গতকাল কৃষ্ণনগর গভঃ কলেজিয়েট স্কুলে ঘটে গেছে এক চরম হতাশাজনক ঘটনা। বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে দুই শিক্ষকের আচরণ দেখে হতবাক সকলেই! প্রধান শিক্ষক এবং ভূগোল শিক্ষকের এই মারামারির ঘটনা ঝড়ের গতিতে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। কিন্তু এই ঘটনাটিকে শিক্ষকমহলের অন্যান্য সদস্যরা কীভাবে দেখছেন? আদৌ এই ঘটনাটি সমাজের অন্যান্যদের কাছে শিক্ষকদের মর্যাদা নিয়ে অন্য প্রশ্ন তুলবে?
প্রসঙ্গেই কথা বলা হয়েছিল, এবিটিএ রাজ্য সভাপতি কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্যের সঙ্গে! তিনি বলছেন, “সমাজের এমন একটি ঘটনা কোনওভাবেই শিক্ষকদের মান মর্যাদা নিচু করতে পারে না। ঘটনাটি নিঃসন্দেহে লজ্জাজনক, এটিকে একেবারেই সমর্থন করা যায় না কিন্তু যে শিক্ষক শিক্ষিকারা প্রতিনিয়ত ছেলেমেয়েদের কথা ভেবেছেন, আন্দোলন করেছে কিংবা করোনাকালে তাদের মুখে খাবার তুলে দিয়েছেন এই নিমিত্ত মাত্র একটি ঘটনা শিক্ষক সমাজে কালিমা লেপন করতে পারে না। সরকারের বিদ্যালয় সেটি, তাদের পদক্ষেপ করা উচিত।”
তবে অন্য সুর শিক্ষক সমিতির সদস্য মণীশ পান্ডার বয়ানে। তিনি বলছেন, "শিক্ষক সমাজের অপমান! তাঁরা নিজেরাই যদি এমন কিছু করেন তবে শিশুদের কিংবা শিক্ষার্থীদের কীভাবে শেখাবেন? তাদের মানুষ করতে গেলে আগে নিজের আদর্শ ঠিক রাখা প্রয়োজন। যতই হোক না কেন, একজন শিক্ষক এমন আচরণ করবেন, এটি মানা যায় না। গতকাল থেকে সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে কত মানুষের কদর্য ভাষা। পরিস্থিতি যাই হোক! স্কুল প্রাঙ্গণে শিক্ষকদের মধ্যে মারামারি সত্যিই লজ্জাজনক।"
গতকালের এই ঘটনা মিশ্র অনুভূতি সৃষ্টি করেছে সকলের মনে। ছাত্র-ছাত্রী হোক কিংবা অভিভাবক অথবা শিক্ষকমহল - ভিন্ন মত কিন্তু নিন্দার ঝড় সর্বত্রই। মগরা উত্তম চন্দ্র ( উ: মা: ) স্কুলের শিক্ষক রাজীব বন্দোপাধ্যায় বলছেন, “শিক্ষকরা সমাজের আদর্শ। কিন্তু এমন কোনও পেশা নেই যেখানে সবরকমের মানুষ দেখা যায় না, কাল যে ঘটনাটি ঘটেছে একেবারেই সমর্থন যোগ্য নয়! লজ্জাজনক! কিন্তু এটিকে বাহবা না দিয়ে পজিটিভ দিক তুলে ধরতে হবে। একজনের ভুলের কারণে শিক্ষক সম্প্রদায়কে দোষী সাব্যস্ত করার কোনও মানে হয় না। তথাকথিত ভাষায়, এনারা মানসিক ভাবে অসুস্থ! নয়তো বা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মত জায়গায় এই আচরণ করতে পারেন না।”
আরও পড়ুন ফের স্কুলমুখো পড়ুয়ারা, করোনা বিধি মেনে আজ থেকেই চালু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
এদিকে লেডি অবলা বসু বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা সুনীতা রায়ের বক্তব্য সাফ! তিনি বলছেন ওরকম একটি বিখ্যাত বিদ্যালয় যেখানে মদনমোহন তর্কালঙ্কারের মত গুণী ব্যক্তি শিক্ষকতা করতেন এটি সত্যি অপমানজনক! বাচ্চাদের কাছে শিক্ষকরা আর কী আদর্শ তুলে ধরবেন এমন আচরণ করলে? একদম ছোটদের কাছে তো খুবই সমস্যার বিষয়, ওরা তো যেটাই দেখে সেটাই বিশ্বাস করে - সেইভাবে বোধবুদ্ধি হয় না। চরম লজ্জাজনক - ছাত্রসমাজের বিকৃত প্রভাব পড়তেই পারে।
যেটুকু বোঝা যাচ্ছে, ঘটনাটি যে একেবারেই লজ্জাজনক সেটিই মনে করছেন সকলে। তবে শিক্ষক সমাজের চিত্র নিয়ে মতভেদ রয়েছে তাদের মধ্যে!