দারিদ্রতার বেড়াজালে আষ্ঠেপিষ্ঠে বাঁধা মেয়েটির পরিবার। ২০১৯ এর উচ্চমাধ্যমিকে তৃতীয় স্থানাধিকারী বর্ণালি ঘোষ। যার প্রাপ্ত নম্বর ৫০০ এর মধ্যে ৪৯৪। অভাব যেন বাধা হয়ে না দাঁড়ায় মেয়ের লেখাপড়ায়, এমনটাই চেয়েছিলেন বাবা খগেন ঘোষ, মেয়ের মুখের দিকে তাকিয়ে রক্তজল করা পরিশ্রম করে গিয়ছেন পেশায় আলু-পিঁয়াজ বিক্রেতা খগেনবাবু। প্রতিনিয়ত মেয়েকে ভরসা জুগিয়ে গিয়েছেন তিনি। হাল না ছাড়ার মন্ত্র দিয়েছেন। সোমবার অর্থাৎ ২৭ মে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদ তরফে জানানো হয়েছে, মেয়েদের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেছে হুগলীর বর্ণালি।
আরও পড়ুন: সবজি বিক্রেতার মেয়ে বর্ণালির স্বপ্ন পূরণের ভার নিল ব্যাঙ্ক
বর্ণালির বাবার সঙ্গে কথা বলেছিল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস। গর্বিত খগেনবাবু বললেন, "আর্থিক অনটনে দিন কাটে। সেখানে দাঁড়িয়ে মেয়েকে নিয়ে কতটা গর্ব হচ্ছে তা আর বলে বোঝাতে পারব না, এদিন আমার গর্বের দিন নয়, গোটা পাড়া গর্ব করছে ওর জন্য। পাশাপাশি সুনামও হচ্ছে স্কুলের। বর্ণালির সাফল্যে আমরা সকলে খুব খুশি, শিক্ষাগত যোগ্যতা তেমন না থাকায়, মেয়ের পড়াশুনার ক্ষেত্রে কোনোরকম দেখভাল করতে পারিনি আমরা। তবে ওর শিক্ষিকাদের অশেষ ধন্যবাদ, তাঁরা আমার মেয়েকে সবদিক দিয়ে সাহায্য করেছে। সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টায় আজ এই জায়গায় বর্ণালি। কতটা খুশি বলে বোঝাতে পারব না"।
আরও পড়ুন: রাজ্যে অনলাইনেই কলেজে ভর্তি হতে হবে, কিন্তু সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া কী? জেনে নিন
কোন্নগরের নবগ্রাম এলাকার রেলবাজারে আলু-পিঁয়াজের দোকান খগেনবাবুর। বর্ণালি ক্লাস ফাইভ থেকে নবগ্রাম হীরালাল পাল বালিকা বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছে। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রীনা দাস সরকার জানিয়েছেন, "বর্ণালি ছোটবেলা থেকেই মেধাবি ছাত্রী ছিল। খুব দরিদ্র পরিবারের মেয়ে ও। বাবা বাজারে সবজি বিক্রি করে, আর মা অঙ্গনবাড়ির কর্মী। সব বিষয়ে পারদর্শী বর্ণালি। লেখাপড়ায় বরাবরই প্রথম সারিতে থাকত ও। এতটাই ভালোবাসত বিষয়টা। কখনও স্কুল কামাই করতে দেখিনি ওকে। যে কোনও বিষয়ে সমস্য়া হলেই স্কুলের পরেও স্কুলের দিদিমণিদের থেকে সাহায্য় নিত। স্কুল থেকে সবরকম ভাবে সাহায্য় করার সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি আমরা।