দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় তাপপ্রবাহ। আরও দু-তিনদিন এই পরিস্থিতিই থাকবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে আবহাওয়া দফতর। এপ্রিল মাসে আর বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই বলেই আভাস দিয়েছে হাওয়া অফিস। সোমবার অতিরিক্ত দাবদাহে রাজ্যে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে রাজ্যের স্কুলগুলিকে সতর্ক করল শিক্ষা দফতর।
বলা যায়, স্কুলগুলিকে পরামর্শ দিয়েছে শিক্ষা দফতর। বলা হয়েছে, দুপুরের বদলে ক্লাস সকালে করানো হোক। কিন্তু বেশিরভাগ স্কুলের ক্ষেত্রে তা কতটা সম্ভবর হবে সেটাই ব্যাপার। কারণ, শিশুদের বিভাগে সাধারণ সকালে ক্লাস হয়। সপ্তম থেকে দ্বাদশ সাধারণত বেলাতেই ক্লাস হয়। সেক্ষেত্র শিক্ষা দফতরের নির্দেশ, প্রয়োজনে স্থানীয় চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে।
শিশুদের ক্ষেত্রে বিশিষ্ট শিশুরোদ বিশেষজ্ঞ ইন্দ্রনীল চৌধুরি বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন গরম থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য। সেগুলি হল-
১. শিশুকে সবসময় সঙ্গে জলের বোতল দিন-গরমে সকলেরই সারাদিন প্রচুর জল খাওয়া উচিৎ। বাচ্চারা খেলাধুলো করার কারণে ঘাম বেশি হয় ফলে ওদের জলের প্রয়োজনও হয় বেশি।
২. জল খাওয়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে আপনার সন্তান যেন পরিশ্রুত পানীয় জল পান করে কারণ গরমে পেটের রোগের সম্ভাবনা বেশি।
৩. বাচ্চাদের টাটকা ফলের রস, ডাবের জল, বাটার মিল্ক বা লেবুর রস রিফ্রেশমেন্ট হিসেবে খেতে দিন। এতে শরীরে জলের সাম্য বজায় থেকে শিশুদের ক্লান্তি দূর হবে।
৪. গরমে বাচ্চাকে সবসময় হালকা রঙের জামাকাপড় পরানোর চেষ্টা করুন। হালকা রং গরম তাড়াতাড়ি শুষে নিয়ে শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে।
৫. গরমে অতিরিক্ত সময় বাচ্চাকে এসিতে রাখবেন না। এতে ঠান্ডা লাগার সম্ভাবনা বেশি থাকে। সেই সঙ্গে ঠান্ডা পানীয় খাবার সময়ে সতর্কতা মেনে চলা উচিৎ।
৬. বাচ্চাদের ত্বকে অনেক সময় গরমে র্যাশের সমস্যা দেখা দেয়। তাই গরমে রোদে বেরোনোর আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে ভুলবেন না।
৭. দুপুর ১২ টা থেকে ৪ টে পর্যন্ত রোদে যতদূর সম্ভব এড়িয়ে চলুন, আপনিও এবং আপনার সন্তানকেও ওই সময়ে রোদের মধ্যে বের করবেন না।
৮. গরমে বাচাদের ফাস্ট ফুড থেকে দূরে রাখুন। গরম কালে পোকামাকড়ের কামড়, লালা থেকে অনেক সময় ইনফেকশন হয়। তাই বাচ্চাকে বাইরে পাঠানোর সময়, বিশেষ করে সন্ধেবেলা ইনসেক্ট রিপেল্যান্ট লাগিয়ে পাঠান। রাত্রে মশারি ব্যবহার করুন না করলে অবশ্যই মসকুইটো রিপেল্যান্ট বাচ্চাকে লাগিয়ে দিন।
আরও পড়ুন হাঁসফাঁস গরমে নাজেহাল অবস্থা, নিজে এবং নিজের সন্তানকে সুস্থ রাখতে মেনে চলুন কতগুলি টিপস
প্রসঙ্গত, আলিপুর আবহাওয়া দফতর জানিয়েছে, পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগনা বাদে সব জেলায় তাপপ্রবাহের মতো পরিস্থিতি। উত্তরবঙ্গের মালদা-দক্ষিণ দিনাজপুরেও একই অবস্থা। শুধুমাত্র দার্জিলিং-সহ উত্তরবঙ্গের পাঁচ জেলায় মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। কিন্তু দক্ষিণে বৃষ্টির দেখা নেই। চাতকের মতো অবস্থা সাধারণ মানুষের।
এই পরিস্থিতি নিয়ে আবহাওয়া দফতরের পূর্বাঞ্চলীয় অধিকর্তা সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, শুক্রবার থেকে আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটতে পারে। শনিবার ও রবিবার বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সম্ভাবনা আছে মুর্শিদাবাদ, নদিয়া-সহ দক্ষিণের কয়েকটি জেলায় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। দক্ষিণবঙ্গে-সহ রাজ্যে বৃষ্টির সম্ভাবনা মে মাসের গোড়ায় রয়েছে।
আরও পড়ুন বাড়ছে সংক্রমণ, পড়ুয়া-স্বার্থে সতর্কতামূলক একাধিক পদক্ষেপ স্কুলগুলির
প্রসঙ্গত, এবছর দক্ষিণবঙ্গে কালবৈশাখীর দেখাই মেলেনি। এপ্রিল মাস শেষ হতে চলেছে। কিন্তু বৃষ্টির কোনও দেখাই নেই। ছিঁটেফোটাও কোথায় বৃষ্টি নেই। আবহাওয়াবিদদের মতে, বিশ্ব উষ্ণায়নের জেরেই এমন আবহাওয়ার পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। তবে দিল্লির মৌসম ভবন এবছর স্বাভাবিক বৃষ্টিরই আভাস দিয়েছে। কিন্তু যেভাবে তাপমাত্রার পারদ চড়ছে তাতে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি থেকে এখনই নিস্তার নেই।