পরীক্ষার হলে জটিল ও কঠিন প্রশ্নের সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে অনায়াসে উত্তর লিখেছে ওরা। তার স্বীকৃতি স্বরূপ পরীক্ষার ফলও মিলেছে, কেউ হয়েছেন প্রথম কেউ হয়েছেন অষ্টম কেউ হয়েছেন দশম কিন্তু, বাংলার এই নবীন কৃতীদের সামনে এখন বড় বাধা হয়েছে দাঁড়িয়েছে ইন্টারনেট। এবারের মাধ্যমিকের ফলাফলব অন্যান্য অনেক বারের মতই বলছে মেধার দিক থেকে এগিয়ে জেলা। জেলার ছেলে মেয়েরাই অধিকাংশ স্থান দখল করেছে মধ্যশিক্ষা পর্ষদ প্রকাশিত মেধাতালিকায়। কিন্তু পরীক্ষা মিটতেই কিঞ্চিত অবকাশ কাটিয়ে তারা যখন আগামী পরীক্ষার জন্য নিজেদের প্রস্তুত করবে বলে ভাবছে, ঠিক তখনই করোনা-লকডাউনের কারণে বাড়ি থেকে কাজের ক্ষেত্রে বেড়েছে বিপুল ইন্টারনেট ব্যবহার। সেকারণেই জেলার এই সব কৃতী পড়ুয়ারা লেখাপড়া করতে গিয়ে দুর্বল ইন্টারনেট নিয়ে সমস্যায় পড়ছে।
মাধ্যমিকে এবছর জেলার জয়জয়কার। বিগত বেশ কিছু বছর ধরে জেলার ছাত্রছাত্রীরাই জায়গা করে নিচ্ছে মেধাতালিকায়। এক থেকে দশের মধ্যে রয়েছে ৮৪ জনের নাম। কলকাতা থেকে কেউ জায়গা করা করতে পারেনি মেধাতালিকায়, তবে পাশের হারে তৃতীয় স্থানে কলকাতা। সবচেয়ে বেশি পাশের হার পূর্ব মেদিনীপুর জেলায়। এ বছর ৭০০-র মধ্যে ৬৯৪ নম্বর পেয়ে মাধ্যমিকে প্রথম হয়েছে পূর্ব বর্ধমানের মেমারির অরিত্র পাল। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে দু’জন— বাঁকুড়ার সায়ন্তন গড়াই ও পূর্ব বর্ধমানের অভিক দাস। তাদের প্রাপ্ত নম্বর ৬৯৩। ৬৯০ নম্বর পেয়ে তৃতীয় স্থান অধিকার করেছে তিন জন। তারা হল বাঁকুড়ার সৌম্য পাঠক, পূর্ব মেদিনীপুরের দেবষ্মিতা মহাপাত্র, উত্তর ২৪ পরগনার অরিত্র মাইতি। অরিত্র পাল সহ কম বেশি সবারই করোনা পরিস্থিতিতে ডাক্তার হওয়ার ইচ্ছা, পাশাপাশি গবেষণার দিকেও যেতে চায় বলে জানিয়েছে সায়ন্তন, দেবস্মিতা সহ আরও অনেকে। কিন্তু জেলার প্রত্যন্ত প্রান্তে বাড়ি হওয়ার কারণে ইন্টারনেট ব্যবহার করে লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে নাজেহাল মেধাতালিকায় স্থানাধিকারি কৃতী পড়ুয়াদের একাংশ।
একাদশ শ্রেণির পড়াশুনা শুরু হয়েছে ঠিকই কিন্তু তা যথাযথ মনে হচ্ছে না তাদের। দ্বিতীয় স্থানাধিকারি সায়ন্তন গড়াই ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, "আমরা বাঁকুড়ার যে এলাকায় থাকি সেখানে নেটের অসুবিধা রয়েছে। ক্লাস চলতে চলতে থমকে যায়। নেট আসে না। অনেক সময় কঠিন বিষয় বোঝায় মাঝেই চলে যায় নেট বা ডেটা শেষ হয়ে যায়"। মেয়েদের মধ্যে প্রথম পূর্ব মেদিনীপুরের ভবানীচক হাইস্কুলের ছাত্রী দেবস্মিতা মহাপাত্র বলেন, "ইন্টারনেটে পড়াশুনার সম্পূর্ণ অন্যরকম। ক্লাসে বা মাস্টারের সামনে বসে যে লেখাপড়া হয়, খাতায় এঁকে বুঝিয়ে দেয়, সেসব নেই। এর মাঝে ইন্টারনেট সমস্যাতো বড় বাধা। করোনা পরিস্থিতিতে আগামীদিনে কীভাবে পড়ব তা বুঝে উঠতে পারছি না। দেখা যাক কী হয়"।
প্রথম স্থানাধিকারি অরিত্র পাল বলেন, "সিলেবাসে যা পড়া শুরু করেছি তা আগামীদিনে আদৌ থাকবে কিনা জানি না। একাদশ শ্রেণির পড়শুনার শুরুটা ভালো হল না। অনলাইনে পড়াশুনা করতে ভালো লাগছে না। মন বসছে না। স্কুল যেতে চাই, টিউশন যেতে চাই, মাঠে খেলতে চাই"।
উল্লেখ্য, মাধ্যমিকে পাসের হারে নতুন রেকর্ড। ছাত্রদের মধ্যে পাশের হার ৮৯.৮৭%। ছাত্রীদের মধ্যে পাশের হার ৮৩.৪৭ শতাংশ। এ বছর মোট পরীক্ষার্থী ১০ লক্ষ ৩ হাজার ৬৬৬ জন। তার মধ্যে পাস করেছে আট লক্ষ ৪৩ হাজার ৩০৫ জন। পাসের হার সবচেয়ে বেশি পূর্ব মেদিনীপুরে, ৯৬.৫৯ শতাংশ। পাসের হারে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে যথাক্রমে পশ্চিম মেদিনীপুর (৯২.১৬ শতাংশ) ও কলকাতা (৯১.০৭ শতাংশ)।