষ পর্যন্ত ফের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরে চলে যান উপাচার্য। বর্তমানে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের দাবিতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অরবিন্দ ভবনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভে বসেছেন পড়ুয়ারা।
উপচার্য অসুস্থ হয়ে পড়ায় তাঁকে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয়। মনে করা হচ্ছে, ধ্বস্তাধ্বস্তির কারণেই অসুস্থ হয়ে পড়েন উপাচার্য। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে উপাচার্য সুরঞ্জন দাস জানান, বৈঠক থেকে বেড়নোর সময় পড়ুয়ারা চড়াও হয় আমার এবং সহ কর্মীদের ওপর। তার অভিযোগ ছাত্র ছাত্রীরা খারাপ ভাষায় কথা বলেছেন তার সঙ্গে। ধস্তাধস্তির ফলে পায়ে আঘাত পেয়েছেন সহ উপাচার্য।
যাদবপুর বিশ্ববদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের ছাত্রী আফরিন বেগম জানান, "আমরা কাউন্সিল চাইছি না ইউনিয়নটাই চাইছি। এই নিয়েই আমাদের আন্দোলন। আজকে আমাদের একটা ডেপুটেশন জমা দেওয়ার কথা ছিল। তিন চারটে ইউনিয়ন মিলে যৌথ মিছিলে আমরা অরবিন্দ ভবনে আসি। কিন্তু ডেপুটেশন দিতে যাওয়ার আগে উপচার্য ঘর ছেড়ে বেড়িয়ে যান। সেখানে উপস্থিত ছিল তৃণমূল সমর্থক ছাত্রছাত্রীরা। তারাই উপচার্যকে নিয়ে যেতে সাহায্য করে। তখন আমরা আলোচনা করার জন্য উপচার্যর কাছে যেতে চাই। ঘটনাস্থলে আমাদের বাধা দেওয়া হয়। শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভের ওপর চড়াও হয় তৃণমূল সমর্থক পড়ুয়ারা। ঘটনা হাতাহাতির পর্যায় চলে যায়। সেখানেই আহত হয়ে পড়েন উপচার্য"।
স্টুডেন্ট ইউনিয়ন ইলেকশনেকর দাবি যারা তাদের গায়ে হাত তুলেছে তাদেরকে চিন্থিত করে যতক্ষণ না শাস্তি দেওয়া হবে এবং ছাত্র নির্বাচনের সদুত্তর পাচ্ছি ততক্ষণ অবস্থান বিক্ষোভ চলবে।