বছর দুয়েক পর স্কুল খুলেছে সর্বভারতীয় স্তরে। হাজার আন্দোলন এবং প্রতিবাদের সুর পেরিয়ে ছাত্ররা ফিরেছেন শিক্ষালয়ে। কিন্তু খুদে পড়ুয়াদের মধ্যে এখনও রয়েছে বেশ আতঙ্কের রেশ, খোলা মনে তারা স্কুলে যেতে পারছেন না একেবারেই। সবসময় কাজ করছে এক অজানা ভয়। করোনা পরবর্তীতে ভাইরাসের ভয় যেন একেবারেই পিছু ছাড়ার নাম করছে না। কিন্তু তার মধ্যেও বেশ কিছু ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে স্কুলে যাওয়ার আগ্রহ কিন্তু দেখবার মতো। তারা নির্ভয়েই যাচ্ছে স্কুলে, বিপত্তি ঘটেছে সেখানেই। অর্থাৎ যারা এখনও পর্যন্ত স্কুলে যাচ্ছেন না, তারা কিন্তু মানসিক ভাবেও পিছিয়ে পড়ছেন, একাংশের বক্তব্য - শিক্ষক-শিক্ষিকাদের সামনে তারা পৌঁছাতে পারছেন না বলেই উপেক্ষিত হচ্ছেন। কিন্তু আসলেই এটি কতটা যুক্তিযুক্ত?
ছাত্র-ছাত্রীদের মতামত, যারা বাড়ি বসেই এখনও ক্লাস করছে তাদের প্রতি শিক্ষকদের নজর খুব কম! বলা উচিত, একরকমের অবহেলিত বোধ করছেন। একাদশ শ্রেণির এক ছাত্র বলছেন, যেহেতু দুটি মাধ্যমেই শিক্ষকরা পড়ানোর চেষ্টা করছেন, তাই কোনও ভাবে যারা অফলাইনে উপস্থিত আছে তাদের ওপর ফোকাস বেশি থাকছে। এবং তার দাবি, যে নজর থেকে দূরে আছে বলেই এই বিষয়টি খুব বেশি চোখে পড়ছে। কেরলের এক ছাত্রীর বক্তব্য, সে নিজে থেকেই অনলাইন মাধ্যমের অডিও বাটন অফ করে রেখেছে, যাতে গোটা ক্লাসের অসুবিধে না হয়। এতে কথাবার্তায় এক বিশাল গ্যাপ পড়ছে।
শুধু এই নয়, বরং অনেক সময় প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়েও দেখা দিচ্ছে সমস্যা। শিক্ষক কোনও প্রশ্ন জিজ্ঞেস করলেও শুধু তাড়াহুড়োতে অডিও বাটন অন করতে গিয়েও সুযোগ হারাচ্ছেন অনেকে। অনেক সময় বিষয় সম্পর্কিত কোনও জিজ্ঞাস্য থাকলেও তারা সেটা পারছেন না। ফলে সমস্যা দেখা দিচ্ছে পড়াশোনায়। তবে এই প্রসঙ্গে শিক্ষকদের মতামত ঠিক কী?
তারা বলছেন, যথাসাধ্য চেষ্টা করা হচ্ছে যাতে কোনও পড়ুয়া এমন কিছুর সম্মুখীন না হয়। সমান সময় ব্যয় করা হয় অনলাইনের পঠনরত পড়ুয়াদের ক্ষেত্রে। একইরকম অনুসন্ধানী ব্যবস্থায় তাদের শিক্ষা প্রদানের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। নানান ধরনের আকর্ষণীয় শিক্ষা ব্যবস্থায় কখনও গ্রুপে আবার কখনও জোড়ায় তারা যাতে বিরক্ত বোধ না করে সেইদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে। রায়পুরের আরেক শিক্ষিকার বক্তব্য, "খুব খারাপ লাগছে যাঁদেরকে আমরা সামনে পাচ্ছি না, ওদের জন্য মন খারাপ লাগছে। যারা এই ভয়কে অতিক্রম করতে পেরেছে তারা বেশ মিলে গেছেন, তবে যারা এখনও স্কুলে আসেনি, তারা নিয়মানুবর্তিতা থেকে বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো, সবকিছুই মিস করছে…এটা আমাদের খারাপ লাগছে।"
পিছিয়ে নেই শিক্ষিকারাও! প্রিয়া মোহনের বক্তব্য, তারা প্রতিদিন নিজের শিক্ষা ব্যবস্থাকে আপডেট করছেন। নিত্যনতুন পন্থা অবলম্বন করছেন। ছেলে-মেয়েদের আকর্ষণ করার মাধ্যমেই অতীতের ভয়কে কাটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। যাই হচ্ছে ক্লাস চলাকালীন, যেহেতু অনেক সময় ধরে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়, সেই কারণেই পড়ুয়াদের বাড়িতে এক্সট্রা কোনও কাজ করতে দেওয়া হবে না। অবশ্যই গ্রুপ ডিসকাশন খুব ভাল পন্থা। তাদের জন্য নানা ভিডিও পাঠানো হচ্ছে, ওদের স্বার্থে অনেক কিছুই করা হচ্ছে… তবে ওরা বঞ্চিত হচ্ছে সেটি সম্পূর্ণ ভুল।