জাতীয় শিক্ষানীতি ২০২০ নিয়ে দেশের নানা প্রান্তের পড়ুয়াদের বিরাট উন্নতি হয়েছে, দেশের শিক্ষাবিদ থেকে অর্থনীতিবিদ, এমনকি বিজ্ঞানীদের সহযোগিতায় দেশের গ্রাম থেকে শহরের নানা পড়ুয়ারা শিক্ষার আলোয় দিশা খুঁজে পেয়েছেন - ঠিক এমনটাই পরীক্ষা পে চর্চায় জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন নিয়ে প্রথম থেকেই আপত্তি বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। এবার রাজনৈতিক চাপানউতোরের মধ্যেই রাজ্য শিক্ষানীতির সম্পর্কে ঘোষণা করেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু।
এ প্রসঙ্গে তিনি জানান,কেন্দ্রীয় সরকারের এই নীতি বিদেশি দুই বিশ্ববিদ্যালয়ের হুবহু নকল। এই রাজ্যে সেই শিক্ষানীতি একেবারেই মানা হবে না। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হবে এটি কার্যকরী হবে, চেষ্টা করা হবে দ্রুত শুরু করার। সূত্রের খবর, নীতি মেনে তৈরি করা হয়েছে দশ সদস্যের একটি কমিটি। তারা বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করেই কাজ করবে। মহারাষ্ট্র এবং কেরলের শিক্ষানীতির ওপর জোর দেওয়া হবে। জাতীয় শিক্ষানীতি নিয়ে ইউজিসি কর্তৃক যা গাইডলাইন দেওয়া হয়েছে সেই বিষয়েও খতিয়ে দেখা হবে। কিন্তু জাতীয় শিক্ষানীতির পাশাপাশি বাংলার শিক্ষানীতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে রাজ্যের শিক্ষামহলে। এ প্রসঙ্গে কী বলছে শিক্ষক সংগঠন?
এবিটিএ-র সভাপতি কৃষ্ণপ্রসন্ন ভট্টাচার্য বলেন, "প্রতিটি রাজ্যের একটি নির্দিষ্ট শিক্ষানীতি থাকে এবং পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে এটি সাধারণের শিক্ষানীতি। যাতে শিক্ষক নিয়োগ, পড়াশোনায় সুবিধা, অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে। যেগুলির একটিও সঠিক ভাবে হয় না এখন। সুদূর গ্রামে ছেলেমেয়েরা পড়াশোনা করতে গিয়ে হাজারো সমস্যার সম্মুখীন হন, তাদের শিক্ষক নেই - পরিকাঠামো নেই। বেশ কিছু জায়গায় বেসরকারি স্কুল তৈরি হয়ে গিয়েছে, তারা সেখানেও পৌঁছাতে পারছে না। দেশজুড়ে যে বেসরকারিকরণ শুরু হয়েছে তাতে কতটা ভাল হবে তাতেই সন্দেহ। তবে স্কুলের ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা রাখা দরকার। সিলেবাস বিজ্ঞানসম্মত করতে হবে, যখন যা খুশি লিখে দিলে চলবে না। এবং স্কুলের কর্তৃপক্ষ হিসেবে কাউন্সিলরদের রাখার একেবারেই প্রয়োজন নেই। ছেলেমেয়েদের দিকে তাকিয়ে ব্যবস্থা করলেই ভাল।"
আরও পড়ুন বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস এবার ভারতেও, বিরাট ঘোষণা UGC চেয়ারম্যানের
অন্যদিকে এবিভিপির রাজ্য সম্পাদক সুরঞ্জন সরকার বলেন, "রাজ্য অনুযায়ী নীতি বদলে গেলেই হল না। খেয়াল রাখতে হবে কতটা ছাত্রছাত্রীদের ভাল হচ্ছে। জাতীয় শিক্ষানীতিতে প্রচুর ছেলেমেয়েদের দেশ জুড়ে সুবিধা হয়েছে। নানা রাজ্যের ভাষাকে এই ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, আঞ্চলিক ভাষা কিংবা সংস্কৃতিকে যোগ করেছে এই শিক্ষানীতি, সুন্দর ভাবনা চিন্তা করে এটিকে কার্যকরী করে তোলা হয়েছে, কাজেই আমরা অবশ্যই জাতীয় শিক্ষা নীতিকেই সমর্থন করব।"
এদিকে এস এফ আই এর রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য বলেন, শিক্ষানীতি এমন হতে হবে যাতে, সকলের সুবিধা হয়। যদি সঠিক ভাবে সেটিকে কার্যকর করা হয়, তাহলে নিশ্চয়ই স্বাগত জানানো উচিত। শুধুমাত্র কেন্দ্রীয় সরকারের বিরোধিতা করবেন বলেই এটি করতে হবে, এমনটা উচিত নয়। ছেলেমেয়েদের ভাল হবে সেটা অবশ্যই ভাবা উচিত। সিলেবাসে বদল আনলেও সাবধানে, তবে পড়ুয়াদের যেন অসুবিধা না হয়।
রাজ্য শিক্ষানীতির কমিটিতে রয়েছেন শিক্ষা ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত বেশ কিছু পরিচিত নাম। তার মধ্যে গায়ত্রী চক্রবর্তী স্পিভাক, হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক তথা প্রাক্তন সাংসদ সুগত বসু, NIIT দুর্গাপুরের অধ্যাপক অনুপম বসু, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস, অধ্যাপক নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ি, সিলেবাস কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার, SNU-এর উপাচার্য ধ্রুবজ্যোতি চট্টোপাধ্যায় এবং উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ ও মধ্যশিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান চিরঞ্জীব ভট্টাচার্য এবং কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়। আগামী দুই মাসের মধ্যেই রিপোর্ট পেশ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কমিটির সদস্যদের।